পাঞ্জাবের একটি গ্রামে কিশোরী কিরণজিৎ কউরকে যৌন নিপীড়ন এবং হত্যার পর ২৬ বছর কেটে গেছে। তাঁর মৃত্যু সেই সময়ে পঞ্জাবে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তির জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে তাঁর পরিবার এবং কিরণজিৎ কউর স্মরণ কমিটি ১২ আগস্ট একটি বার্ষিক স্মরণসভার আয়োজন করে। কারণ, ওই দিন তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল।
মেহল কালান নিখোঁজ কিশোরী
কিরণজিৎ কউর ছিলেন বারনালা জেলার মেহল কালান গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৯৭ সালে তিনি দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নের সময় ২৯ জুলাই নিখোঁজ হন। তাঁর বাবা দর্শন সিং ছিলেন সেই সময় এক সরকারি স্কুলের হিন্দি শিক্ষক। নিখোঁজ হওয়ার পর তিনি মেয়ের খোঁজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু, পাঁচ দিন ধরে তাঁর সন্ধান না-থাকার পর, ২ আগস্ট একটি অ্যাকশন কমিটি, পরে নাম পরিবর্তন করে হয়েছে 'কিরণজিৎ কউর ইয়াদগার কমিটি' গঠন করা হয়। তাঁর বই, সাইকেল এবং জামাকাপড় শেষ পর্যন্ত কৃষিজমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবস্থায় উদ্ধার হয়।
অপরাধীরা চিহ্নিত
যাদের সেই কৃষিজমি, পরে দেখা যায় তারাই ঘটনায় অপরাধী। অবশেষে ১১ আগস্ট একটি খামার থেকে তাঁর নগ্ন দেহটি মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয়। শেষ পর্যন্ত একদিন পর কউরের দেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের কঠোরতম শাস্তির দাবিতে স্লোগান দেন ক্ষুব্ধ জনগণ। ওই বছর ২০ আগস্ট এরপর, হাজার হাজার লোক প্রার্থনা সভার জন্য মেহল কালানের শস্য বাজারে জড় হন। যে অপরাধীদের জমিতে কিরণজিতের মৃতদেহ এবং জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছিল, তারা ছিল একই গ্রামের বাসিন্দা। ওই ব্যক্তিদের অপরাধের অতীত ছিল। অভিযোগ ওঠে, কিরণজিৎ স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় অভিযুক্তরা তাঁকে অপহরণ, গণধর্ষণের পর খুন করে। এই ঘটনায় কিরণজিতের বাবা দর্শন সিংকে প্রাথমিকভাবে আত্মীয় ও গ্রামবাসীরা চুপ থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁর মেয়ের ওপর এমন অপরাধের কথা জানাজানি হলে যে সামাজিক কলঙ্ক তৈরি হবে, তা এড়ানোর জন্য এই পরামর্শ তাঁরা দিয়েছিলেন। কিন্তু, দর্শন সিং তাতে কর্ণপাত করেননি। তিনি দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। কিরণজিৎ কৌর ইয়াদগার কমিটির নেতৃত্বে একটি জনসাধারণের আন্দোলনের পরে, পুলিশ গ্রামের সাত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করে। এর মধ্যে দু'জন অভিবাসী শ্রমিক, একজন পাঞ্জাবি খামার শ্রমিক এবং চার জন কৃষক।
আরও পড়ুন- ঠিক কোন পরিস্থিতিতে ভারত উপনিবেশে আইন ও বিধি চালু করেছিল ব্রিটিশরা?
সাজাপ্রাপ্তরা
২০০১ সালে, অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজনকে খালাস দেওয়া হয়েছিল এবং দুই অভিবাসী শ্রমিক এবং দুই ভাইকে ১৪ বছরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পাঠানো হয়েছিল। তাদের সকলের জেলের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ইয়াদগার কমিটির সদস্য নারাইন দত্ত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'মুক্তির পর অভিবাসী শ্রমিকরা আর গ্রামে ফিরে আসেনি। খালাস পাওয়া তিন ব্যক্তিও গ্রাম ছেড়েছে। কিন্তু, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড শেষে খালাস পাওয়া ভাইয়েরা আজও একই মেহল কালান গ্রামেই বসবাস করছে।'