ভারতের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক সংস্থা ভারতীয় জীবন বিমা নিগম বা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (LIC)। তাদের সম্পদ বা তাদের ভাণ্ডারে জনগণের ৪০ লক্ষ কোটি টাকা রয়েছে। শেয়ার বাজারে তারা নেমে পড়েছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী। আটঘাঁট বেঁধে। ২১ হাজার কোটির টাকার শেয়ার তারা বাজারে ছেড়েছে। যাকে আইপিও বা ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং বলে, আগামী মাসের শুরুতে এলআইসি-র এই শেয়ারবাজারে যাত্রা শুরু হচ্ছে।
কী করে এলআইসির আইপিও-র দাম নির্ধারিত হয়
বুধবার এলআইসি আইপিও-র দাম নির্ধারণ করেছে। এর আকার কমানো হলেও, ক্যাপিটাল মার্কেটের ইতিহাসে এটাই কিন্তু সর্ববৃহৎ। প্রতি শেয়ারের দাম ৯০২ থেকে ৯৪৯ টাকা নির্ধারিত। পলিসি হোল্ডার যাঁরা তাঁদের ক্ষেত্রে ৬০ টাকা ছাড় রয়েছে, রিটেল ইনভেস্টার এবং কর্মীদের ক্ষেত্রে ৪৫ টাকা ছাড় রয়েছে। আইপিও মে-র ৪ তারিখ থেকে খুলবে, বন্ধ হবে মে-র ৯ তারিখ। সরকার ২২.১৩ কোটি শেয়ার এর মাধ্যমে বিক্রি করবে। অ্যাঙ্কর বুক খুলবে মে-র ২ তারিখ কিন্তু রিটেল ইনভেস্টারদের জন্য তা খুলবে দু’দিন পর। বিনিয়োগকারীরা ১৫টি শেয়ারের গুণিতকে বিড বা নিলামের দর হাঁকতে পারবেন। আইপিও আকার কমেছে অনেকটাই। ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে, এটা হয়েছে রাশিয়ার ইউক্রেন হামলা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভারতের বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে ধুম পড়েছে, তার জেরে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ডিসেম্বরের শুরু থেকে ১ লক্ষ ৪৮ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের শেয়ার বেচে দিয়েছেন।
বিনিয়োগকারীরা কী ভাবছেন
একজন প্রথম সারির ফান্ড ম্যানেজারের কথায়, এলআইসি-র অর্থনৈতিক জোর রীতিমতো। ভ্যালুয়েশন কমানোর ফলে এই আইপিও আরও আকর্ষণীয় হয়েছে। গত বছর যেমন ছিল তেমন বাজারের ঊর্ধ্বমুখী দৌড় চলছে না এখন। এমন হতে পারে যে, এখনই বিনিয়োগকারীরা বড় লাভ পাবেন না, কিন্তু তিন চার বছরের মধ্যে ভদ্রস্থ রিটার্ন তাঁরা পেতে পারেন।
এলআইসি কতটা বড়
১৯৫৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর এলআইসি-র গঠন। ২৪৫টি বেসরকারি জীবন বিমা সংস্থাকে সংযুক্ত এবং জাতীয়করণের মাধ্যমে এটি তৈরি করা হয়। শুরুর মূলধন ছিল ৫ কোটি টাকা। এখন এর সম্পত্তির পরিমাণ ৪০ লক্ষ কোটি টাকা। এটি পৃথিবীর পঞ্চম জীবন বিমা সংস্থা। এবং এ দেশে এটিই সবচেয়ে বড়। ২০২১-এর ৩১ ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী এ দেশের ৯১ শতাংশ জেলায় এলআইসি-র প্রবেশ ঘটে গিয়েছে। এবং এর এজেন্টসংখ্যা ১০ লক্ষ ৩৩ হাজার। এক জনের পলিসি করার ক্ষেত্রে এর বাজারের ৭১.৮ শতাংশ জুড়ে রয়েছে। গ্রুপ পলিসিতে এর বাজার ৮৮.৮ শতাংশ।
শেয়ার বাজারে পা দিয়ে কী সুবিধা
এলআইসি-র মুনাফা এর ফলে বাড়বে। বিনিয়োগকারীরা শেয়ারে বিনিয়োগ করে ব্যবসা করতে পারবেন, অথবা নিজেদের কাছে দীর্ঘ সময়ের জন্য রেখে দিতে পারবেন এর শেয়ার। এলআইসিকে আরও বেশি স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। কোনও ভুল পদক্ষেপের জন্য এবার থেকে বিনিয়োগকারীদের জবাবদিহি করতে হবে তাদের।
Read story in English