লিখেছেন জুলফিকার আব্বানি
দৈনিক ১৬ বার পৃথিবীকে চক্কর দেয়। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৪৩০ কিলোমিটার। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) বা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, আন্তর্জাতিক কূটনীতি, শান্তি, সহযোগিতার উদাহরণ।
কবে চালু হয়?
১৯৯৮ সালের ২০ নভেম্বর চালু হয়েছিল। যেখানে রাশিয়া থেকে জ্বালানি, ব্যাটারি সরবরাহ হয়েছিল। নাম দেওয়া হয়েছিল জারিয়া কন্ট্রোল মডিউল। কিছু দিন পর, ৪ ডিসেম্বর- আমেরিকা তার সঙ্গে ইউএস ইউনিটি নোড ১ মডিউল চালু করে। ধীরে ধীরে তা আজকের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন হয়ে ওঠে। প্রথমে সেখানে থেকেছেন নাসার মহাকাশকারী বিল শেফার্ড এবং রাশিয়ার রসকসমসের মহাকাশচারী ইউরি গিডজেনকো এবং সের্গেই ক্রিকালেভ। তারপর থেকে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মহাকাশচারীরা ধারাবাহিকভাবে থাকছেন।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন কত বড়?
এখানে থাকা এবং কাজের আলাদা জায়গা আছে। ছ'টি ঘুমানোর কোয়ার্টার, দুটি বাথরুম, একটি জিম এবং একটি ৩৬০-ডিগ্রি ভিউ বে উইন্ডো আছে। এটি ১০৯ মিটার (৩৫৭ ফুট) দীর্ঘ। একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের আমেরিকান ফুটবল মাঠের সমান। অলিম্পিক সুইমিং পুলের দৈর্ঘ্যের দ্বিগুণেরও বেশি এটা লম্বা। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এর মধ্যে প্রায় ১৩ কিলোমিটার লম্বা বৈদ্যুতিক তার আছে। এর গতি প্রতি সেকেন্ডে ৪ কিলোমিটার বা ৫ মাইল।
মহাকাশচারীরা এখানে কী করেন?
যা পৃথিবীতে করা যায় না, এমন নানা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। নিয়মিত স্পেসওয়াক করেন। রোবোটিক অস্ত্র বা যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ করেন। কঠোর স্বাস্থ্যবিধিতে থাকেন। তাঁদের পেশী এবং হাড়ের ভর হ্রাস করতে হয়। দিনে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা ট্রেডমিল-সহ বিশেষ শরীরচর্চা করতে হয়।
পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের প্রভাব কী?
মহাকাশচারীরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের ওপরও পরীক্ষা করেছেন। তাঁরা সাধারণ স্বাস্থ্য, পুষ্টি বা সৌর বিকিরণের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেছেন। আবার পৃথিবীতে বসবাসকারী বিজ্ঞানীদের কথা অনুযায়ীও পরীক্ষা চালিয়েছেন। এই সব পরীক্ষায় উপকৃত হয়েছে আলজেইমার, পারকিনসনস রোগ থেকে ক্যানসার, হাঁপানি, হৃদরোগ চিকিৎসা ও গবেষণা। পাশাপাশি ওষুধের অগ্রগতি, জল বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা, পেশী এবং হাড়ের ক্ষয় রোধের পদ্ধতি, খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও এই গবেষণা কাজে লেগেছে।
আরও পড়ুন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা, ভারতের মাথাব্যথার প্রধান কারণ, কে এই পান্নুন?
কতদিন মহাকাশ স্টেশন চালু থাকবে?
২০২২ সালের গোড়ার দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি এবং বিভিন্ন দেশের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা রাশিয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রত্যাহার করেছে। রাশিয়া অবশ্য বলেছে যে তারা নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন বানাতেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ত্যাগ করছে। তবে, শুধু রাশিয়াই নয়। জাপান, চিন, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মত বিভিন্ন দেশও নিজস্ব আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন মহাকাশে বানাতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ বলেছে যে তারা ২০৩০ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের সঙ্গে থাকবে। তার মধ্যেই নাসা চাঁদে বসবাসের পরিকল্পনা করছে।
ইংরেজিতে সম্পাদনা করেছেন: কার্লা ব্লেইকার