দূষণ কমাতে মেঘ বানিয়ে বৃষ্টি নামানোর পরিকল্পনা করছে দিল্লির আম আদমি পার্টির সরকার। অতীতে খরাপ্রবণ এলাকায় জলের চাহিদা মেটাতে কৃত্রিমভাবে মেঘ তৈরি করে বৃষ্টি নামানো হয়েছে। এবার সেই একই পদ্ধতি ব্যবহার হতে চলেছে দূষণ কমানোর জন্য। কৃত্রিমভাবে এই মেঘ তৈরির পদ্ধতিকে বলে, 'ক্লাউড সিডিং'।
কীভাবে মেঘ তৈরি হয়
জলীয় বাষ্প বাতাসে ভাসমান ছোট কণার চারপাশে ঘনীভূত হয়। এই ঘনীভূত হওয়ার ফলেই তৈরি হয় ফোঁটা। যা বানিয়ে তোলে মেঘ। ফোঁটাগুলো পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে বড় হয়, তৈরি হয় মেঘ। যখন তা বাতাসের চেয়েও ভারী হয়ে যায়, জলীয় বাষ্পে পরিপূর্ণ মেঘ তখন ঝরে পড়ে। যাকে বলে বৃষ্টি।
কৃত্রিম মেঘ কীভাবে তৈরি হয়
কৃত্রিমভাবে মেঘ তৈরির জন্য সাধারণত সিলভার আয়োডাইড, পটাসিয়াম আয়োডাইড বা সোডিয়াম ক্লোরাইডের মত লবণ ব্যবহার করা হয়। এই সব লবণ অতিরিক্ত নিউক্লিয়াস সংগ্রহ করে। জলীয় বাষ্পহীন মেঘের চারপাশে জলীয় বাষ্পপূর্ণ মেঘের ফোঁটার জন্ম দেয়। বিশেষজ্ঞরা এই ফোঁটাগুলোর নাম দিয়েছেন মেঘের বীজ। মাটিতে জেনারেটরের মাধ্যমে বা বিমান থেকেও লবণগুলো ছড়ানো হয়।
বিশেষজ্ঞ যা বলছেন
আইআইটি কানপুরের অধ্যাপক এবং ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রামের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য সচ্চিদানন্দ ত্রিপাঠী এই প্রসঙ্গে বলেন, 'বীজ মেঘ মাইক্রোফিজিক্যাল প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। যার ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে মেঘের বড় ফোঁটা পাওয়া যায়। মেঘের ঘনীভবনের নিউক্লিয়াস এবং বরফের নিউক্লিয়াস তৈরির জন্য আলাদা লবণ ব্যবহার করা হয়। শীতকালে বীজ মেঘ তৈরির জন্য যে ধরনের মেঘের দরকার তা পাওয়া যায় না। তখন পশ্চিমা ঝঞ্ঝার সাহায্য নেওয়া হয়। মেঘ থাকলেও দেখতে হবে, তার উচ্চতা কত, তরল জলের পরিমাণ কত।' অর্থাৎ, কৃত্রিম মেঘ তৈরিরও শর্ত আছে।
আরও পড়ুন- রাজনৈতিক অনুদান প্রভাবিত করে নির্বাচনের ফলাফলকে, জেনে নিন কী বলছে গবেষণা?
কৃত্রিম মেঘ তৈরির শর্ত
ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব এম রাজীবন বলেন, 'বীজ মেঘ তখনই তৈরি হতে পারে, যদি বায়ুমণ্ডলে পর্যাপ্ত সংখ্যায় মেঘ থাকে। আর, এই মেঘগুলোর একটি নির্দিষ্ট গভীরতা থাকে। অর্থাৎ, ওই মেঘের ভিতরে পর্যাপ্ত সংখ্যক মেঘের ফোঁটা থাকতে হবে। মেঘের ফোঁটাগুলির ব্যাসার্ধ বাড়ানোর জন্য মেঘের বীজ তৈরি করা হয়। যাতে মেঘ বড় হয়। আর, মাধ্যাকর্ষণ (অভিকর্ষ)-এর প্রভাবে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। পরিষ্কার আকাশে কিন্তু, মেঘের বীজ তৈরি করা যায় না।'