ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে, এক শতাব্দী আগে ইজরায়েলের হাইফা যুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাদের শ্রদ্ধা জানাতে নয়াদিল্লির কেন্দ্রস্থলে তিনমূর্তি চকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। চকটির নামকরণ করা হয়, 'তিনমূর্তি হাইফা চক'। এটির তিনটি মূর্তি- যোধপুর, মহীশূর এবং হায়দ্রাবাদের ল্যান্সারদের বীরত্বের স্মৃতিচারণ করে। যাঁরা ইম্পেরিয়াল সার্ভিস ক্যাভালরি ব্রিগেডের অংশ ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সিনাই ও প্যালেস্তাইনের অভিযানে নিজেদের বীরত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন।
হাইফা, গাজার আগে
হাইফার দশ মাস আগে, ল্যান্সার এবং গুর্খা রাইফেলম্যানরা আরেকটি যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। হাইফার দক্ষিণে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলরেখায় লড়াই চলেছিল। ১৯১৭ সালের নভেম্বরে গাজার তৃতীয় যুদ্ধ প্যালেস্তাইন অভিযানের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সেই যুদ্ধে ভারতীয়রা জার্মান জেনারেল ক্রেস ফন ক্রেসেনস্টাইনের নেতৃত্বাধীন অটোমান সাম্রাজ্যের বাহিনীর সঙ্গে এবং এরিখ ফন ফালকেনহেনের নেতৃত্বাধীন ইলদিরিম আর্মি গ্রুপের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। এরিখ ফন ফালকেনহেন সেই সময় প্রাশিয়ার যুদ্ধমন্ত্রী এবং জার্মান জেনারেল স্টাফের প্রধান ছিলেন। এই অটোমান ইউনিটে জার্মান এশিয়া বাহিনীও ছিল। ইম্পেরিয়াল সার্ভিস ক্যাভালরি ব্রিগেড গাজার মধ্যে দিয়ে কেটে গাজা স্ট্রিপের উত্তর-পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত অগ্রসর হয়। ব্যাপক কৌশল এবং লড়াই চালালেও অটোমান বাহিনী পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিল।
২০ লক্ষের পট্টি
ভারতীয়রা গাজা স্ট্রিপকে গাজা পট্টি বলে। ইজরায়েল এবং মিশরের মধ্যে একখণ্ড জমি এই গাজাপট্টি। এর পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর। মাত্র ৩৬৫ বর্গকিমি আয়তনের এই অঞ্চলে ২০ লক্ষেরও বেশি প্যালেস্তিনীয় বসবাস করেন। যা, গ্রহের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি। গাজা স্ট্রিপ এবং পশ্চিম তির বা ওয়েস্ট ব্যাংক মিলে প্যালেস্তাইন রাজ্য। ভারত ১৯৮৮ সালে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশগুলোর মধ্যে একটি। আট বছর পরে, ভারত গাজায় একটি অফিস খোলে। যা, ২০০৩ সালে রামাল্লা শহরে স্থানান্তরিত হয়। এই রামাল্লাই হল পশ্চিম তীর এবং প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের প্রকৃত রাজধানী। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নয়াদিল্লিতে নেতানিয়াহুকে আতিথ্য জানানোর একমাস পরে, মোদী প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি প্যালেস্তাইন সফর করেন। সেখানে তাঁকে রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস অভ্যর্থনা জানান। রামাল্লায় ইয়াসির আরাফাতের সমাধিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
আরও পড়ুন- শুধুই হামাস, আর কারা চালায় প্যালেস্তাইন? জেনে নিন বিস্তারিত
পুতুল রাষ্ট্র
ভয়ংকর যুদ্ধে অটোমানদের পরাজয়ের পর ১৯১৮ সালে গাজা ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। ব্রিটিশ শাসনের শেষে ১৯৪৮ সালে আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের পর গাজা মিশরের হাতে চলে যায়। একটি নামমাত্র প্যালেস্তাইন সরকার মিশরের পুতুল হিসেবে কাজ করছিল। কিন্তু, ১৯৫৯ সালে সেই ভান করাও শেষ হয়ে যায়। গামাল আবদেল নাসেরের নেতৃত্বাধীন কায়রোর সামরিক শাসকরা গাজা স্ট্রিপের নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নেয়। ১৯৬৭ সালের জুনে, আরব রাষ্ট্রগুলির একটি জোট হুমকি দিলে, ইজরায়েল মিশরীয় বিমানঘাঁটি এবং সামরিক ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে পূর্বনির্ধারিত বিমান হামলা শুরু করে। ইজরায়েলের স্থলসেনারা গাজা উপত্যকা এবং সিনাই উপদ্বীপকে মিশরীয়দের থেকে দখল করে নিয়েছিল। পূর্ব জেরুজালেম-সহ ওয়েস্ট ব্যাংক বা পশ্চিম তীর জর্ডানিয়ানদের থেকে এবং গোলান হাইটস সিরিয়ানদের থেকে দখল করে নিয়েছিল। ছয় দিনের সেই যুদ্ধ ইজরায়েলের বিজয়ের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।