এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সোমবার সুপ্রিম কোর্টকে বলেছে যে দিল্লি সরকারের বর্তমানে বাতিল আবগারি নীতি মামলায় তছবিল তছরুপ-কাণ্ডের তদন্তে আম আদমি পার্টি (আপ)-কে তারা অভিযুক্ত করার কথা ভাবছে। কিন্তু, আদৌ একটি রাজনৈতিক দলকে তহবিল তছরুপের ঘটনায় অভিযুক্ত করা যায়? এমনটাই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আবার অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, তহবিল তছরুপ মামলায় কেন ইডি আম আদমি পার্টিকে অভিযুক্ত করার কথা ভাবছে?
কোন আইনে একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করা যেতে পারে?
কঠোর প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং আইনের ৭০ ধারা কোম্পানিগুলির অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই আইনে বলা আছে যে, 'যেখানে কোনও ব্যক্তি এই আইনের কোনও বিধান বা এর অধীনে প্রণীত কোনও বিধি, নির্দেশ বা আদেশ লঙ্ঘন করেন, সেক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তি, যিনি লঙ্ঘন করার সময় দায়িত্বে ছিলেন, কোম্পানির কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন, কোম্পানির পাশাপাশি কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনার জন্য দায়বদ্ধ ছিলেন- আইন লঙ্ঘনের জন্য দোষী বলে গণ্য হবেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সেই অনুযায়ী শাস্তিও দেওয়া হবে।' যদিও একটি রাজনৈতিক দল কোম্পানি আইন, ২০১৩-এর অধীনে অন্তর্ভুক্ত একটি 'কোম্পানি' নয়, কিন্তু আইনটির একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা রয়েছে, যা একটি রাজনৈতিক দলকেও অর্থ পাচার বিরোধী আইনের আওতায় আনতে পারে। এতে লেখা আছে, 'ব্যাখ্যা ১(১).--এই ধারার উদ্দেশ্যে (ধারা ৭০), কোম্পানি মানে যে কোন কর্পোরেট সংস্থা, সংস্থা, ফার্ম বা ব্যক্তিদের বিভিন্ন সমিতিও অন্তর্ভুক্ত।' এরমধ্যে ব্যক্তিদের সমিতি শব্দটি একটি রাজনৈতিক দলকেও বোঝাচ্ছে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা ২৯এ অনুসারে, ভারতের নাগরিকদের যে কোনও স্বতন্ত্র সমিতি বা সংস্থার তালিকায় রাজনৈতিক দলও অন্তর্ভুক্ত।
কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কি কখনও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে?
পিএমএলএ-এর অধীনে আবগারি কেলেঙ্কারিতে যদি আপ-কে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়, তাহলে এটিই হবে প্রথম কোনও রাজনৈতিক দলকে আর্থিক তছরুপের অভিযোগে অভিযুক্ত করার ঘটনা। যাই হোক, রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে আয়কর আইনে মামলা করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়েছে। ট্রাস্ট এবং এনজিওগুলি ইতিমধ্যেই পিএমএলএ-এর আওতায় এসেছে। মে মাসে, অর্থ মন্ত্রক একটি বিজ্ঞপ্তিতে একটি এক্সপ্রেস ট্রাস্টের ট্রাস্টিদেরও পিএমএলএ-এর অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
কীভাবে সিসোদিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আপের সঙ্গে যুক্ত?
ইডি-র প্রধান অভিযোগ হল, আবগারি কেলেঙ্কারিতে অপরাধের আয়ের প্রাপক ছিল আপ। পিএমএলএ-র ধারা ৭০-এর দ্বিতীয় ব্যাখ্যা অনুযায়ী, 'কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা যেতেই পারে। তা সত্ত্বেও যে কোনও অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার উপর নির্ভরশীল হবে।' এর অর্থ হল, সিসোদিয়া এবং অন্যদের বিরুদ্ধে মামলাগুলি খারিজ হলেও অর্থ পাচারের অভিযোগে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে মামলা করা যেতেই পারে। সিসোদিয়াকে ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং আপ-এর যোগাযোগ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজয় নায়ারকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আর, দলের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংকে চলতি মাসের শুরুতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- সমলিঙ্গে বিয়ে! ঠিক কী জানাল আদালত?
কেন ইডি আপকে অভিযুক্ত করছে?
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু, যিনি ইডি-র পক্ষে আদালতে হাজির হয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্টকে বলেছেন যে, আপের বিরুদ্ধে পিএমএলএ-এর অধীনে মামলা করা হতে পারে। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও এসভিএন ভাট্টির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের সামনে দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়ার জামিনের আবেদনের শুনানির সময় এমনটাই জানিয়েছেন রাজু। ৪ অক্টোবরের আগের শুনানিতে বেঞ্চের একটি পর্যবেক্ষণ ছিল যে, ইডির মামলা অনুসারে, অপরাধের আয়ের প্রাপক একটি রাজনৈতিক দল, সিসোদিয়া নয়। বেঞ্চ তখন জানতে চায় কেন দলটিকেও আসামি করা হল না। বিচারপতি খান্না সেই সময়ে বলেছিলেন, 'আপনার পুরো মামলাটি একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে গেছে। সেই রাজনৈতিক দল এখনও আসামি নয়। কীভাবে এর উত্তর দেবেন? তিনি সুবিধাভোগী নন, রাজনৈতিক দল সুবিধাভোগী।'