চিনে নভেল করোনাভাইরাস (nCoV-2019) মহামারীতে মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ছাড়িয়ে গেছে ২০০২-০৩ সালের সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোমে (SARS) মৃতের সংখ্যা। অনেকেরই মনে থাকবে SARS এবং তা থেকে উৎপন্ন বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের কথা। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে করোনাভাইরাস ইতিমধ্যেই টেক্কা দিয়েছে SARS কে, কারণ শুধুমাত্র চিনেই করোনাভাইরাসের হানায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৪২৫ জন, আক্রান্ত ১৭ হাজারেরও বেশি।
পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা WHO) শেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, চিনের বাইরে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে একজনের। খবরে প্রকাশ, এই ব্যক্তি হংকংয়ের বাসিন্দা, পুরুষ, বয়স ৩৯ বছর। তাঁর মৃত্যু হয় আজ, মঙ্গলবার।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণার অর্থ কী?
তবে এছাড়াও এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১১ জন), জাপান (২০ জন), দক্ষিণ কোরিয়া (১৫ জন), সিঙ্গাপুর (১৮ জন), থাইল্যান্ড (১৯ জন), এবং জার্মানি (১০ জন) থেকে। গত বৃহস্পতিবার এই মহামারীর মোকাবিলায় স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক জরুরি অবস্থা জারি করে WHO।
SARS মহামারী ২০০২-০৩
SARS এর নেপথ্যেও ছিল এক ধরনের করোনাভাইরাস (SARS-CoV), যেটি পশুবাহিত, সম্ভবত বাদুড় থেকে ভামবিড়াল (civet cats) হয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। সেই ভাইরাসের কবলে ২০০২ সালে প্রথম পড়েন দক্ষিণ চিনের গুয়াংডং প্রদেশের বাসিন্দারা। আজও ওই অঞ্চলে রয়েছে SARS CoV-র সম্ভাব্য পুনরুজ্জীবনের আশঙ্কা। ২০০৩ সালে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়ে যায়, এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর ২৬টি দেশে।
সাধারণত মানুষ থেকে মানুষের শরীরে ছড়ায় SARS, এবং উপসর্গের তালিকায় রয়েছে জ্বর, অসুস্থতাবোধ, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, পেট খারাপ, এবং কাঁপুনি। WHO-এর তথ্য অনুযায়ী, SARS-এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় জ্বর, এবং সংক্রমণের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে দেখা দেয় কাশি, শ্বাসকষ্ট, এবং পেট খারাপ।
SARS মহামারীর সময় যেসব দেশে সংক্রমণ ছড়ায়, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হংকং, ক্যানাডা, চাইনিজ তাইপেই, সিঙ্গাপুর, এবং ভিয়েতনাম।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাসে মৃত বেড়ে ৩৬১, রেকর্ড সময়ে হাসপাতাল গড়ল চিন
SARS এবং nCoV'র তুলনা
SARS ভাইরাস মহামারীর আকার ধারণ করতে শুরু করলে পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য সরবরাহ না করার জন্য তুমুলভাবে সমালোচিত হয় চিন। মনে করা হয় যে ভাইরাস ছড়াতে শুরু করার চার মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও চিনা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট তথ্য গোপন করেন।
নভেল করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে কিন্তু প্রথম থেকেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মাঠে নেমেছে চিন। তাদের প্রস্তুতিতে "ঘাটতি এবং অসুবিধে" রয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়ে খোলাখুলি ভাবে জানিয়েছে যে তাদের চিকিৎসা সামগ্রী এবং সার্জিক্যাল মাস্কের প্রয়োজন। এতদসত্ত্বেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন মহামারীর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা উহান শহরের আধিকারিকরা, যেহেতু গত বছরের একেবারে শেষ মুহূর্তে এই ভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: মেদিনীপুরেও করোনা থাবা, আক্রান্ত কেরালা ফেরত
চড়চড় করে বাড়তে থাকা সংক্রমণের প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির টম ইঙ্গলসবি বলেছেন, "...একদিকে যেমন সংক্রমণ বাড়লে আশঙ্কা হয়, অন্যদিকে বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হলে অসুখের গুরুত্ব আরও দ্রুত বোঝা যায়, এবং এও বোঝা যায় যে বেশিরভাগ রুগীর ক্ষেত্রেই এই অসুখ প্রাণঘাতী নয়।" ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ইঙ্গলসবি আরও লিখেছেন যে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশই "সামান্য অসুস্থতায়" ভুগছেন, এবং "পুরোপুরি সেরে উঠছেন"। সুতরাং নভেল করোনাভাইরাস সম্ভবত SARS-এর তুলনায় কম মারাত্মক।
যে আট হাজার মানুষ SARS-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে প্রাণ হারান ৮০০-র বেশি, অতএব মৃত্যুর হার ছিল প্রায় ১০ শতাংশ। সেখানে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার আক্রান্ত হলেও প্রাণ হারিয়েছেন ৪২৫ জন, যার অর্থ, মৃত্যুর হার কমবেশি ২.৫ শতাংশ।