দিল্লির সেই বিখ্যাত রাজপথ, যা রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত বিস্তৃত, তার নতুন নাম হবে কর্তব্য পথ (কর্তব্যের পথ)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৃহস্পতিবার (সেপ্টেম্বর ৭), পরিমার্জিত সেন্ট্রাল ভিস্তা অ্যাভিনিউ উদ্বোধন করবেন। এভিনিউটি বৃহত্তর সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের অংশ, যেখানে একটি নতুন ত্রিভুজাকার সংসদ ভবন, কেন্দ্রীয় সচিবালয়-সহ আরও কয়েকটি সরকারি অফিস পুনর্নির্মিত হচ্ছে। তারই মধ্যে রয়েছে তিন কিলোমিটার বিস্তৃত এক সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। যা গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বারবার বদলেছে।
কিংসওয়ে
ব্রিটিশ শাসনকালে একে কিংসওয়ে বলা হত। ১৯২০ সাল নাগাদ নয়াদিল্লির স্থপতি এডউইন লুটিয়েন্স এবং হার্বার্ট বেকার এটিকে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য তৈরি করেছিলেন। রাইসিনা হিলের রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বিজয় চক এবং ইন্ডিয়া গেট হয়ে রাস্তাটি গিয়েছে। যার পাশে রয়েছে বিশাল লন, খাল এবং গাছের সারি। ১৯১১ সালে যখন ব্রিটিশ সরকার তার রাজধানী কলকাতা (তৎকালীন ক্যালকাটা) থেকে দিল্লিতে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় তখনই প্রশাসনিক রাজধানী হিসেবে নয়াদিল্লিকে নতুন করে নির্মাণ করা শুরু করে।
লুটিয়েন্স একটি "আনুষ্ঠানিক কক্ষ" এর চারপাশে কেন্দ্রীভূত একটি আধুনিক রাজার শহর তৈরির কথা ভেবেছিলেন, যার নাম তাঁরা দিয়েছিলেন কিংসওয়ে। নামটি লন্ডনের কিংসওয়ের অনুকরণে দেওয়া হয়েছিল। এই কিংসওয়ে ১৯০৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জের বাবা এডওয়ার্ড সপ্তমকে সম্মান জানানোর জন্য তৈরি হয়েছিল।
দিল্লির কিংসওয়ে ভাইস-রেগাল প্রাসাদ (তখনকার ভাইসরয়ের বাড়ি এখন রাষ্ট্রপতি ভবন) থেকে শহরের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। ভারতের সম্রাট পঞ্চম জর্জের সম্মানে রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছিল। জর্জ ১৯১১ সালে দরবারের সময় দিল্লি সফর করেছিলেন। সেখানেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
রাজপথ
ভারতের স্বাধীনতার পর, রাস্তাটির ইংরেজি নামকরণের পরিবর্তে তার হিন্দি নাম ‘রাজপথ’ দেওয়া হয়। হিন্দিতে 'রাজপথ'-এর অর্থ হল রাজার পথ। যা নামকরণের পরিবর্তে ছিল স্রেফ অনুবাদ। ৭৫ বছর ধরে, প্রতিবছর ২৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের পথ।
২০২১ সালের ফেব্রুয়রি আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী, স্বাধীনতার পরে সেন্ট্রাল ভিস্তা অ্যাভিনিউয়ে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিল- ল্যান্ডস্কেপ বদল করা হয়েছিল। ১৯৮০-র দশকে গাছের নতুন সারি সেখানে যুক্ত হয়। একটি নতুন রাস্তা, রফি আহমেদ কিদওয়াই মার্গ, উত্তর-দক্ষিণের সংযোগ উন্নত করার জন্য তৈরি হয়েছিল।
চলতি বছরের ১৫ অগাস্ট লালকেল্লা থেকে তাঁর ভাষণে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী "ঔপনিবেশিক মানসিকতা" সম্পর্কিত প্রতীকগুলি লুপ্ত করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। রাজপথটি 8 সেপ্টেম্বর আরেকটি ঔপনিবেশিক ধ্বংসাবশেষ ফেলে দেবে যখন গ্র্যান্ড ক্যানোপি, বা যেখানে একসময় পঞ্চম জর্জের মূর্তি ছিল, সেখানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ২৮ ফুটের মূর্তি লাগানো হবে। যা ভারতে ব্রিটিশ কর্তৃত্বের প্রতি অবজ্ঞার প্রমাণ হয়ে থাকবে।
কর্তব্যপথ
সেন্ট্রাল ভিস্তা রিডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের নির্মাণকাজ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছিল। নতুন সংসদ ভবন এবং সেন্ট্রাল ভিস্তা অ্যাভিনিউয়ের পুনরায় উন্নয়নের প্রথম পর্যায় হিসেবে শুরু হয়েছিল এই কাজ। আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক তার ২০২১ সালের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, 'এটি দিল্লির সবচেয়ে ঘন ঘন পরিদর্শন করা স্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। যাই হোক, এটিতে টয়লেট, পাথওয়ে, মনোনীত ভেন্ডিং জোন, পার্কিং, সঠিক আলো, সাইনেজ ইত্যাদি সুবিধার অভাব রয়েছে।'
আরও পড়ুন- বাংলাদেশ সর্ববৃহৎ বাণিজ্য সহযোগী: মোদী; তিস্তা-সহ বাকি ইস্যুগুলির দ্রুত সুরাহা হোক: হাসিনা
পুনঃউন্নয়নের মধ্যে রয়েছে ল্যান্ডস্কেপিংয়ের পুনর্নবীকরণ, ৩.৫ লক্ষ বর্গমিটার থেকে ৩.৯ লক্ষ বর্গমিটারে সবুজ আচ্ছাদন বৃদ্ধি করা এবং বৃষ্টির জল সংগ্রহের সঙ্গে একটি নতুন সেচ ব্যবস্থা, একটি স্যুয়ারেজ রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট, পাবলিক টয়লেট এবং পানীয় জলের সুবিধা তৈরির ব্যবস্থা। এই এভিনিউ বরাবর ১০টি কেন্দ্রে একটি ভেন্ডিং এরিয়া তৈরি করা হবে। পাশাপাশি খালের ওপর হাঁটার রাস্তা এবং সেতু থাকবে।
প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের জন্য, প্রতিবছর লাগানো এবং অপসারণ করা অস্থায়ী কাঠামোগুলো বদলানোর বদলে এখানে ভাঁজযোগ্য বসার ব্যবস্থা করা হবে। এই প্রস্তাবের উদ্দেশ্য হল এই রাস্তাকে একটি আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা, 'যা সত্যিই নতুন ভারতের জন্য উপযুক্ত'। ৬০৮ কোটি টাকার সেন্ট্রাল ভিস্তা অ্যাভিনিউ প্রকল্পটি সম্পর্কে এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
Read full story in English