২০১২ সালের দিল্লি বাসে গণধর্ষণের অপরাধী মুকেশ কুমার সিং, পবন গুপ্তা, বিনয় শর্মা ও অক্ষয় কুমার সিংকে ২০ মার্চ ভোর সাড়ে পাঁচটায় ফাঁসি দেওয়া হবে। বুধবার পবনের ক্ষমাপ্রার্থনার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজের দিন থেকে ফাঁসির নির্দেশের মধ্যে ১৪ দিনের ফারাক রাখতে হয়।
২০১২ দিল্লি গণধর্ষণের মামলা: ২ মাসের মধ্যে চতুর্থ তারিখ
জানুয়ারি মাস থেকে এই নিয়ে ফাঁসির চতুর্থ তারিখ স্থির হল। এই পর্যায়ে বহু আবেদন করা হয়েছে এবং সেগুলি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, একাধিকবার মৃত্যুদণ্ড স্থির হয়েছে এবং তা পিছিয়েও গিয়েছে। তার কারণ মৃত্যুদণ্ডের আইনি পদ্ধতিগুলির মধ্যে বহুরকম নিয়ন্ত্রণপদ্ধতি চালু রয়েছে, এবং পূর্ববর্তী ব্যর্থতাগুলির সাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্তদের সুরক্ষার জন্য একটি অতিরিক্ত বলয় তৈরি করা হয়েছে।
আইনি পদ্ধতি
ফৌজদারি আইনের নীতি হল একজন নিরপরাধকে শাস্তি দানের চেয়ে ১০ জন অপরাধীকে মুক্তি দিয়ে দেওয়া শ্রেয়। একজন অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দেবার প্রক্রিয়াটি জটিল, এবং বিভিন্ন সুরক্ষাবলী দ্বারা আবৃত।
ফলে নিম্ন আদালত মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে কেবলমাত্র বিরলের মধ্যে বিরলতম মামলায়- এবং সে নির্দেশ স্বয়ংক্রিয় উপায়েই হাইকোর্টে যায় নিশ্চয়তার জন্য। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় কেবলমাত্র হাইকোর্টের সম্মতি পেলে, তবেই।
এরপর দণ্ডিতরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের পর, অপরাধী রিভিউ পিটিশন দিতে পারেন, আলাদা করে কিউরেটিভ পিটিশনও দিতে পারেন। এগুলি স্বাভাবিক আইনি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে রায়ের ভুল সংশোধন করা যেতে পারে।
এর পর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাভিক্ষার আবেদন জানানো যেতে পারে। এ ধরনের পিটিশন দেওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ছাড়পত্র প্রয়োজন।
এরপর সুপ্রিম কোর্টে অপরাধীরা প্রাণভিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের যাথার্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করতে পারেন। এই পিটিশনের পর আর কোনও আইনি পদ্ধতি থাকে না। এ আবেদন নাকচের পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টে দণ্ডাজ্ঞা বলবৎ থাকার পরেও চারদফা পিটিশন করা যেতে পারে। ফলে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডে সম্মতি দিলেও যতক্ষণ না এই সমস্ত পদ্ধতিগুলি নিঃশেষিত হচ্ছে, ততক্ষণ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না-ও হতে পারে।
অতিরিক্ত জটিলতা
১৯৭৫ সালে, তিনজন ব্যক্তিকে একই অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সকলের এক শাস্তি হয়নি। একই অপরাধের জন্য একজনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনের দণ্ড লঘু হবার ঘটনায় সকলেই সচকিত হন এবং এমন যাতে আর না ঘটে, সে কারণে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় একই অপরাধের জন্য অপরাধের সাজা হবে একসঙ্গে।
৫.৫ ২০১৭য় সুপ্রিম কোর্টের কয়েকটি সিদ্ধান্ত
এর অর্থ একজন দোষীর পিটিশন কোনও ফোরামের সামনে বিচারাধীন থাকলে, সমস্ত সহ অপরাধীরাও তার দ্বারা সুরক্ষিত। দিল্লি গণধর্ষণের মামলায় চার অপরাধী চারবার করে, মোট ১৬ বার এক এক করে দণ্ড মকুবের বা দণ্ড কমানোর আবেদন করতে পারবেন।
বর্তমান মামলার হাল
প্রথম মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট শাস্তির বিষয়ে সম্মতি দেবার ২ বছর ৮ মাস পর, গত ৭ জানুয়ারি। এর পর প্রত্যেক অপরাধী আলাদা করে পিটিশন ফাইল করতে থাকেন, শাস্তিপ্রদানের তারিখের ঠিক আগে, এবং তার পর পিটিশন বিচারাধীন রয়েছে বলে তারিখ পিছোনোর আবেদন করেন। মঙ্গলবার ফাঁসির তারিখ স্থির হয়েছিল, সোমবার প্রাণভিক্ষার আবেদন করে পবন।
এখনও পর্যন্ত চার অপরাধীরই প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে। মুকোশ ও বিনয় প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হবার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যে আবেদন করেছিল, খারিজ হয়ে গিয়েছে তাও। তবে পবন ও অক্ষয়ের দিক থেকে এখনও সেই আবেদন দাখিল করা হয়নি।
অপরাধীদের আইনজীবী এপি সিং ইঙ্গিত দিয়েছেন পবনের নাবালকত্ব খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে তার বিরুদ্ধে তিনি কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করবেন। পবন ও অক্ষয়ের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হবার বিরুদ্ধেও তিনি সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দেবেন, এমনটাও মনে করা হচ্ছে।
এই মামলার যা গতিপ্রকৃতি, তাতে বলাই যায় এই সব আবেদনও খারিজ হয়ে যাবে শীঘ্রই। মুকেশ ২৮ জানুয়ারি তার প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হবার পরে সে নিয়ে আবেদন করেছিল ২৮ জানুয়ারি। সুপ্রিম কোর্ট পরদিনই সে আবেদন খারিজ করে দেয়। ১ ফেব্রুয়ারি তাদের ফাঁসি হয়েই যেত, যদি না বিনয় ২৯ জানুয়ারি বিনয় প্রাণভিক্ষার আবেদন করত।
(লেখক নয়া দিল্লির বিধি রিসার্চ পলিসির গবেষক)Death Penalty