দিল্লি পুরনির্বাচনে ২৫০ আসনের মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ ১২৫টিরও বেশি আসনে জিতেছে আম আদমি পার্টি। বুধবার ফল ঘোষণা হয়েছে। আপ জিতেছে ১৩৪ আসনে। গত ১৫ বছর ধরে ২০০৭ থেকে এখানে ক্ষমতায় ছিল আম আদমি পার্টি। তারা জিতেছে ১০৩টি ওয়ার্ডে। ভোটের আগে দুই দলই এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিল। বিজেপির হয়ে প্রচারে স্টার প্রচারকের সংখ্যা ছিল বেশি। বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, একাধিক মুখ্যমন্ত্রী, প্রবীণ নেতারা প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে লাগাতার প্রচার চলেছে দিল্লির বুকে। এর বিপক্ষে আপের ভিত্তি বলতে ছিল ক্ষমতার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ মানুষের ভোট। তাদের আশা একটু বেশি ছিল। ভেবেছিল ২০০-র বেশি আসন পাবে। কিন্তু, সেই আশা পূরণ হয়নি।
শুরুতে এগিয়েছিল বিজেপি
বুধবার সকালে ফলপ্রকাশ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে আপ জিতছে। একইসঙ্গে এটাও স্পষ্ট হয়ে যায় যে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের মত আপ যে ব্যাপক জয়ের আশায় ছিল, তা হচ্ছে না। দিল্লিতে ২০১৫-য় বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে আপ জিতেছে ৬৭টিতে। আর, ২০২০ সালে সেটাই বেড়ে হয়েছে ৬২। এমনকী, বুধবার প্রথম ছয় রাউন্ড গণনা শেষে বহু জায়গায় দেখা গিয়েছে বিজেপি এগিয়ে। গণনা যত এগিয়েছে আপের ঝুলিতে আসনসংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু, তারপরও আশা পূরণ না-হওয়ায় অনেক আপ নেতাই অবাক। তাঁরা বুঝতে পারছেন না, ভুলটা কোথায় হয়েছে।
চাপে ছিলেন কেজরিওয়ালরা
উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া, সাংসদ রাঘব চাধা, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান বুধবার সকালে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারপর দলের আসনসংখ্যা ১২৬ না-পার হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ওই বাড়ি থেকে বেরোননি। বিভিন্ন মহলের ধারণা ছিল, বিজেপি ১০০-র কম আসন পাবে। কিন্তু, দেখা গেল দীর্ঘ ১৫ বছরের প্রশাসন বিরোধিতার আবেগ নির্বাচনে কাজ করলেও বিজেপির আসনসংখ্যা সেঞ্চুরি পেরিয়েছে। শুধু তাই নয়, ভোটের শতাংশও বেড়েছে গেরুয়া শিবিরের। ২০১৭ সালে দিল্লি মিউনিসিপ্যালিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আপ পেয়েছিল ৩৬% ভোট। সেটাই বেড়ে হয়েছে ৩৯%।
কৃতিত্ব পাচ্ছেন মোদী
এভাবে দলের ভোটব্যাংক বৃদ্ধির পিছনে দিল্লির বিজেপি নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন। দিল্লিতে মোদীর জনপ্রিয়তা নির্বাচনে ভালোই প্রভাব ফেলেছে। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির সাতটি আসনের প্রতিটিতেই জয়ী হয়েছে বিজেপি। নির্বাচনে আপের বিরুদ্ধে বিজেপি দুর্নীতিকেই প্রধান ইস্যু বানিয়েছে। জেলবন্দি আপ নেতা সত্যেন্দ্র জৈন বিশেষ সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। সেই ভিডিও প্রকাশ করেছে বিজেপি। এতে আপের বিরুদ্ধে বিজেপির অভিযোগ অনেক বেশি পোক্ত হয়েছে। পাশাপাশি, আবগারি দুর্নীতি নিয়ে আপের বিরুদ্ধে অভিযোগও বিজেপির পালে হাওয়া দিয়েছে। এমনটাই মত ভোট বিশ্লেষকদের একাংশের।
কংগ্রেস এখন সংখ্যালঘু
কংগ্রেস ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দিল্লিতে খুবই খারাপ ফল করেছে। কিন্তু, তারপরও ২০১৭ সালের দিল্লি মিউনিসিপ্যালিটি নির্বাচনে ২১% ভোট পেয়েছিল। ৩০টি আসন জিতেছিল। এবার তাদের বড়জোর ৯ থেকে ১০টি আসন পাওয়ার কথা ছিল। এমনটা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন সমীক্ষকরা। সেই হিসেব মিলে গিয়েছে। যা স্পষ্ট করে দিয়েছে, দেশের রাজধানীতে এখন কংগ্রেস রীতিমতো সংখ্যালঘু। তাছাড়া এই পুরনির্বাচনে তেমন একটা জোরদার প্রচারও করেনি কংগ্রেস। কেবলমাত্র দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা ছাড়া তাদের প্রচারে বড় কোনও নাম যোগ দেয়নি। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ১২% ভোট।
আরও পড়ুন- তিন বছর হয়ে গিয়েছে, কেন মিলল না বাবরির বিকল্প মসজিদ তৈরির অনুমতি?
দলবদলের সম্ভাবনা প্রবল
আসনসংখ্যা ১০০ পেরনোর পর দলের কার্যালয়ে বসে বিজেপি নেতা মনজিন্দর সিং সিরসা বলেন, 'কাজের জন্যই বিজেপি ভোটারদের সমর্থন পেয়েছে। সেভাবেই মেয়র নির্বাচনের জন্য জনগণ বিজেপিকেই ভোট দেবেন। দিল্লিতে মেয়রের আসন বিজেপিই পাবে।' এমনিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কাউন্সিলর যাদের, তারাই মেয়রের আসন পেয়ে থাকে। কিন্তু, পুরনির্বাচনে দলবদল বিরোধী আইন প্রযোজ্য নয়। শেষ মুহূর্তে অনেকেই দল বদলাতে পারেন। তাই বিজেপি যে কোনও সময় মেয়রের আসন দাবি করতে পারে। আর, সেই সম্ভাবনা প্রবল।
ছোট দল জিততে পারেনি
দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের নির্বাচনে ২০১৭ সালে বহুজন সমাজ পার্টি, ভারতীয় জাতীয় লোকদল এবং সমাজবাদী পার্টি আসন পেয়েছিল। পাশাপাশি, চার জন নির্দলও জিতেছিলেন। আপ অথবা কংগ্রেস পেয়েছিল ১১ আসন। এবারের ভোট ছোট দলগুলো একটাও আসন পায়নি। তিন জন নির্দল জিতেছেন। কিন্তু, তাঁরা ভবিষ্যতে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
Read full story in English