তাঁর নেতৃত্বাধীন রাশিয়ার অপ্রতিরোধ্য থাকার মিথ ইউক্রেনের লড়াইয়ে আগেই ভেঙে গিয়েছিল। খোদ রাশিয়াতেই তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয়েছে। তারপরও রুশ নাগরিকদের সমর্থন যে তাঁর সঙ্গেই আছে, সেটা বোঝাতে চেষ্টার কসুর করছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কখনও তিনি দাগেস্তানে সমর্থকদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। শিশুকে কোলে নিয়ে আদর করছেন। কখনও আবার শিশুদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলাচ্ছেন। কখনও বা, নৌবাহিনীর কুচকাওয়াজের পর নৌকর্মীদের দিকে হাত নাড়িয়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন। যা দেখে অনেক রুশ নাগরিকই প্রশ্ন তুলছেন, এই পুতিনই কি সেই পুতিন? কারণ, করোনা অতিমারির সময় রুশ নাগরিকরা যখন চরম বিপাকে, তখন একবারের জন্যও সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ দেখাননি রুশ প্রেসিডেন্ট। কখনও আবার সফরকালে রাশিয়ায় আসা বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের পাশে না-বসে, তাঁদের বিশাল টেবিলের অপর প্রান্তে বসতে বাধ্য করেছেন। এমনকী, তাঁকে একবারের জন্য দেখতে আসা লোকজনের সামনে আসার জন্য দু'সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। সেই পুতিনই এখন যেন অনেক সহজ, সরল এবং খোলামেলা।
কোভিড-১৯ নিয়ে যখন সর্বত্র ভয়, সেই সময় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় রাজনীতিবিদরা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। এই সময়টায় জনগণের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের একটা বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছিল। সেই বিচ্ছিন্নতা পুতিনের ক্ষেত্রেও কাজ করেছে। কিন্তু, এরপর রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করলে, পুতিনের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব বেড়েছে। উলটোদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি প্রচারের আলোয় এসেছেন বারবর। ভিড়ে ভরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জেলেনস্কি গিয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালের কক্ষগুলো তিনি নিয়মিত পরিদর্শন করেছেন। পালটা, পুতিনের সঙ্গে জনগণের মেলামেশা ছিল যেন অনেক নিয়ন্ত্রিত। জেলেনস্কিকে টেক্কা দিতে পুতিনও জনগণের ভিড়ে ভরা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। জনতার সঙ্গে মেলামেশা করেছেন। তবে, সেই ভিড় যেন অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত ছিল। ওয়াগনার বেসরকারি বাহিনীর বিদ্রোহের পরে অবশ্য চিত্রটা বদলাতে শুরু করে। পুতিন আরও বেশি করে জনগণের কাছে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অতীতে বারবার দেখা গিয়েছে, পুতিন জনপ্রিয়তার রাজনীতির সমালোচনা করছেন। মার্কিন রাজনীতিবিদদের প্রচারকে কটাক্ষ করছেন। শিশুকে কোনও রাজনীতিবিদ চুম্বন করলে তাকে তুচ্ছ বিষয় অথবা অশ্লীল ঘটনা বলে বসছেন। কিন্তু ভাড়াটে টাইকুন ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের ২৪ জুনের বিদ্রোহের পর সেসব আচরণ কুলুঙ্গিতে যেন তুলে দিয়েছেন পুতিন।
আরও পড়ুন- উদারতাবাদ থেকে সীমাবদ্ধতার পথে, কীভাবে বৃত্ত সম্পূর্ণ করল মোদী সরকারের কৃষি আইন?
প্রিগোজিনের অভ্যুত্থানের কয়েকদিন পরে, পুতিন রাশিয়ার দক্ষিণ দাগেস্তান অঞ্চলের একটি শহর ডারবেন্টে ভ্রমণ করেছেন। জনতার সামনে হাজির হয়ে চিৎকার করে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন যে তিনি আনন্দিত। পুতিনের এমন আচরণ রাশিয়া শেষ কবে দেখেছিল, মনে করতে পারবে না। তাঁর মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ পরে জানান যে পুতিনকে তাঁর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জনতার খুব একটা ঘনিষ্ঠ হতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু, পুতিন সেই পরামর্শ উপেক্ষা করেই জনতার ভিড়ে মিশেছিলেন। কিন্তু, রুশ প্রেসিডেন্ট কিছুতেই জনতাকে উপেক্ষা করতে পারেননি। তাঁদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের একজন সিনিয়র ফেলো তাতিয়ানা স্ট্যানোভায়াও বলেছেন যে, ভিড়ের সঙ্গে মেলামেশার সিদ্ধান্তটি বলতে গেলে পুতিন ব্যক্তিগত পছন্দের কারণেই নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি রাশিয়ার অভিজাতদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন যে দেশের জনসাধারণের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা অসীম।