বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি), উগ্র প্রচারক এবং খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিংয়ের কয়েকশো অনুগামী, অমৃতসরের কাছে আজনালা থানার বাইরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। অপহরণের অভিযোগে ধৃত তাদের এক সহকর্মীর মুক্তির দাবিতে এই সংঘর্ষে জড়ায় খালিস্তানপন্থীরা। লাভপ্রীত সিং 'তুফান' নামে অমৃতপাল সিংয়ের ওই সহযোগী, শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) অমৃতসর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পায়। আজনালার একটি আদালত পুলিশের এক আবেদনের ভিত্তিতে তাকে ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। অমৃতপাল সিং (২৯), নিহত শিখ জঙ্গি জার্নেল সিং ভিন্দ্রানওয়ালের একজন অনুগামী। তাঁকে পঞ্জাবে 'ভিন্দ্রানওয়ালে ২' নামে ডাকা হয়।
ফিরছে হিংস্রতা
'ওয়ারিস পাঞ্জাব দে' সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, অভিনেতা-কর্মী দীপ সিধুর মৃত্যুর পর সংগঠনের লাগাম ধরতে গত বছর দুবাই থেকে ফিরেছেন অমৃতপাল। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'খালিস্তানের জন্য আমাদের লক্ষ্যকে খারাপ এবং নিষিদ্ধ হিসেবে দেখা উচিত নয়। এটি একটি আদর্শ এবং আদর্শের কখনও মৃত্যু হয় না। আমরা দিল্লির থেকে এটি ভিক্ষা চাইছি না।' বৃহস্পতিবার অমৃতপাল সিংয়ের সমর্থকদের হিংসাত্মক আচরণের পরে কংগ্রেস অভিযোগ করে, 'প্রত্যেক পঞ্জাবি যেটা ভয় পায়, সেই হিংস্রতার অন্ধকার' ফিরে আসছে।
খালিস্তান আন্দোলন কী?
খালিস্তান আন্দোলন বর্তমান পঞ্জাব (ভারত ও পাকিস্তানে বিভক্ত)-কে নিয়ে একটি পৃথক, সার্বভৌম শিখ রাষ্ট্রের দাবি। বছরের পর বছর, এটি বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন স্থানে এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিকে আছে। অপারেশন ব্লু স্টার (১৯৮৪) এবং অপারেশন ব্ল্যাক থান্ডার (১৯৮৬ এবং ১৯৮৮)-এর পরে এই আন্দোলন ভারতে শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, এটি শিখ জনগোষ্ঠীর অংশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনে প্রবাসী শিখদের মধ্যে সহানুভূতি এবং ব্যাপক সমর্থন তৈরি করেছে।
আরও পড়ুন- পাঞ্জাবে অশান্তির নেপথ্যে ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’, কেন শিরোনামে এই খালিস্তানপন্থী সংগঠন?
খালিস্তান আন্দোলনের শুরু কবে এবং কেন?
খালিস্তান আন্দোলনের উত্স ভারতের স্বাধীনতা এবং পরবর্তীতে ধর্মীয় লাইনে দেশভাগের সময়। পঞ্জাব প্রদেশ, যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভাজনের সময় ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেখেছিল। যার জেরে লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু তৈরি হয়েছিল। পশ্চিমে (পাকিস্তানে) আটকা পড়া শিখ এবং হিন্দুরা ভারতে চলে আসতে বাধ্য হন। আর, ভারতের মুসলমানরা পশ্চিম দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। মহারাজা রঞ্জিৎ সিংয়ের রাজধানী লাহোর, শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরুনানকের জন্মস্থান নানকানা সাহিব-সহ পবিত্র শিখ স্থানগুলো পাকিস্তানে চলে যায়। আর, ভারতে শিখ সম্প্রদায় দেশের সংখ্যালঘু ক্ষুদ্র সম্প্রদায় হিসেবে থেকে যায়। যা, ভারতের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ। সেই সময় থেকেই ওঠে আলাদা শিখ রাষ্ট্রের দাবি।