দর্শন হিরানন্দানি হলেন হিরানন্দানি গ্রুপের সিইও। তিনি লোকসভার এথিক্স কমিটির কাছে একটি (শপথ করা হলফনামা) অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। যাতে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং আরও কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তিনি গুচ্ছেক অভিযোগ করেছেন। মৈত্র অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা হিরানন্দানির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি পালটা অভিযোগ করেছেন যে হিরানন্দানিকে এসব বলতে বাধ্য করা হয়েছে। আর, আইনজীবী শার্দুল শ্রফ এবং পল্লবী শ্রফ, যাঁদের বিরুদ্ধে হিরানন্দানি অভিযোগ করেছেন যে তাঁরা মহুয়া মৈত্রকে যাচাই না-করা সমস্ত তথ্য সরবরাহ করছেন, তাঁরা পালটা অভিযোগ করেছেন যে, হিরানন্দানির বিবৃতি কোনও 'শপথ কমিশনার' যাচাই করেননি।
শপথ করা হলফনামা কী?
কর্নেল ল স্কুলের পাবলিক-সার্ভিস অলাভজনক আইনি তথ্য ইনস্টিটিউট অনুযায়ী, একটি হলফনামা হল, 'কোনও ব্যক্তি আদালতের বাইরে কোনও নোটারি বা আদালতের অফিসারের সামনে একটি শপথমূলক বিবৃতি দিচ্ছেন, যা নিশ্চিত করে, তিনি যে তথ্য দিচ্ছেন, সেটা সেই ব্যক্তির সর্বোত্তম জ্ঞানের জন্য সত্য।' ভারতের সাধারণ আইন, ১৮৯৭-এর ধারা ৩ (৩) অনুযায়ী একটি 'হলফনামা'কে 'আইন দ্বারা শপথ বা শপথের পরিবর্তে ঘোষণা করার অনুমতি দেওয়া, ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা এবং ঘোষণা করা' হিসেবে সংজ্ঞায়িত করো হয়েছে। ছোটন প্রসাদ সিং বনাম হরি দুসাধ মামলায় ১৯৭৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ রায়ে বলেছিল, 'একটি হলফনামার অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হল যে এটি শপথগ্রহণ নিশ্চিত করা বা শপথ গ্রহণ করানোর ক্ষমতা থাকা ব্যক্তির সামনেই তৈরি করা উচিত।'
যে কোনও সময়, যে কেউ কি এফিডেভিট করতে পারে?
ছোটন প্রসাদ সিং মামলায় আদালত শপথ আইন, ১৯৬৯-এর ধারা ৪-এ এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সব আদালত এবং অনুমোদিত ব্যক্তি প্রমাণপত্রের ভিত্তিতে কারও হলফনামা অনুমোদন করতে পারবেন। যাঁরা হলফনামা দাখিল করছেন, তাঁরা যদি উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে না-পারেন, তবে হলফনামাগুলো গ্রাহ্য হবে না। আইনি প্রক্রিয়া বা বিচারের সময় নিয়মিতভাবে হলফনামা তৈরি করা হয়। আবার, কারও সম্পত্তি নথিভুক্ত করা, অথবা একজনকে আইনি উত্তরাধিকারী ঘোষণা করার ক্ষেত্রেও হলফনামার প্রয়োজন হয়।
আরও পড়ুন- মহুয়া মৈত্র ও বিজেপি, গোড়া থেকেই কি আদা-কাঁচকলার সম্পর্ক?
একটি 'অনুমোদনকারী হলফনামা' কী?
আইনি ভাষায়, একজন 'অনুমোদনকারী' হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট বা গোপনীয়ভাবে বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। একটি মামলার একজন সহযোগী বা অভিযুক্ত পরে অনুমোদনকারীও হতে পারে। কম সাজা বা ক্ষমার বিনিময়ে তিনি সরকারপক্ষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। রাজসাক্ষী হতে পারেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এই সুযোগ পাওয়ার যোগ্য। তবে, মহুয়া মৈত্র যা বলেছেন, সেই 'অনুমোদনকারী হলফনামা' বলে আইনি পরিভাষায় কিছু নেই।