ভারতের চন্দ্রযান-৩ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪-এ চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করে ইতিহাস রচনা করেছে। ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশে 'আলতোভাবে অবতরণ' করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বে ভারতই একমাত্র দেশ, যার মহাকাশযান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণে সক্ষম হল। এবার, ল্যান্ডার বিক্রম থেকে রোভার প্রজ্ঞান বেরিয়ে আসবে। এই রোভার একটি ছোট যান। তা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ঘুরে বেড়াবে। আর, বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে।
চাঁদে একদিন থাকবে
পৃথিবীর ১৪ দিন চাঁদের এক চন্দ্রদিবস। এই ১৪ দিন চাঁদের পৃষ্ঠে থাকবে চন্দ্রযান। ২৩ আগস্ট দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে, কারণ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এদিনই চন্দ্রদিবস শুরু হয়েছে। সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে চলছে এই রোভার। রাত হলেই সেই অঞ্চলে চাঁদের তাপমাত্রা কমে ২৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে পর্যন্ত চলে যেতে পারে। সেটা সহ্য করতে পারবে না চন্দ্রযান। সেই জন্য অভিযান ১৪ দিনের রাখা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ অবতরণের সময় ব্যর্থ হয়।
চন্দ্রযান-৩
মহাকাশযানে বেশ কিছু যন্ত্র আছে, যাকে পেলোড বলা হয়। তা মহাকাশে কী ঘটছে তা পর্যবেক্ষণ এবং রেকর্ড করবে। বিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ এবং অধ্যয়নের জন্য এই তথ্যগুলো চাঁদ থেকে ইসরোর দফতরে এসে পৌঁছবে। ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞানের ছয়টি পেলোড আগের চন্দ্র অভিযানের মতোই রয়েছে। চন্দ্রের ভূমিকম্প, চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপীয় বৈশিষ্ট্য, পৃষ্ঠভূমির প্লাজমাতে পরিবর্তন, পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে দূরত্ব সঠিকভাবে পরিমাপ করতে সাহায্য করার জন্য ল্যান্ডারে চারটি বৈজ্ঞানিক পেলোড আছে। রোভারে আছে দুটি পেলোড, যা চন্দ্রপৃষ্ঠের রাসায়নিক এবং খনিজ গঠন অধ্যয়নে সাহায্য করবে। চাঁদের মাটি এবং শিলায় যে ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম এবং লোহার মত উপাদান আছে, সেগুলোর গঠন এবং নকশা নির্ধারণ করবে।
আরও পড়ুন- চন্দ্রযানের সাফল্যে প্রতিক্রিয়া ‘ব্রিকস’-এও, মহাকাশ গবেষণায় মঞ্চ গড়ার ডাক প্রধানমন্ত্রীর
যা জানায় জোর দেবে
চন্দ্রযানের আলফা পার্টিকেল এক্স রে স্পেকটোমিটার এবং লেজার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ চাঁদের ভূমির নীচে লুকিয়ে থাকা সম্পদ সম্পর্কে ধারণা দেবে। চাঁদে জীবন সহায়ক বায়ুমণ্ডল আছে কি না, তা খুঁজে দেখবে। তারার আলোয় চাঁদে যে পরিবর্তন হয়, তা পরীক্ষা করবে। চাঁদে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা চালাবে। চন্দ্রযানের রম্ভা এবং ল্যাংমুইর প্রোব বা এলপি যন্ত্র চন্দ্রপৃষ্ঠের ভূমির প্লাজমা পরীক্ষা করবে। যাতে চাঁদের ভূবৈচিত্র্য ও গঠনতন্ত্র স্পষ্ট হবে। ভবিষ্যতের চন্দ্রাভিযানে নিরাপত্তা বাড়বে। চাঁদে তাপমাত্রার তারতম্যের প্রতিক্রিয়া বা থার্মো-ফিজিক্যাল প্রতিক্রিয়াও খতিয়ে দেখবে। সঙ্গে লেজার রেট্রোরেফ্লেক্টর অ্যারে চাঁদ এবং পৃথিবীর মধ্যে রিয়েল-টাইম দূরত্ব পরিমাপ করবে। চাঁদের কক্ষপথের আচরণ এবং পৃথিবীতে তার প্রভাব জানাবে। যা থেকে জোয়ার-ভাটা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী আরও নিখুঁতভাবে করা সম্ভব হবে। সমুদ্রের স্রোত এবং উপকূলীয় পরিবেশ বোঝাও সহজ হবে। শুধু তাই নয় এই অভিযান চাঁদের বিবর্তনের ইতিহাস বিজ্ঞানীদের কাছে আরও স্পষ্ট করবে। যা থেকে পৃথিবীর বিবর্তনের ইতিহাসও আরও স্পষ্ট বুঝতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।