সোমবার ইলেকট্রনিক ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রক আরোগ্য সেতু অ্যাপের ব্যাপারে একটি ডেটা শেয়ারিং ও নলেজ শেয়ারিং প্রোটোকল জারি করেছে। এতে সরকার ও তৃতীয় পক্ষের এই ধরনের ডেটা শেয়ারিং বিষয়ে গাইডলাইন বর্ণনা করা হয়েছে। এর আগে পর্যন্ত এই অ্যাপের প্রাইভেসি পলিসি কোনও আইনি সুরক্ষাকবচ ছিল না।
সোমবারের পাশ করা একজিকিউটিভ অর্ডার নিয়ে একাধিক বিশেষজ্ঞ এই অ্যাপের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা এখন বলেছেন এগুলি ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের সহায়তা প্রাপ্ত হওয়া উচিত, এই প্রটোকলের প্রকৃতি যেমন আলগা রাখা হয়েছে তাও উদ্বেগের বিষয়। বর্তমানে ভারতে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল সংসদের অনুমোদনের জন্য আটকে রয়েছে।
সরকার এই গাইডলাইন ইস্যু করল কেন?
তথ্যপ্রযুক্তি সচিব অজয় প্রকাশ সাহনি এই একজিকিউটিভ অর্ডার পাশ করেছেন। তিনি টেকনোলজি ও ডেটা ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত বিশেষ ক্ষমতাসীম গোষ্ঠীর চেয়ারপার্সনও বটে। এই বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন গোষ্ঠী কোভিড ১৯ অতিমারী মোকাবিলার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্র তৈরি করেছে। অর্ডারে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সম্পর্কিত যথাযথ স্বাস্থ্য জনিত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য ব্যক্তির তথ্য অত্যন্ত জরুরি। এখানে ব্যক্তি বলতে যাঁরা সংক্রমিত, বা সংক্রমণের ব্যাপক ঝুঁকিসম্পন্ন, বা যাঁরা সংক্রমিতের নিকট সংস্পর্শে এসেছেন তাঁদের কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন, আরোগ্য সেতু বন্ধনেই মুক্তি না আরও বন্ধন করার জন্যই তৈরি এই মোবাইল অ্যাপলিকেশন?
এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য এবং অ্যাপ থেকে তথ্য সংগ্রহ নিশ্চিত করার জন্যসরকার এই গাইডলাইন ইস্যু করেছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক, ভারত সরকার ও সরকারের অন্যান্য মন্ত্রক এবং বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত এলাকার সরকার সংক্রমিত ব্যক্তি বা যাঁরা ঝুঁকির মুখে রয়েছেন তাঁদের সুরক্ষায় সামাজিক দূরত্ব ও প্রতিষেধমূল পদক্ষেপ নিয়েছেন। সেগুলি যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য ও পরিসংখ্যান প্রয়োজন যা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক ও বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারের সঙ্গে শেয়ার করা হবে।
কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ ও শেয়ার করা হবে?
আরোগ্য সেতু অ্যাপ থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করা হবে তা মূলত চারভাগে ভাগ করা হবে। জনবিন্যাসের তথ্য, সংস্পর্শের তথ্য, নিজের অ্যাসেসমেন্ট তথ্য এবং লোকেশনের তথ্য। এগুলিকে একত্রে রেসপন্স ডেটা বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। জনবিন্যাসের তথ্যের মধ্যে থাকছে নাম, মোবাইল নম্বর, বয়স, লিঙ্গ, পেশা এবং ভ্রমণের ইতিহাস। সংস্পর্শের তথ্য বা কনট্যাক্ট ডেটায় অন্য কোনও ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছেন কিনা, কত সময় জুড়ে সংস্পর্শে এসেছেন, দুই ব্যক্তির সংস্পর্শের ঘনিষ্ঠতায় দূরত্ব কতটা এবং কোন ভৌগোলিক এলাকায় এই সংস্পর্শ ঘটেছে। সেলফ অ্যাসেসমেন্ট ডেটার অর্থ উক্ত ব্যক্তি অ্যাপের মাধ্যমে নিজের সেলফ অ্যাসেসমেন্টে কী কী তথ্য জানিয়েছেন। লোকেশন ডেটায় ওই ব্যক্তির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ দেখা হবে।
এই তথ্য কারা দেখতে পারবেন?
