লিখেছেন রঘু মুর্তুগুদ্দে, আইআইটি মুম্বাইয়ের জলবায়ু গবেষণার অধ্যাপক
সবচেয়ে উষ্ণ ২০২৩
Climate Warning: জলবায়ুর পরিস্থিতি নথিভুক্ত করা শুরু হয় ১৮৫০ সালে। তারপর থেকে, গত বছর ২০২৩ সাল ছিল সবচেয়ে উষ্ণ। ইউরোপের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (C3S) সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছে। কোপার্নিকাস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রকল্প। যাকে ইউরোপের, 'আই অন আর্থ' বলা হয়। কোপার্নিকাস, ২০২৩ সালে পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা দুর্যোগের সম্ভাবনা-সহ ২০২৩ সালের আবহাওয়ার যাবতীয় রেকর্ডের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩-এর প্রতিটি দিন (১৮৫০-১৯০০ সাল পর্যন্ত) একই দিনের গড় থেকে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
কেন ২০২৩ এত উষ্ণ ছিল?
এটা এখন স্পষ্ট যে ২০২৩ সালের রেকর্ড উষ্ণতা শুধুমাত্র এল নিনো এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য হয়নি। অন্যান্য কারণ, যেমন সালফেট এরোসল হ্রাস (যা সূর্যালোক ছড়িয়ে দেয় এবং বায়ুমণ্ডলকে শীতল করে), ২০২২ সালের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত (দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে হুঙ্গা-টোঙ্গা-হুঙ্গা-হাপাই আগ্নেয়গিরি) দ্বারা নিক্ষিপ্ত জলীয় বাষ্পের নির্গমন, ব্যাপক দাবানল- এসব থেকেও সম্ভবত উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বোঝাচ্ছে যে এই এল নিনো সম্ভবত আগামী বসন্তের মধ্যেই বিলীন হয়ে যাবে। আর, আমরা সম্ভবত এই গ্রীষ্মের মধ্যে লা নিনায় যেতে পারব।
এবার তাহলে কী হবে?
আর, এরপরে প্রশ্ন উঠে আসে, তাহলে এবার কী হবে? এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর হল, 'আমরা জানি না।' জলবায়ু সম্পর্কে প্রচুর 'উপযোগী' তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু, সেই সব তথ্য, জাতীয়স্তরেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এমনই তথ্য সেসব। তাই যেটা জরুরি, তা হল- একাধিক ঋতু এবং বছরের জন্য পরিস্থিতি না-দেখে নির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া অসম্ভব। বনায়ন, জলবায়ু অভিযোজন এবং পরিস্থিতি সামলানোর জন্য অর্থ ব্যয় করা হলে, তা সবক্ষেত্রে কাজে না-ও লাগতে পারে। পরিস্থিতি দেখে এমনই আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এখনও ধাঁচ বোঝা বাকি
এখানে দুটি বিষয় লক্ষণীয়। যদিও, ২০২৩ সালের একেবারে শুরুতে এল নিনোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, এটি কিন্তু, ঐতিহাসিক এন নিনো হতে চলেছে বলে দাবি করা হয়নি। ২০১৫-১৬ সালের এল নিনো বরং বেশি শক্তিশালী ছিল। এমনটাই জানানো হয়েছিল। এছাড়াও ২০২৩ সালের এল নিনোর সময় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণায়নে ভিন্ন ধাঁচের পূর্বাভাস ছিল না। তারপরও এই এল নিনো, পশ্চিম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা, প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। যদিও এই ধরনের ধাঁচকে আগে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং এল নিনোর রূপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু, বাস্তবটা হল, আবহাওয়ার এই পরিবর্তিত ধরণ সম্পূর্ণরূপে বোঝা এখনও বাকি।
আরও পড়ুন- শীতেও তুষারহীন কাশ্মীর-লাদাখ! কীভাবে ঘটল এই বিস্ময়কর ঘটনা?