কংগ্রেস সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) তাদের টুইটে একটি ছবি পোস্ট করেছে। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে খাঁকি হাফপ্যান্ট জ্বলছে। তার সঙ্গে কংগ্রেস ক্যাপশনে লিখেছে, 'বিজেপি-আরএসএসের ছডা়নো ঘৃণা এবং ক্ষয়ক্ষতির বিরুদ্ধে আমরা ধাপে ধাপে লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছি।' যা দেখে রেগে কাঁই সংঘ ও বিজেপির নেতারা। বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র টুইট করেছেন, কংগ্রেস হিংসায় প্ররোচনা দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কংগ্রেসের পোস্টে বিজেপি ও আরএসএস নেতাদের এই রাগের কারণ, ৯০ বছরের বেশি সময় ধরে খাঁকি হাফপ্যান্ট ছিল আরএসএসের উর্দির অংশ। বহু বিতর্কের পর ২০১৬ সালে সেই হাফপ্যান্টের বদলে খাঁকি ফুলপ্যান্ট জায়গা পেয়েছে আরএসএসের উর্দিতে।
আরএসএস সদস্যরা উর্দি পরেন কেন?
আরএসএসের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এই উর্দি তাদের দৈনিক শিক্ষাকেন্দ্র বা শাখায় কাজে লাগে। সংঘের সদস্যরা এই উর্দি পরে সেখানে শরীরচর্চা করেন। পাশাপাশি, দেশাত্মবোধক গান করেন। নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। নৈতিক চরিত্র উন্নত করার জন্য গল্প পড়েন। আর মাতৃভূমির জন্য প্রার্থনা করেন। আরএসএসের দাবি, দেশজুড়ে তাদের ৫০ হাজারেরও বেশি শাখা আছে। আরএসএসের আরও দাবি, তারা সদস্যদের মধ্যে একতা এবং ভ্রাতৃত্বের বিকাশে জোর দেয়। সেই একতা তৈরির জন্যই উর্দির ব্যবস্থা রেখেছে। আরএসএসের আরও দাবি, উর্দি পরায় সদস্যদের শরীরচর্চা করতে সুবিধা হয়। তবে, সদস্যদের এই উর্দি পরা বাধ্যতামূলক নয়। যাঁরা কেবল পদাধিকারী, তাঁদের জন্যই উর্দি বাধ্যতামূলক। এই উর্দি আরএসএসই তৈরি করে। স্বয়ংসেবকরা তা আরএসএসের কেন্দ্র থেকে কিনে নেয়। দাম বেশি না-হওয়ায় কেনার ক্ষেত্রে স্বয়ংসেবকদের তেমন একটা অসুবিধাও হয় না।
তাহলে আরএসএস উর্দি হাফ থেকে ফুলপ্যান্ট করল কেন?
এই ব্যাপারে সংঘের দাবি, যুবক সদস্যরা অনেকেই হাফপ্যান্ট পরে শরীরচর্চা করতে লজ্জা পাচ্ছিলেন। সদস্যদের হাফপ্যান্ট পরা নিয়ে সংঘের ভিতরে এবং বাইরে প্রবল সমালোচনাও হচ্ছিল। তাই উর্দিতে বদল আনা হয়েছে। যদিও অনেক প্রবীণ সদস্য, বিশেষ করে মহারাষ্ট্রের সদস্যরা এই বদল চাইছিলেন না। কিন্তু, হাফ থেকে ফুলপ্যান্ট করার সিদ্ধান্তে আরএসএস প্রধান তথা সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত ও সংঘের উপপ্রধান সরকার্যবাহ ভাইয়াজি জোশী রাজি হন। তারপরই উর্দির হাফপ্যান্ট বদলে ফুলপ্যান্ট করা হয়েছে। ২০১৬ সালে এই বদল হয়। উর্দির এই বদলের সিদ্ধান্ত মেনে নেয় সংঘের অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভা বা এবিপিএস। এই এবিপিএসই আরএসএসের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি। তারপরই ২০১৬ সালের মার্চে স্বয়ংসেবকদের উর্দি হাফ থেকে ফুলপ্যান্ট করা হয়।
আরও পড়ুন- ‘ভারত জোড়’য় আরএসএসের খাঁকি হাফপ্যান্ট জ্বলছে, কংগ্রেসের পোস্টে রেগে আগুন সংঘ-বিজেপি
আরএসএসের উর্দি কি প্রথম থেকেই একইরকম ছিল?
আরএসএসের দাবি, ১৯২৫ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত আরএসএসের উর্দির জামা এবং প্যান্ট দুটোই খাঁকি ছিল। ১৯৩০ সাল থেকে তা বদলে যায়। চালু হয় খাঁকি প্যান্ট ও সাদা জামা। ১৯৭৩ সাল থেকে লম্বা বুটের পরিবর্তে চালু হয় চামরার জুতো। পরে রেক্সিনের জুতোও চালু হয়। তার মধ্যে খাঁকি হাফপ্যান্ট ২০১৬ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। এই বদল সম্পর্কে সরকার্যবাহ বা সাধারণ সম্পাদক ভাইয়াজি জোশী ২০১৬ সালে বলেছিলেন, 'সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতেই আমরা দৈনিক জীবনে ফুলপ্যান্ট মেনে নিয়েছি। তাছাড়া খাঁকি বা বাদামি ফুলপ্যান্ট সর্বত্র পাওয়া যায়, তা-ই এই পোশাকই গ্রহণ করা হল।'
Read full story in English