প্রোটোকল অনুসারে রেসপন্স ডেটায় অ্যাপের ডেভেলপার ন্যাশনাল ইনফর্মেটিক্স সেন্টার (NIC), স্বাস্থ্য মন্ত্রক, রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য বিভাগ, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিল কর্তৃপক্ষ, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অন্যান্য মন্ত্রক ও দফতর, এবং কেন্দ্র, রাজ্য ও স্থানীয় সরকারের অন্যান্য জনস্বাস্থ্য বিভাগ, এবং যেখানে এই শেয়ার করা যথাযথ স্বাস্থ্য বিষয়ক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
এই প্রোটোকলে ডেটা তৃতীয় পক্ষের কাছে শেয়ারিংয়ের ব্যাপারেও সুযোগ রাখা হয়েছে- যদি সরাসরি যথাযথ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ব্যবস্থা তৈরি বা লাগু করার কঠোর প্রয়োজন হয়ে, সেক্ষেত্রে। এ ছাড়া গবেষণার প্রয়োজনে রেসপন্স ডেটা ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়, বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ভারতের নথিভুক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাছেও শেয়ার করা যাবে। গাইডলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থাগুলিকে অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে ডেটা শেয়ারের স্বাধীনতাও দেওয়া হয়েছে। যদি তা একই কারণে হয় এ এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়, তাহলে তারা এ কাজ করতে পারবে।
আরও পড়ুন, কোভিড অতিমারীর সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ চিত্র
সুরক্ষা তাহলে কোথায়?
প্রোটোকলে বলা হয়েছে, রেসপন্স ডেটা মন্ত্রক, সরকারি দফতর ও অন্যান্য প্রশাসনিক সংস্থার কাছে এমন ভাবে দেওয়া হবে, যাতে ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা না যায়। অর্থাৎ জনবিন্যাসের তথ্য ছাড়া বাকি সমস্ত তথ্য এমনভাবে দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে কোনও ব্যক্তিকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত না করা যায়, তাঁদের কেবলমাত্র একটি আইডি দেওয়া হবে।
এ ছাড়া NIC একটা পর্যায় পর্যন্ত এ সম্পর্কিত যে কোনও তথ্য শেয়ার করতে পারবে এবং কোন সংস্থার কাছে শেয়ার করা হবে, তার তালিকা রাখবে। এর মধ্যে কোন সময়ে শেয়ার করা শুরু হয়েছে, কোন কোন সংস্থার কাছে শেয়ার করা হয়েছে, কোন বিভাগের তথ্য শেয়ার করা হয়েছে, এবং ডেটা শেয়ারের কারণও নথিভুক্ত রাখতে হবে।
প্রোটোকলে এও বলা হয়েছে যে ডেটা সংগৃহীত হয়েছে তা ১৮০ দিনের বেশি সংরক্ষিত রাখা যাবে না। প্রোটোকলে নিয়ম ভঙ্গের ক্ষেত্রে ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
উদ্বেগের বিষয়গুলি কী?
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাধ্যতামূলকভাবে সকলের ব্যবহারের জন্য এই অ্যাপের বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের পিছনে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন বিষয়ক সিদ্ধান্ত থাকা প্রয়োজন। প্রশান্ত সুগতন নামের এক আইনজীবীর কথায় ওরা আধারের পথে চলেছে। এটা একটা একজিকিউটিভ অর্ডারের মাধ্যমে বলবৎ করা যায় না, বিশেষ করে যেখানে এই অ্যাপে একাধিক ব্যক্তিগত বিষয় রয়েছে।
তিনি বলেন, তৃতীয় পক্ষের কাছে ডেটা শেয়ার করার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের। ওদের উচিত যেসব তৃতীয় পক্ষের কাছে ডেটা শেয়ার করা যাবে তার তালিকা তৈরি করা, কারণ এ ব্যাপারটা খোলা রাখলে অপব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েই যায়। তিনি আরও বলেন এই অচিহ্নিতকরণ পদ্ধতি বিশদে জানানো জরুরি যাতে পাল্টা কোনও পদ্ধতির মাধ্যমে ফের চিহ্নিতকরণ সম্ভব না হয়।
প্রোটোকলে বলা হয়েছে, কোনও গবেষণা সংস্থা বা বিশ্ববিদ্যালয় গোপন রেসপন্স ডেটা কোনওভাবেই পুনর্তিহ্নিতকরাণ করতে পারবে না। যদি কেউ জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে তেমন কিছু করেন, তাহলে তাঁদের ডেটা পাওয়ার অধিকার থাকবে না, এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন