সরকার দ্বিতীয়বারের জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার বিলগ্নিকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর আগেরবার ২০১৮ সালে এরকম চেষ্টা হয়েছিল। সেবার কোনও সাড়াই পাওয়া যায়নি। গতবার বিলগ্নি পরিকল্পনা অনুসারে কেন্দ্র প্রাথমিকভাবে জানতে চেয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস এবং এয়ার ইন্ডিয়া- স্যাটস -এর অংশীদারি কেনার ব্যাপারে কাদের আগ্রহ রয়েছে। সরকার তাদের অফারের ব্যাপারে কিছু বদল ঘটিয়েছে
এয়ার ইন্ডিয়া: ১০০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি
অতীব তাৎপর্যপূর্ণভাবে সরকার এবার এয়ার ইন্ডিয়ার ১০০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে চাইছে, আগের বার তা ছিল ৭৬ শতাংশ। পরিদর্শকদের মতে সরকারের ন্যূনতম অংশীদারিত্বও সম্ভাব্য ক্রেতাদের নিরুৎসাহ করে দেয়। যদিও সরকারি সূত্র বলছে, তাদের ২৪ শতাংশ শেয়ার রাখার পিছনে যে ভাবনা ছিল, তা হল বাকি ৭৬ শতাংশ বিক্রি করলেই বিমান কোম্পানিতে সরকারের শেয়ারমূল্য বাড়বে, যা তারা পরে কোন এক সময়ে বিক্রি করে দেবে।
এয়ার ইন্ডিয়ার ঋণ পরিস্থিতি
এখন যদি কেউ এয়ার ইন্ডিয়া কিনতে যায়, তাহলে তাকে এয়ার ইন্ডিয়ার মোট ৬০,০৭৪ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ২৩,২৮৬ কোটি টাকার ঋণের দায়িত্ব নিতে হবে। আগের বার যে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তাতে সম্ভাব্য ক্রেতাকে ৩৩,৩৯২ কোটি টাকার ঋণ ও বর্তমান দায় নেবার কথা ছিল। ওয়ার্কিং ক্যপিটাল ও অন্য এয়ারক্র্যাফট বহির্ভূত ঋণ সরকারই বহন করবে।
এয়ার ইন্ডিয়ার সম্পত্তি
নতুন মালিক এয়ার ইন্ডিয়ার ১২১টি বিমান ও এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ২৫টি বিমান পাবেন। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৪৭-৪০০ জাম্বোজেটের হিসেব ধরা নেই। এগুলি যাবে অ্যালায়েন্স এয়ারের কাছে, যা বর্তমান লেনদেনের মধ্যে ধরা নেই। তবে শেষবারের মতই এয়ার ইন্ডিয়া সম্প্রতি যে সম্পত্তি ব্যবহার করছে, সেই নরিম্যান পয়েন্ট বিল্ডিং ও নয়া দিল্লির কনট প্লেসে সংস্থার সদর দফতর সরকার নিজের কাছেই রাখবে।
নতুন লগ্নিকারীরা কী পাবেন?
এয়ার ইন্ডিয়া অধিগ্রহণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল দিল্লি, মুম্বই, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, প্যারিসের মত বিমানবন্দরে বিমান অবতরণের অধিকার। যে বিমান সংস্থা নিজেদের পরিসর আন্তর্জাতিক স্তরে বৃদ্ধি করতে চাইছে, এবং যারা একদম শুরু থেকে শুরু করতে চাইছে, উভয়ের পক্ষেই এ ব্যাপারটা কাজের হবে।
এয়ার ইন্ডিয়া এখন ৫৬টি ভারতীয় শহরে এবং ৪২টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে কাজ করে। এয়ার ইন্ডিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ও ডোমেস্টিক রুটের মধ্যে বেশ কয়েকটি লাভদায়ক, এবং কোনও কোনওটিতে লোকসানও হয়। নতুন প্রোমোটারদের এই দুটি উত্তরাধিকারই বহন করতে হবে।
এ ছাড়া, এয়ারলাইনের ১২১টি বিমান থাকলেও এর মধ্যে ১৮টি বসে রয়েছে।
নয়া লগ্নিকারী AI-SATS-এরও অধিকারী হবেন। এরা প্যাসেঞ্জার ও ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং, বিমানের অন্দর সাফাই, লোড নিয়ন্ত্রণ এবং বিমান অপারেশন, কার্গো হ্যান্ডলিং পরিষেবা, এক্সপ্রেস কুরিয়ার এবং বেঙ্গালুরু, দিল্লি, হায়দরাবাদ, মেঙ্গালুরু ও তিরুবনন্তপুরম বিমানবন্দরে স্পেশাল কার্গো নিয়ন্ত্রণ করে। এরা সহায়ক পরিষেবাদায়ক সংস্থা হিসেবে কাজ করবে।
উপভোক্তা ও কর্মচারীদের উপর কী প্রভাব পড়বে?
উপভোক্তা: এয়ার ইন্ডিয়া যদি ও যখন কোনও বেসরকারি সংস্থা বা কনসোর্টিয়াম অধিগ্রহণ করে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্রথম বিষয়ই হবে এয়ারলাইনকে লাভজনক করার দিকে এগোনো। এর জন্য এয়ার ইন্ডিয়াকে হয়ত বেশ কিছু অন্তর্দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চালানো বন্ধ করে দিতে হবে।
কর্মচারী: এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মচারীর সংখ্যার কারণেই গত বার লগ্নি প্রচেষ্টা থেকে মুখ ফিরিয়েছিলেন সম্ভাব্য লগ্নিকারীরা। এয়ারলাইনের মোট কর্মচারীর সংখ্যা ১৭,৯৮৪। এর মধ্যে ৯৬১৭ জন স্থায়ী কর্মচারী। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৩৬ শতাংশ স্থায়ী কর্মচারী আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অবসর গ্রহণ করবেন। তবে এয়ার ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর অশ্বিনী লোহানি সোমবার জানিয়েছেন এয়ারলাইনের কোনও অতিরিক্ত কর্মচারী ছিল না। নতুন লগ্নিকারী পুরনো কর্মচারীদের রাখবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। আশা করা হচ্ছে এ ব্যাপারে সরকার আরও খোলসা করবে।
তাহলে কি শেষ পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রি হবে?
এয়ারলাইন বেসরকারিকরণের প্রবল রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা সত্ত্বেও সরকারের মধ্যে থেকেই বিরোধিতা উঠেছে। বিজেপি নেতা সুব্রমনিয়ান স্বামী সোমবার টুইট করে বলেছেন, এটা পুরো দেশদ্রোহী ব্যাপার, আমি এর বিরুদ্ধে আদালতে যাব। আমরা আমাদের পরিবারের মেডেল বিক্রি করতে পারি না।
কর্মচারী ইউনিয়নও এই বিক্রির বিরোধিতা করেছে। সরকার ইউনিয়ানের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে, তাদের কথা শুনেছে।
বিশ্বের আর্থ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপরেও নির্ভর করছে যে দেশি বা বিদেশি কোনও লগ্নিকারীরা এই লোকসানে চলা এয়ারলাইন কিনতে আগ্রহী হন কি না। কোনও কোনও সংস্থা এই এয়ারলাইনের বিভিন্ন অংশ কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয় বারের প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হলে এই দেশীয় সংস্থাকে টুকরো টুকরে করে বেচা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না সরকারের কাছে।