ইউরোপের তাপমাত্রাটা একেবারে দুরন্ত পর্যায়ে পৌছে গিয়েছে। এত পারদের চড়চড়ানি, পাখা, এসি, বরফ, স্নান স্নান… মানুষ যেন উন্মাদের প্রায়। পৃথিবীর কি হয়ে এল নাকি, গালে হাত রেখে ভাবনা শুরু করাটা মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। হ্যাঁ, ইউরোপের গরম আর একটি শিখর ছুঁয়ে ফেলে মঙ্গলবার। ব্রিটেনের কিছু জায়গায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়।
এত গরম সত্যি, কী করে, এও কি সম্ভব! বলতে পারেন আপনি। আর ব্রিটেনবাসীর শ্বাসপ্রশ্বাস আটকাচ্ছেই, প্রকৃতি দেবী তখন উপর থেকে মুচকি হাসছেন! ওরে মনে ছিল না গাদা কার্বন বাতাসে পাঠানোর আগে, চোখকানবুজে শিল্প করতে গিয়ে যে প্রাণটাই এবার গল্প হয়ে যাবে! গত মাসে ফ্রান্সের কিছু অঞ্চলে পারদ ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছড়িয়ে গিয়েছিল। এটা সর্বকালীন রেকর্ড বৈকি!
ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতেও গরমের চড়চাপড় কমবেশি চলছে। বাড়িতে এয়ারকন্ডিশনার লাগানোর চল তেমন নেই পৃথিবীরর এ অংশে, কারণ প্রকৃতিই যে শীতল, কেন আর এসি নেব বাপু, ঠান্ডাকালে তো রুম হিটার লাগে বহু জায়গায়। ফলে নব্য গরমে তেতেপুড়ে তামাটে অবস্থা হচ্ছে সাদা চামড়ার। যদিও কয়েকটি দেশে তাপমাত্রা সামন্য কমেছে গত দু'দিনে। তবে হ্যাঁ এই গরমের ব্যাটিং এখনও বাকি রয়েছে, ইউরোপকে তাই সাবধান অবস্থা থেকে সরলে চলবে না মোটেই।
সারা পৃথিবীতে তাপমাত্রার গতিপ্রকৃতি অস্বাভাবিক।
জলবায়ু পরিবর্তনের যে অগ্রগতি, কে না জানে তা তাপমাত্রাকে কান ধরে টেনে বাড়িয়ে তুলছে। এমনকি দুই মেরু অঞ্চলেও তার প্রভাব ভালমাত্রায় পড়েছে। বছরের গড় তাপমাত্রার হিসেব করতে বসতেও চোখ কপালে বাউন্স খেতে পারে। নাসা বলেছে, ১৮৮০ সালের পর থেকে যে গরম পড়েছে শেষ আট বছর, তা সর্বাধিক ও মাত্রা ছাড়ানো। যদিও ইউরোপ আমেরিকায় জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দারুণ কাজকর্ম হচ্ছে। যেটা এশিয়ার দেশগুলি যেমন ভারত পাকিস্তান ইত্যাদিতে, তেমনটা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
অনেক বড় বড় কথা বলার কোনও কমতি হচ্ছে না। কিন্তু কোনও সভাসমাবেশে প্রকৃতি রক্ষা নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন ছিঁটেফোঁটাও বোধ করেন না রাজনীতির ময়দানের লোকজন, এখনও। বরং কয়লাখনি থেকে কয়লা তুলে আরও প্রকৃতিতে আরও কার্বন বৃদ্ধির পরিকল্পনা একেবারে ভূমিকা এবং উপসংহার সহ লেখা হয়ে যায়।
আরও পড়ুন- ইতিহাস গড়লেন দ্রৌপদী মুর্মু, রাষ্ট্রপতির কুর্সিতে এই প্রথম আদিবাসী মহিলা
যা হোক, এবার উষ্ণায়নের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ২০২১ সালটি সবচেয়ে গরম সালগুলির বিচারে ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে। ব্রিটেনে গত বছরের প্রতিটি মাসেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রার ছবিটা সামনে এসেছে। স্বাভাবিক তাপমাত্রা বলতে বোঝায় ৩০ বছরের তাপমাত্রার গড় (এ ক্ষেত্রে ১৯৯১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত)। এখন যে তাপপ্রবাহ চলছে ব্রিটেন এবং বাকি ইউরোপে, তা শুরু হয়েছে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে। এর পূর্বাভাসও ছিল। তবে এই গরমের জন্য যে কারণটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হল-- ইউরোপীয় অঞ্চলে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, যেটি উত্তর আফ্রিকার গরম হাওয়াকে টেনে আনছে এবং এই এলাকার গা গরম করে দিচ্ছে।
ইউরোপীয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টিংয়ের তরফে একটি বুলেটিনে সোমবার বলা হয়, 'ধীর ভাবে এগিয়ে চলা একটি অত্যন্ত চাপের অঞ্চল এখনও পর্যন্ত জারি রয়েছে, উত্তর আফ্রিকা থেকে পশ্চিম এবং মধ্য ইউরোপে চলে আসছে উষ্ণ হাওয়া। উত্তর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে পর্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স এবং এখন ব্রিটেন এবং এর পর বেলজিয়াম… এবং পশ্চিম জার্মানি, সুইৎজারল্যান্ড হয়ে উত্তর ইটালি। ফলে এখনও স্থানীয় ও আঞ্চলিক তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙতে থাকবে।' দেখতে থাকুন!
জুন মাসে শুধু ফ্রান্স নয় নরওয়েতেও তাপমাত্রা রেকর্ড করে। তবে একটা ব্যাপার এখানে বলতে হবে যে, এই দুদ্দার পারদের উপরের দিকে উঠে যাওয়া, তা বেশি সময় ধরে স্থায়ী হচ্ছে না। যেমন বুধবার ব্রিটেনে তাপমাত্রা কিছুটা কম ছিল। ফ্রান্সের ক্ষেত্রেও এক দিন তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়িয়েছিল, ত্রাহি মধুদূদন করছে লোকজন, দেখা গেল সেটা কয়েক ঘণ্টার খেলা। অনেকটা ম্যাজিকেই তাপমাত্রা নেমে ১৫ ডিগ্রিতে চলে এসেছে।
Read full story in English