জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া এবং আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি বাড়াবাড়ি নিয়ে আবেদন শোনবার সময়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস নিয়ে নিজের অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা রাস্তার দখল নিতে পারে, কিন্তু তেমনটা করলে আদালত আর তাদের কথা শুনবে না।
সম্পত্তি ধ্বংস, দাঙ্গা হাঙ্গামা, লুঠতরাজের বিরুদ্ধে আইন থাকা সত্ত্বেও দেশ জুড়ে এ ধরনের ঘটনা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
আইনে কী বলা হয়েছে
১৯৮৪ সালের সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস প্রতিষেধক আইনে এ ধরনের অপরাধীগের পাঁচ বছরের জেল অথবা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে। এই আইনের সঙ্গে ভারতীয় দণ্ডবিধির অন্য আইন সংযোগ করা যেতে পারে।
যেসব বাড়ি বা অন্য কোনও সম্পত্তি, যেখানে জল, বিদ্যুৎ বা শক্তি উৎপাদন বা পরিবেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়, কোনও তৈলক্ষেত্রে, কোনও ময়লা নির্বাহী নালা, কোনও খনি বা কারখানা, গণপরিবহণ বা টেলি যোগাযোগের কোনও পদ্ধতি, অথবা এসবের সঙ্গে যুক্ত কোনও বাড়ি বা সম্পত্তি এই আইনের আওতায় সরকারি সম্পত্তি বলে গণ্য।
তবে সুপ্রিম কোর্ট এর আগে এই আইন যথেষ্ট নয় বলে বর্ণনা করে বিভিন্ন নির্দেশিকার মাধ্যমে শূন্যগুলি পূরণ করবার চেষ্টা করেছে।
২০০৭ সালে আদালত আন্দোলন, বনধ, হরতাল ইত্যাদির নামে বিপুল পরিমাণ সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির ধ্বংসের প্রচুর উদাহরণের ঘটনার জেরে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দুটি কমিটি গঠন করে। একটি কমিটির শীর্ষে ছিলেন শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন বিচারপতি কেটি টমাস এবং অন্যটির শীর্ষে ছিলেন প্রবীণ আইনজীবী ফলি নরিম্যান। এই কমিটিগুলির দায়িত্ব ছিল আইনের পরিবর্তন সম্পর্কে সুপারিশ করা।
২০০৯ সালে এক মামলায় দুই বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অনুসারে সুপ্রিম কোর্ট গাইডলাইন জারি করে।
সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছিল
টমাস কমিটির সুপারিশ মেনে আদালত বলে কোনও সংগঠনের ডাকে আন্দোলনের ফলে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে তা প্রমাণ করতে হবে অভিযোগকারীদের, এবং এই আন্দোলনে যে অভিযু্ক্তরা সরাসরি যুক্ত ছিল সে কথাও প্রমাণ করতে হবে অভিযোগকারীকেই।
এই পর্যায় থেকেই নিজেক নির্দোষ প্রমাণের দায় অভিযুক্তের উপর থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। যৌন হিংসার ক্ষেত্রেও এই প্রমাণের দায়বদ্ধতার বিষয়টি অনুরূপ।
নরিম্যান কমিটির সুপারিশের বিষয় ছিল ধ্বংসের উদ্দেশ্যে ক্ষয়ক্ষতি। তাদের সুপারিশ গ্রহণ করে আদালত বলেছিল হাঙ্গামাকারীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নেওয়া হবে।
সুপ্রিম কোর্ট একইসঙ্গে হাইকোর্টগুলিকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য নির্দেশিকা জারি করেছিল, এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য এবং ক্ষতিপূরণ সংগ্রহের বিষয়ে কমিটি তৈরি করতে বলেছিল।
নির্দেশিকার প্রভাব
আইনের মতই, নির্দেশিকার প্রভাবও সীমিতই। তার কারণ বিক্ষোভকারীদের চিহ্নিত করা মুশকিল, বিশেষ করে সেই সব বিক্ষোভে যেখানে কোনও নির্দিষ্ট নেতা এই বিক্ষোভের ডাক দেন না।
২০১৫ সালের পতিদার আন্দোলনের সাপেক্ষে, প্রাণ ও সম্পত্তিহানিকার হিংসাত্মক আন্দোলনের জেরে হার্দিক প্যাটেলের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। তবে সুপ্রিম কোর্টে হার্দিকের আইনজীবীরা বলেন, যেহেতু হিংসার ডাক হার্দিক নিজে দিয়েছেন তার কোনও প্রমাণ নেই, ফলে সম্পত্তিহানির ব্যাপারে তাঁকে দায়ী করা চলে না।
২০১৭ সালে এক আবেদনকারী আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বলেন, আন্দোলনের জেরে তাঁকে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় রাস্তায় কাটাতে হয়েছে। তিনি ২০০৯ সালের নির্দেশিকা লাগু করার আবেদন করেন। কোশি জেকব বনাম ভারত সরকার মামলায় আদালত পের বলে আইন আপডেট করা দরকার- কিন্তু যেহেতু বিক্ষোভের আহ্বায়করা কেউ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না, সে কারণে আবেদনকারীকে কোনও রকম ক্ষতিপূরণ দেবার নির্দেশ আদালত দেয়নি।