ইয়েতি এয়ারলাইন্সের AT-72 বিমান অবতরণের মাত্র ১০ সেকেন্ড আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বিমান দুর্ঘটনার কারণ কী খারাপ আবহাওয়া? অবতরণের মাত্র ১০ সেকেন্ড আগে কী হয়েছিল? নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ৬৪ যাত্রীর। প্রাথমি অদন্তে জানা গিয়েছে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আবহাওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেনি। এমনই দাবি এটিস্যার। এটিসি সূত্রে খবর, বিমানের পাইলট এটিসি থেকে অবতরণের অনুমতি নিয়েছিলেন। যার পরে মেলে পোখরা ATC থেকে সবুজ সংকেত। কিন্তু অবতরণের ঠিক আগের মুহুর্তেই বিমানে আগুন ধরে যায়। এই বিমান দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৬৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।
কারিগরি ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা
ইয়েতি এয়ারলাইন্সের AT-72 বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে নেপাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, যদি খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ত তাহলে বিমানটি মাঝ আকাশেই ভেঙে পড়তে পারত। কিন্তু তা হয়নি। খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে তা বিমানবন্দরের কাছেই ঘটত না। নেপাল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। অসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে, অবতরণের ঠিক আগে বিমানটিতে আগুনের শিখা দেখা গিয়েছে, তাই খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা বলা যাবে না।
পোখরা বিমানবন্দর ATC সূত্রে জানা গেছে, বিধ্বস্ত ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমানটি রানওয়ে থেকে মাত্র ১০ সেকেন্ড দূরে ছিল। এটিসি কর্মীদের মতে, পোখরার রানওয়ে পূর্ব-পশ্চিম দিকে তৈরি। বিমানের পাইলট এর আগে পূর্ব দিক থেকে অবতরণের অনুমতি চেয়েছিলেন এবং অনুমতি দেওয়াও হয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে পাইলট পশ্চিম দিক থেকে অবতরণের অনুমতি চাইলে পুনরায় অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু অবতরণের ১০ সেকেন্ড আগে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আজ দিনের সবকটি ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে নেপালের পোখরা বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটিতে ৫৩ নেপালি, ৫ ভারতীয়, ৪ রাশিয়ান, একজন আইরিশ, ২ কোরিয়ান, ১ আর্জেন্টিনা এবং একজন ফরাসি নাগরিক ছিলেন। বিমানটিতে মোট ৬৮ জন যাত্রী এবং চারজন ক্রু সদস্য ছিলেন। এই বিমানে ১১ জন বিদেশী যাত্রী ছিলেন এবং ৩ জন শিশুও ছিল।
কেন বারবার ঘটছে বিমান দুর্ঘটনা?
বিমান দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে শুরু হয়েছে কাটা ছেঁড়া। উড়ানের মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই বিমানটি ভেঙে পড়ে। তাতে আগুন লেগে যায়। এটিসি সূত্রে দাবি করা হয়েছে পাইলট অবতরণের সময় ২ বার দিক বদলও করে। ATR72 হল একটি বহুল ব্যবহৃত টুইট-ইঞ্জিন টার্বোপ্রপ প্লেন, যা এয়ারবাস ও ইতালিত নিওলার্দোর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট অনুসারে ৬টি ATR7 ৫০০ প্লেনের ব্যবহার রয়েছে। ইয়েতি তার ওয়েসবাইটে নেপালের গুরুত্বপূর্ণ এয়ারলাইন্স হিসেবে নিজেকে দাবি করে। কিন্তু এর বিমানগুলি অত্যান্ত পুরনো।
পাশাপাশি আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন, উন্নত রাডার এবং যোগ্য কর্মীদের অভাব, সরু উপত্যকার কারণে প্লেনে বাঁক নিতে অসুবিধা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও, তুষারপাত রানওয়েকে খুব বিপজ্জনক করে তোলে। এই পরিস্থিতিতে, পাইলটদের সামান্য ভুলের ফল মারাত্মক হতে পারে। জানা গিয়েছে যে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সেটি ৪২ বছরের পুরনো মডেলের বিমান। এই মডেলের প্রথম বিমানটি ১৯৮১ সালে নির্মিত হয়েছিল।নেপালে গত ৩০ বছরে এটি ২৮টি বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে পাহাড়ি অঞ্চল, প্রতিকূল আবহাওয়া, পুরানো বিমান এবং অনভিজ্ঞ পাইলটরা নেপালকে সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে। নেপালের অসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ২০১৯ সালের নিরাপত্তা সংক্রান্ত রিপোর্ট অনুসারে, নেপালের পাহাড়গুলি পাইলটদের জন্য একটি 'বড় চ্যালেঞ্জ'।