বাড়ির ভেতরের বায়ুদূষণ ক্রমশ হয়ে উঠছে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (সিভিডি) অথবা হার্টের ও শিরা-উপশিরার রােগের অন্যতম প্রধান কারণগুলির একটি। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা রিপোর্টে জানা গেছে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সিভিডি-র কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে গৃহের অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ। নিম্ন আয়ের দেশে (যাদের মধ্যে রয়েছে ভারত) সিভিডির সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে প্রকাশ্যে এসেছে হাইপার-টেনশন, যার পরেই তালিকায় রয়েছে অতিরিক্ত নন-এইচডিএল কোলেস্টেরল এবং বাড়ির ভেতরের বায়ুদূষণ।
উপরোক্ত রিপোর্টটি প্রস্পেক্টিভ আরবান অ্যান্ড রুরাল এপিডেমিওলজিক (PURE) পরিচালিত এক সমীক্ষার দুটি রিপোর্টের মধ্যে একটি, যা মঙ্গলবার অনলাইন প্রকাশিত হয় সুবিখ্যাত 'দ্য লান্সেট' ম্যাগাজিনে, এবং পেশ করা হয় ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিওলজি ২০১৯-এ। একটি রিপোর্টের বিষয়বস্তু হলো সাধারণ রোগ, হাসপাতালে ভর্তি প্রক্রিয়া, এবং মৃত্যু; অন্য রিপোর্টটি বিশ্বের ২১ টি দেশে মধ্যবয়স্কদের মধ্যে সিভিডি-র ঝুঁকি সংক্রান্ত।
ভারতে এই রিপোর্টের তাৎপর্য কী
সিভিডি সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরির আগে জানুয়ারি ২০০৫ এবং ডিসেম্বর ২০১৬-র মধ্যে নথিভুক্ত করা হয় ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৭২২ জন অংশগ্রহণকারীকে। এঁদের মধ্যে ছিলেন ভারত সমেত পাঁচটি নিম্ন আয়ের দেশের ৩৫ হাজার ৭৯৩ জন নাগরিক।
ভারতে সিভিডি-র ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, তামাক সেবন, ব্যায়ামের অভাব এবং অপুষ্টির চেয়েও উদ্বেগের কারণ হলো বাড়ির ভেতরের বায়ুদূষণ। ২০১৪ সালে প্রকাশিত PURE-এর একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, এই ২১ টি দেশের নাগরিকদের মধ্যে সর্বনিম্ন ফুসফুসের ক্রিয়া (lung function) ভারতীয়দেরই।
ভারতে অন্তত ৬৫ শতাংশ বাড়িতে রান্নার জন্য এবং তাপের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয় বায়োমাস ফুয়েল বা জৈব জ্বালানি। শহর অঞ্চলে মশার ধূপ, সাধারণ ধূপকাঠি, এবং আগরবাতি ব্যবহারের ফলে আরও বেড়ে যায় বাড়ির বায়ুদূষণ।
মাদ্রাস ডায়াবেটিস রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর তথা এই সমীক্ষার প্রণেতাদের একজন হলেন ডাঃ ভি মোহন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি জানিয়েছেন, নিম্ন আয়ের দেশে বাড়ির বায়ুদূষণ সামগ্রিকভাবে এবং সিভিডি-তেও মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে। "এই সমীক্ষা আসলে আমাদের কাছে একটা সুযোগের মত...কারন বাড়ির মধ্যে বায়ুদূষণ যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে মৃত্যুর হার হয়তো অনেকটাই কমাতে পারব আমরা," বলছেন তিনি।
চেস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ডাঃ সন্দীপ সালভি বায়ুদূষণ রোধে গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্য। তাঁর বক্তব্য, এই সমীক্ষাটি প্রথমবার আমাদের সচেতন করে দিয়েছে যে বাড়ির অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ কীভাবে ভারতে হৃদরোগ এবং মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাঁর কথায়, "এতদিন আমাদের নজর ছিল মূলত বাইরের পরিবেশের দিকে, যেমন রাস্তায় যানবাহন বা কলকারখানা থেকে উৎপন্ন দূষণ। এখন সময় এসেছে এটা ভাবার, যে আমরা আমাদের বাড়ির মধ্যে যে দূষণের সৃষ্টি করি তারও প্রচুর কুপ্রভাব পড়ছে আমাদের ওপর।"
সিভিডি এবং ক্যান্সার
দুটি রিপোর্টের অন্যটিতে ২১ টি দেশের ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৫৩৪ জন মধ্যবয়স্ক মানুষকে দীর্ঘদিন পরীক্ষা করে দেখেছে যে বিশ্বজুড়ে মধ্যবয়স্কদের মধ্যে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এখনও সিভিডি, কিন্তু উচ্চ আয়ের দেশগুলিতে এখন আর তা ঘটছে না, যেহেতু সিভিডি-র প্রায় দ্বিগুণ মৃত্যু ঘটছে ক্যান্সারে। ২০১৭ সালে আনুমানিক ৫৫ মিলিয়ন মৃত্যু ঘটে পৃথিবীতে, যার মধ্যে ১৭.৭ মিলিয়ন মৃত্যুর কারণ ছিল সিভিডি। ডাঃ মোহনের মতে, উচ্চ আয়ের দেশগুলিতে আরও বেশিদিন বাঁচছেন মানুষ, যার ফলে সিভিডি জনিত মৃত্যু কমে গিয়ে বেড়েছে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার।