/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/03/Holi.jpg)
কিছু অঞ্চল বাদ দিলে, দেশের সর্বত্রই গতকাল (৭ মার্চ) থেকে হোলির আবহ। এমনিতে হোলি পড়েছে ৮ মার্চ। কিন্তু, মানুষের তর সয়নি। 'ছোটি হোলি' বা 'হোলিকা দহন'-এর দিনই হোলি খেলা শুরু করে দিয়েছে। লোকজন যখন উৎসাহের সঙ্গে হোলি খেলছে, তখন বিভিন্ন শহরে পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
নজরদারি
মুম্বই-সহ বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ নজরদারি চালাচ্ছে। দুষ্কৃতীরা যাতে হোলির মধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠতে না-পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর ঘটনা এই সময়টায় বেড়ে যায়। সেগুলোও রোখার চেষ্টা করছে পুলিশ। দিল্লিতে আবার পুলিশ আদর্শ আচরণবিধির পরামর্শ দিয়েছে। বিভিন্ন শহরের মেট্রোগুলো তাদের এই বিশেষ দিনে চলাচলের সময়সূচি আগেই ঘোষণা করে দিয়েছে। এবার উৎসব অন্যবারের চেয়ে রঙিন করতে চাইছেন অনেকে। কারণ, করোনা অতিমারির জন্য গত কয়েক বছর এর আগে কেউই সেভাবে হোলি উপভোগ করতে পারেননি।
পুরাণে হোলি
হোলিতে লোকজন একত্রিত হয়ে একে অপরের ওপর শুকনো এবং ভেজা রং ছুড়ে দেয়। শিশুরা জলভর্তি বেলুন এবং জলভরা বন্দুক নিয়ে খেলে। এছাড়াও হোলির একটি আধ্যাত্মিক দিক রয়েছে। যা হল, মন্দের ওপর ভালোর বিজয়ের প্রতীক। এই উৎসবের পিছনে পৌরাণিক কাহিনি হল- অসুরদের রাজা হিরণ্যকশিপুকে ভগবান বিষ্ণুর হত্যা করার কাহিনি। কাহিনি অনুযায়ী, হিরণ্যকশিপু বর চেয়েছিলেন। তাঁকে কোনও মানুষ বা প্রাণী বধ করতে পারবেন না। বাড়ির ভিতরে বা বাইরে, দিনে বা রাতে, জলে অথবা স্থলে, বায়ুতে অথবা কোনও অস্ত্র দিয়ে তাঁকে বধ করা যাবে না।
প্রহ্লাদের কাহিনি
হিরণ্যকশিপু চেয়েছিলেন, সবাই তাঁর পুজো করুক। কিন্তু, সেকথা তিনি নিজের ছেলে প্রহ্লাদকে বোঝাতে পারেননি। তাঁর ছেলে প্রহ্লাদ ভগবান বিষ্ণুর অনুগত ছিলেন। রাজা তখন ছেলেকে নিষ্ঠুর শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন। প্রহ্লাদের পিসি হোলিকা প্রহ্লাদকে চিতার ওপর বসিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু, হোলিকা নিজেকে রক্ষার জন্য যে পোশাক পরেছিলেন, তা উড়ে গিয়ে প্রহ্লাদকে ঘিরে ফেলায় প্রহ্লাদ বেঁচে যান। আর, ভগবান বিষ্ণু, সন্ধ্যার সময় অর্ধেক সিংহ, অর্ধেক মানবরূপে আবির্ভূত হন। তিনি অসুররাজকে ঘরের দোরে নিয়ে যান। তাঁকে কোলে বসিয়ে সিংহের নখ দিয়ে হত্যা করেন। মন্দের ওপর সেই ভালোর বিজয়কেই তুলে ধরে হোলি।
আরও পড়ুন- আতঙ্কে দলে দলে তামিলনাড়ু ছাড়ছেন উত্তর ভারতীয়রা, ভারতের পরিযায়ী পরিসংখ্যান কী বলছে?
রাধা-কৃষ্ণ
এই উৎসবের অপর দিক হল আরেকটি কিংবদন্তি। যেখানে ভগবান কৃষ্ণ আর তাঁর প্রেমিকা রাধা। ব্রজ অঞ্চলে যেখানে কৃষ্ণ বড় হয়েছেন বলে বিশ্বাস করা হয়, রাধা এবং কৃষ্ণের মধ্যে প্রেমের স্মরণে এই উৎসব পালিত হয় রং পঞ্চমী পর্যন্ত। কালো রূপের কৃষ্ণ একবার খেলাধূলার শেষে তাঁর মায়ের কাছে গায়ের রং নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। তাঁর মা পালটা বলেছিলেন, এই রঙের পরও রাধা তাঁকে পছন্দ করেন। আর, কৃষ্ণও রাধাকে পছন্দ করেন। তাঁরা চাইলে পরস্পরের মুখ অন্য রঙে রাঙিয়ে দিতে পারেন। এভাবে রাধা ও কৃষ্ণ পরস্পরকে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন। আর, মিলিত হয়েছিলেন।
এই ভাবে হোলি সংস্কৃতিতে এক বিশেষ জায়গা অধিকার করে নিয়েছে। এনিয়ে নানা গান এবং গল্পও তৈরি হয়েছে। এমনকী, তৈরি হয়েছে জনপ্রিয় হিন্দি গানও। যার কলি হল- 'হোলি কে দিন দিল খিল যাতে হ্যায়, রঙ্গন মে রং মিল যাতে হ্যায়।'