জার্মান ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা সিমেন্স (Siemens) সোমবার জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়াতে আসন্ন খনন প্রকল্পে ভারতের আদানি পাওয়ার সংস্থার সঙ্গে তাদের চুক্তি বহাল রাখছে তারা। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছেন গ্রেটা থুনবার্গ সমেত বহু পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মী।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড প্রদেশে আদানি নির্মিত রেললাইনের জন্য সিগন্যাল ব্যবস্থার সরঞ্জাম সরবরাহ করছে সিমেন্স। খনন প্রকল্প থেকে পাওয়া কয়লা রপ্তানি করা হবে, যার কিছুটা জ্বালানো হবে ভারতেও, জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
শনিবার একটি টুইট করে গ্রেটা লেখেন, "যা মনে হচ্ছে, @SiemensDE-র হাতে ক্ষমতা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় আদানির বিশাল কয়লাখনির নির্মাণ বন্ধ করার, বা বিলম্বিত করার, বা অন্তত তাতে বাধা দেওয়ার। সোমবার তারা তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। দয়া করে তাদের সঠিক সিদ্ধান্তের পথে ঠেলতে সাহায্য করুন। #StopAdani"
অস্ট্রেলিয়ায় আদানির এই খনন প্রকল্প কী?
কুইন্সল্যান্ডের গ্যালিলি বেসিনে কারমাইকেল কয়লাখনি এবং কারমাইকেল রেলরোড প্রকল্প নির্মাণ করছে আদানি। এই কয়লা-খনন প্রকল্প হতে চলেছে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম, এবং দুনিয়ার বৃহত্তম কয়লা-খনন প্রকল্পগুলির একটি। মধ্য কুইন্সল্যান্ডের ক্লেরমন্ট থেকে ১৬০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে এই এলাকাকে ক্যাপ্রিকরনিয়াও বলা হয়।
১৬.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা) মূল্যের এই প্রকল্প থেকে বছরে ৮-১০ মিলিয়ন (৮০-১০০ লক্ষ) টন থার্মাল কয়লা উৎপাদন হবে। গত বছর এই খনি নির্মাণের অনুমতি দেয় অস্ট্রেলিয়ার সরকার।
প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গ কিমি আয়তনের গ্যালিলি বেসিন পৃথিবীর বৃহত্তম অব্যবহৃত কয়লার ভাণ্ডারগুলির একটি। পশ্চিম চিনকে বাদ দিলে গ্যালিলি বেসিনই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জীবাশ্ম জ্বালানির (ফসিল ফুয়েল) ভাণ্ডার।
বাওয়েন শহরের কাছে অ্যাবট পয়েন্ট বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে আদানিদের খনি। এই বন্দর গত তিন দশক ধরে পরিচালনা করছে আদানি। এই সংযোগের মাধ্যম হবে কারমাইকেল রেল প্রকল্প, যার ভারবাহী ক্ষমতা হবে বছরে ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) টন, বলছে আদানি সংস্থার ওয়েবসাইট। তিন-ডিজেল লোকোমোটিভ ট্রেনের ২২০টি ওয়াগনে একেকবারে বোঝাই হবে ২৩,৭৬০ টন কয়লা, এবং খনি থেকে বন্দর যাওয়া আসা করতে সময় লাগবে এক দিন।
আদানি এই খনির আয়ু ৬০ বছর ধার্য করেছে।
কারমাইকেল প্রকল্পের বিরোধিতা
কুইন্সল্যান্ড প্রকল্পের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে প্রতিবাদের মুখে পড়েছে আদানি, এবং অনেক জায়গাতেই চলেছে 'আদানি গো ব্যাক' প্রচার। বিরোধীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে বিশ্ব উষ্ণায়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এই প্রকল্প, এবং ক্ষতি করবে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিখ্যাত প্রবাল প্রাচীর 'গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ'-এরও।
উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের উপকূলবর্তী এই প্রবাল প্রাচীর তৈরি হয়েছে হাজার হাজার ছোট প্রবাল প্রাচীর দিয়ে, যার সামগ্রিক দৈর্ঘ্য প্রায় ২,৩০০ কিমি। এই সামুদ্রিক জীবমণ্ডলে পাওয়া যায় অন্তত ৬০০ প্রজাতির প্রবাল, যা সামুদ্রিক প্রাণীদের স্বর্গ বলা যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে গণ্য করা হয় এই প্রবাল প্রাচীরকে।
পাশাপাশি বিশ্বের কার্বন উৎপাদনকারী দেশের তালিকার ওপরদিকেই রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, মূলত তাদের কয়লা-নির্ভর বিদ্যুৎ কারখানার কল্যাণে। পরিবেশবিদরা বলছেন, কয়লার ব্যবহার অব্যাহত থাকলে আরও বাড়বে 'গ্রিনহাউজ গ্যাস'-এর উৎপাদন।
এবছর বিধ্বংসী দাবানলের সাক্ষী থেকেছে অস্ট্রেলিয়া, যা শুরু হয় অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক আগে থেকেই। এই দাবানলে প্রাণ হারিয়েছেন ২৮ জন মানুষ, ছারখার হয়ে গিয়েছে ১.৫ কোটি একর জমি, এবং বিনষ্ট হয়েছে ১০০ কোটি জীবজন্তু। বিজ্ঞানীদের মতে, আবহাওয়া পরিবর্তনের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে এই দাবানলের পেছনে।