বিরোধী রাজনীতিবিদরা 'ইন্ডিয়ার রাষ্ট্রপতি'-র পরিবর্তে 'ভারতের রাষ্ট্রপতি' দ্বারা আয়োজিত জি২০ নৈশভোজে উপস্থিত থাকার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণের ছবি পোস্ট করেছেন। যাতে দেশের নামবদল নিয়ে জল্পনা বেড়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১-এ দুটি নামই পরস্পরের বদলে ব্যবহারের চল রয়েছে। যেমন বলা হয়েছে, 'ইন্ডিয়া, অর্থাৎ ভারত, রাজ্যগুলোর একটি সংগঠন হবে।' এছাড়াও, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক, ভারতীয় রেলওয়ের মতো বেশ কয়েকটি নাম ইতিমধ্যেই প্রচলিত। ২০২০ সালের জুনে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধান থেকে 'ইন্ডিয়া' শব্দটি অপসারণের একটি জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দিয়েছিল। আদালত জানিয়েছিল, 'ইন্ডিয়াকে ইতিমধ্যেই সংবিধানে ভারত বলা হয়েছে।'
'ভারত' নামটি কোথা থেকে এসেছে?
ভরত হল কিংবদন্তিতে থাকে প্রাচীন এক রাজার নাম। যিনি ভারতীয়দের ঋগ্বৈদিক গোত্রের পূর্বপুরুষ। ১৯২৭ সালের জানুয়ারিতে তাঁর লেখায় জওহরলাল নেহেরু, 'ভারতের মৌলিক একতার' ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। যা সুদূর অতীত থেকে টিকে আছে। তিনি তাঁর (নির্বাচিত রচনা)-র দ্বিতীয় খণ্ডে লিখেছেন, 'একটি সাধারণ বিশ্বাস এবং সংস্কৃতির ঐক্য ভারত ছিল হিন্দুদের পবিত্র ভূমি। এটি তাৎপর্যপূর্ণ যে হিন্দু তীর্থস্থানগুলো ভারতের চার কোণে অবস্থিত। দক্ষিণে শ্রীলঙ্কা, পশ্চিমে আরব সাগর, পূর্বে বঙ্গোপসাগর ও উত্তরে হিমালয়।'
বিদেশিদের চোখে ভারত
'ভারত' বা 'ভারতবর্ষ' নামের শিকড় পুরাণ সাহিত্যে এবং মহাকাব্য মহাভারতে পাওয়া যায়। পুরাণে ভারতকে, 'দক্ষিণে সমুদ্র এবং উত্তরে তুষার আবাসট'-এর মধ্যবর্তী ভূমি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সমাজ বিজ্ঞানী ক্যাথরিন ক্লেমেন্টিন-ওঝা ভারতকে রাজনৈতিক বা ভৌগোলিক সত্তার পরিবর্তে ধর্মীয় এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সত্তার অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি তাঁর ২০১৪ সালে প্রকাশিত, 'ভারত, এটাই ভারত…': এক দেশ, দুই নাম (দক্ষিণ এশিয়া মাল্টিডিসিপ্লিনারি একাডেমিক জার্নাল)-এ লিখেছেন, 'ভারত বলতে বোঝায় উপমহাদেশীয় এবং উপমহাদেশীয় অঞ্চল, যেখানে ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা বিরাজ করে।'
আরও পড়ুন- Explained: হিন্দু ধর্মই কি ‘সনাতন ধর্ম’, কে ঠিক করে দিল?
'ভারত' এবং 'হিন্দুস্তান'-এর সম্পর্ক কী?
হিন্দুস্তান নামটি 'হিন্দু' থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়। সংস্কৃত 'সিন্ধু' (সিন্ধু) এর ফার্সি পরিচিত রূপ হিন্দু। যেটি সিন্ধু উপত্যকা (উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল) বিজয়ের সঙ্গেই পারসিদের মুদ্রায় এসেছে। সময়টা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী (যা ছিল গাঙ্গেয় অববাহিকায় বুদ্ধের সময়)। সেই সময় পারসিরা নিম্ন সিন্ধু অববাহিকা চিহ্নিত করার জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করেছিল এবং খ্রিস্টীয় যুগের প্রথম শতাব্দী থেকেই, 'হিন্দু'দের ভূখণ্ড বোঝাতে 'স্তান' প্রত্যয়টি ব্যবহার করেছিল। গ্রিকরা আবার পারসিদের থেকে 'হিন্দ' সম্পর্কে জানতে পেরেছিল। তারা এই নামটিকে 'ইন্দুস' বলে বর্ণনা করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে মেসিডোনিয়ান রাজা আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করার সময়, সিন্ধু নদীর ওপারের অঞ্চল 'ভারত' নামে চিহ্নিত হয়েছিল।