এ সপ্তাহে দিল্লি হাইকোর্ট পুরুষ ও মহিলাদের জন্য বিবাহযোগ্য বয়স এক হওয়ার একটি মামলা হাতে নিয়েছে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিএন প্যাটেল এবং বিচারপতি সি হরি শংকর কেন্দ্র ও ভারতের আইন কমিশনের কাছে এক নোটিস পাঠিয়ে এ ব্যাপারে তাদের মত জানতে চেয়েছে। বিয়ের বয়সের মাপকাঠি ছেলে ও মেয়েদের জন্য একই রকম করতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন বিজেপির মুখপাত্র তথা আইনজীবী অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায়।
বর্তমান আইন অনুসারে ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ ও মেয়েদের ১৮। বিয়ের ন্যূনতম বয়স ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রে আলাদা হলেও প্রাপ্তবয়স্কতার ক্ষেত্রে সে মাপকাঠি লিঙ্গ নিরপেক্ষ। ১৮৭৫সালের ভারতীয় প্রাপ্তবয়স্কতা আইনানুসারে ১৮ বছর বয়স হলে একজন ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হন।
ন্যূনতম বয়স কেন
বাল্যবিবাহ রোধ করতে এবং নাবালক-নাবালিকাদের হেনস্থা আটকাতে এই আইন স্থির করা হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মের ব্যক্তিগত আইনে তাদের নিজেদের মত করে প্রথানুসারে মাপকাঠি স্থির করে নেয়।
হিন্দুদের জন্য ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইনের ধারা ৫ (৩)-এ বলা হয়েছে মেয়েদের জন্য বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ ও ছেলেদের জন্য ২১। এ ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ না হলেও নাবালিকার অনুরোধে বিবাহ বাতিল করে দেওয়া হতে পারে।
ইসলাম ব্যক্তিগত আইনানুসারে নাবালক বা নাবালিকা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছলে বিয়ে বৈধ বলে স্বীকৃত।
১৯৫৪ সালের বিশেষ বিবাহ আইন এবং ২০০৬ সালের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনে মেয়েদের ১৮ বছরের নিচে এবং ছেলেদের ২১ বছরের নিচে বিয়ে বেআইনি বলে গণ্য।
আইন কীভাবে তৈরি হল
১৮৬০ সালে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে ১০ বছরের নিচে কোনও মেয়ের সঙ্গে যৌনসংসর্গ বেআইনি। ১৯২৭ সালের সম্মতির বয়স সংক্রান্ত বিল অনুসারে ১২ বছরের নিচের মেয়েদের বিয়ে নিষিদ্ধ হয়। এই আইনের বিরোধিতা করেন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু রক্ষণশীল নেতারা। এঁদের মধ্যে ছিলেন বাল গঙ্গাধর তিলক ও মদন মোহন মালব্যরা। এঁরা এ বিষয়টিকে হিন্দু প্রথায় ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখেছলেন।
১৯২৯ সালে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনে মেয়েদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর বলে ধার্য করে হয়। এই আইনটি সারদা আইন নামে পরিচিত। হরবিলাস সারদা এর উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বিচারক ও আর্য সমাজের সদস্য। ১৯৭৮ সালে সারদা আইন সংশোধিত হয় এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ের ন্যূনতম বয়স ধার্য হয় ১৮ ও ২১
দুই লিঙ্গ, দুই বয়স
ছেলে ও মেয়েদেরর ভিন্ন বিয়ের বয়স নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। ২০১৮ সালে পরিবার আইন নিয়ে এক আলোচনাপত্রে আইন কমিশন বলেছিল ছেলে ও মেয়েদের যে আলাদা বয়স স্থির হয়ে রয়েছে, তার পিছনে রয়েছে একটি স্টিরিওটাইপ ভাবনা, যে ভাবনায় স্ত্রী-র বয়স স্বামীর থেকে কম হতে হয়।
নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা বলেন, এই আইনের স্টিরিওটাইপ হল, মেয়েরা একই বয়সের ছেলেদের থেকে বেশি পরিণত ফলে তাদের দ্রুত বিয়ে দেওয়া চলে। আন্তর্জাতিক সংস্থা সিইডিএডবলিউ বলেছে, মেয়েদের শারীরিক বা বৌদ্ধিক বিকাশ ছেলেদের থেকে বেশি হয়, এই ভাবনা থেকে তৈরি হওয়া আইন নিষিদ্ধ হওয়া উচিত।
আইন কমিশনের আলোচনাপত্রে বলা হয়েছে, দুই লিঙ্গেরই বিয়ের বয়স ১৮ করা উচিত।
আদালতে আইনকে চ্যালেঞ্জ
দিল্লি হাইকোর্টে আবেদনকারী অশ্বিনী উপাধ্যায় এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করেছেন বৈষম্যমূলক বলে। তাঁর অভিযোগ, সংবিধানের ১৪ ও ২১ নং অনুচ্ছেদে সমতার অধিকার ও সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপনের অধিকারের কথা বলা রয়েছে। ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রে আলাদা বিয়ের বয়স সে অধিকারকে অস্বীকার করে।
এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের দুটি নির্দেশ তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে।
২০১৪ সালে জাতীয় আইন পরিষেবা কর্তৃপক্ষ বনাম ভারত সরকার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রূপান্তরকামীদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে বলে, সব মানুষ সমমূল্যের, ফলে তাঁদের সঙ্গে সমব্যবহার করতে হবে, সম আইনের মাধ্যমে।
২০১৯ সালে জোসেফ শাইন বনাম ভারত সরকার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ব্যাভিচার সম্পর্কিত রায়ে বলে, যে আইন মহিলাদের ভিন্ন চোখে দেখে, তা মহিলাদের মর্যাদার পক্ষে অসম্মানজনক।
এ মামলায় দিল্লি হাইকোর্টে পরবর্তী শুনানি ৩০ অক্টোবর।
Read the Full Story in English