ভারতীয় ওলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ২০২২-এর কমনওয়েলথ গেমসে অংশগ্রহণ করতে চায় না। বৃহস্পতিবার কমনওয়েলথ গেমস ফেডারেশনের শীর্ষব্যক্তিত্বরা ক্রীড়ামন্ত্রক ও ভারতীয় ওলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন যাতে বয়কটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু তাঁদের দিনভরের প্রয়াস ব্যর্থ হয়।
ভারতীয় ওলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের এ সিদ্ধান্ত ২০২২ সালের কমনওয়েলথ সংগঠকদের নেওয়া একটি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের জুনে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিতব্য এই প্রতিযোগিতা থেকে শুটিংকে বাজ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংগঠকরা। তার জায়গায় মহিলা ক্রিকেট, প্যারা টেবিল টেনিস এবং বিচ ভলিবলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ সিদ্ধান্তের মুখ্য কারণ হল বার্মিংহাম ও ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের বিস্তীর্ণ এলাকায় এই খেলাগুলির চল রয়েছে। ব্রিটেনের কড়া বন্দুক আইনের ফলে সেখানে অস্ত্রের প্রবেশ কঠিন হওয়াও আরেকটি কারণ।
এটা ঘটনা যে শুটিং কমনওয়েলথ গেমসের ক্রীড়া তালিকায় ঐচ্ছিক। ঐচ্ছিক বিভাগে বহু খেলা রয়েছে, এবং আয়োজক দেশ যে খেলায় শক্তিশালী সে খেলাকে নির্বাচন করাই সাধারণ দস্তুর। যেমন ২০১০ সালে ভারত বাস্কেটবল এবং ট্রায়াথলনকে বাদ দিয়ে টেনিস, তীরন্দাজি এবং কুস্তিকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়া আবার কুস্তিকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়।
কিন্তু ভারত এসব তর্কে কান দেয়নি। কমনওয়েলথ গেমসে ভারতের প্রাপ্ত মেডেলের এক চতুর্থাংশই এসেছে শুটিং থেকে। শুটিং বাদ দিলে মেডেল তালিকায় ভারতের স্থান নিচে নেমে যাবে। শুটিংকে বাদ দেওয়ার কথা যখন প্রথম উঠেছিল, তার পরেপরেই, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রণিন্দর সিং প্রথম গেমস বয়কটের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।
গত মাসে রণিন্দরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সহমত হন ভারতীয় ওলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রাজীব মেহতা। তারপর থেকেই এ দাবি তুঙ্গে উঠতে থাকে, এমনকি ভারতীয় ওলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নরিন্দর বাটরা এ প্রস্তাবও দিয়েছেন, শুধু ২০২২ সাল নয়, পরবর্তী সমস্ত কমনওয়েলথ গেমসই বয়কট করুক ভারত।
ভারত যদি সত্যিই গেমস থেকে নাম তুলে নেয়, তার কুপ্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে অ্যাথলিটদের উপর। কেবল বড়মাপের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে নাম প্রত্যাহারই নয়, অন্যান্য সুযোগসুবিধাও হারাবেন থাঁরা। কমনওয়েলথ গেমসে পদক জিতলে বেশ ভাল পরিমাণ পুরস্কার অর্থ পাওয়া যায়। সোনাজয়ীরা ৩০ লক্ষ, রুপোজয়ীরা ২০ লক্ষ এবং ব্রোঞ্জজয়ীরা ১০ লক্ষ টাকা পেয়ে থাকেন। এ তো গেল কেন্দ্রীয় সরকারের দেয় অর্থ। রাজ্য সরকারগুলি আলাদা পুরস্কার অর্থ দেয়, এবং রেলওয়েজ, তেল সংস্থা এবং রাজ্য পুলিশ দফতর পদকজয়ীদের হয় নগদ টাকা নয় পদোন্নতি অথবা দুয়েরই বন্দোবস্ত করে।
অধিকাংশ অ্যাথলিটই গেমস বয়কটের ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন। তবে চূড়ান্ত ভবিষ্যৎ ওলিম্পিক কর্তাদের হাতে, যাঁরা আগামী মাসে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
পড়তে ভুলবেন না, বিশ্লেষণ: সুপ্রিম কোর্টের অযোধ্যা ও শবরীমালা রায় কোথায় আলাদা হয়ে গেল