ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) রবিবার (৮ অক্টোবর) ঘোষণা করেছে যে মহাকাশযান আদিত্য এল-১ কৌশলগত গতিপথ পরিবর্তন করেছে। এই মহাকাশযান সূর্যের আর্থ ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১-এর কাছে তার গন্তব্যে পৌঁছবে। আদিত্য এল-১ মহাকাশের মধ্য দিয়ে ১১০ দিনের যাত্রা শুরু করেছে। যা ২০১৩-১৪ মঙ্গল অভিযানের পর থেকে ভারতীয় মহাকাশযানের দীর্ঘতম পথে অভিযান।
ইসরো বিজ্ঞানীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ১৭ দিন ধরে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার পর মহাকাশযানটি ১৯ সেপ্টেম্বর এল-১ পয়েন্টের দিকে যাত্রা শুরু করার পরেই আদিত্য এল-১ এর জন্য একটি টিসিএম প্রয়োজন হবে । চাঁদের ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে চন্দ্র অভিযানের জন্য প্রায় তিন সপ্তাহ সময় লাগে। ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১ (১.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্ব) অতিক্রম করতে প্রায় চার মাস সময় লাগবে। মঙ্গল গ্রহে মহাকাশ অভিযান ২২৫ মিলিয়ন কিমি দূরত্ব অতিক্রম করতে প্রায় ১১ মাস সময় লাগবে।
মহাকাশে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করার জন্য কক্ষপথ নির্ধারণের গণনা ব্যবহার করে গতিপথ সংশোধনের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। তার মাধ্যমেই মহাকাশযানটি তার গন্তব্যের পথে নিশ্চিন্তে যাত্রা করতে পারে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর- এই সময়ের মধ্যে ইসরো দ্বারা গৃহীত মঙ্গল অরবিটার মিশনের জন্য তিনটি টিসিএম-এর প্রয়োজন হয়েছিল।
গতিপথ সংশোধন কৌশল কী?
আদিত্য এল-১ মহাকাশযানকে এল-১ বিন্দুর চারপাশে একটি কক্ষপথে প্রবেশ করানো হবে। এজন্য, মহাকাশযানটিকে একটি পরিকল্পিত পথে ভ্রমণ করতে হবে। ১৯ সেপ্টেম্বর ট্রান্স ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১-এর কাছে যাওয়ার পর বিজ্ঞানীরা মনে করেছেন যে গতিপথের ত্রুটি থাকতে পারে, যা সংশোধনের প্রয়োজন হবে। প্রাক্তন ইসরো বিজ্ঞানী এম আন্নাদুরাই বলেন, 'এই ধরণের কৌশলের জন্য অভিযানে একটি বিধান রয়েছে, যাকে কৌশল বদল বলে। এটি চন্দ্রযান ১ (২০০৮) অভিযানের সময়ই গৃহীত পরিকল্পনার অংশ। প্রতিটি কক্ষপথে পৌঁছনোর জন্য উত্থাপন কৌশল নেওয়া হয়। কক্ষপথটি কেমন, তা বুঝে নিয়ে এই কৌশল গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে যদি কিছু করার হয়, তা তাড়াতাড়ি করতে হয়।' বিজ্ঞানী এম আন্নাদুরাই, চন্দ্রযান ১ এবং মঙ্গল অভিযানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
তিনি জানান, চাঁদের মতই কাছাকাছি গন্তব্যের ক্ষেত্রে, গতিপথ সংশোধন করতে হবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে, এবং দীর্ঘ গন্তব্যের জন্য, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। তিনি বলেন, 'আদিত্য এল-১ দীর্ঘ যাত্রা করেছে। যদি শুরুতে সামান্য বিচ্যুতি হয়, তাহলে একমাস বা তিন মাসের মধ্যে এর প্রভাব পড়তে পারে।' গতিপথ সংশোধনের মধ্যে রয়েছে স্বল্প সময়ের জন্য মহাকাশযানে ইঞ্জিন চালানো, যার ফলে জ্বালানি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। বৃহত্তর সংশোধনের জন্য ইঞ্জিন দীর্ঘক্ষণ চালানোর দরকার হয়। আন্নাদুরাই বলেন, 'আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে যে ঠিক কতটা সংশোধনের প্রয়োজন। এটা অনেকটা লক্ষ্য পূরণের জন্য মূল্যায়ন করার মত ব্যাপার।'
'আদিত্য এল-১' কে 'এল-১' বিন্দুর চারপাশে যে কক্ষপথে পৌঁছতে হবে
এই মহাকাশযান ২০২৪ সালের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে এল-১ পয়েন্টে পৌঁছবে, আদিত্য-এল-১ প্রদক্ষিণ করবে এল-১ বিন্দুর চারপাশে। এটি পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যে একটি সুষম মহাকর্ষীয় অবস্থানে রয়েছে। মহাকাশযানটি এই অভিযানে, 'পৃথিবী এবং সূর্যের সঙ্গে মিলিত রেখায় মোটামুটি লম্বভাবে কক্ষপথে এল-১ এর চারপাশে প্রদক্ষিণ করবে।' এল-১ এর চারপাশের কক্ষপথে এই ঘোরার জন্য মহাকাশ যানের কিছু গতিপথ সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। বিজ্ঞানী এম আন্নাদুরাই বলেন, 'এটি একটি গ্রহের চারপাশে থাকা কক্ষপথের মত নয়। এই কক্ষপথের তিনটি মাত্রা রয়েছে।'
অতীতে ইসরো কখনও টিসিএম চালিয়েছে?
এই কৌশল শুধুমাত্র গভীর মহাকাশ অভিযানে দরকার। মার্স অরবিটার মিশন তিনটি টিসিএম দেখেছে। লাল গ্রহ থেকে ৫০০ কিলোমিটার (কমবেশি ৬০ কিলোমিটার) দূরত্বে পৌঁছানোর জন্য সঠিক গতিপথ নিশ্চিত করতে এই কৌশলগুলি নেওয়া হয়েছিল। ইসরো বিজ্ঞানীরা সেই সময়ে বলেছিলেন, 'যদি সংশোধনমূলক কৌশল না-নেওয়া হত, তবে মহাকাশযানটি ৭২৩ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে যেত।'