রবিবার মুম্বইয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অস্তিত্বের জন্য দায়ী ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। অমিত শাহের যুক্তি, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করবার পর অসময়ে নেহরু পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার জেরেই কাশ্মীরের এক অংশ পাক অধিকারে রয়ে গিয়েছে। অমিত শাহ বলেছেন, সংবিধানের ৩৫ নং অনুচ্ছেদের বদলে রাষ্ট্রসংঘের সনদের ৫১ নং অনুচ্ছেদের আওতায় বিষয়টি রাষ্ট্রসংঘে নিয়ে যেতেন, তাহলে ফলাফল অন্যরকম হত।
যুদ্ধবিরতি
যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মধ্যস্থতা করেছিল রাষ্ট্রসংঘের এক মিশন। রাষ্ট্রসংঘের নথি অনুসারে, ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি ভারত সরকার নিরাপত্তা পরিষদে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিস্তারিত জানিয়ে বলে, "সাহায্যের সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান বাসিন্দা এবং সংশ্লিষ্ট উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের জনজাতির লোকের পাকিস্তান থেকে জম্মু কাশ্মীরে চলে আসছে অপারেশন চালানোর জন্য।" জম্মু কাশ্মীর যে ভারতের অংশ সে দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়েছিল, "ভারত সরকার মনে করছে পাকিস্তানকে সাহায্য করা অর্থ ভারতের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে সহায়তা করা... ভারত সরকার উদ্বেগ সহকারে সনদের ৩৫ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে নিরাপত্তা পরিষদের কাছে বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।"
আরও পড়ুন, জম্মু কাশ্মীরের যে অংশগুলি পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে
১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারি পাকিস্তান বিষয়টি অস্বীকার করে এবং বলে, "৩৫ নং অনুচ্ছেদের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা পাকিস্তানের উপর ভারতের প্রত্যক্ষ আক্রমণ।" ওই একই অনুচ্ছেদের আওতায় নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পাকিস্তান। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যাহতকারী হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করা হয়। ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান "মুসলিম গণহত্যা", "দুদেশের মধ্যেকার চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থতা", "বেআইনিভাবে জুনাগড় দখল" এবং "জম্মুকাশ্মীরে ভারতের পদক্ষেপের ব্যাপারে" অভিযোগ করে।
৩৫ নং অনুচ্ছেদ
রাষ্ট্রসংঘের সনদের ৬ নং পরিচ্ছেদের অনুচ্ছেদ ৩৩ থেকে অনুচ্ছেদ ৩৮-এর শিরোনাম "সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান"। "বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে যদি এমন সমস্যা সৃষ্টি হয় যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক এবং তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সে সমস্যা মিটিয়ে নিতে অপারগ, বা কোনও আঞ্চলিক সংস্থাও বিষয়টি মেটাতে পারছে না, তখন নিরাপত্তা পরিষদ কোনও পক্ষের আমন্ত্রণে বা আমন্ত্রণ ব্যাতিরেকেও পদক্ষেপ করতে পারে এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বা পদ্ধতি বা উপায় বাতলাতে পারে"। বিশেষত ৩৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "রাষ্ট্রসংঘের যে কোনও সদস্য যে কোনও বিতর্কিত বিষয় নিরাপত্তা পরিষদ বা সাধারণ অধিবেশনে উত্থাপন করতে পারে।"
৫১ নং অনুচ্ছেদ
৭ নং অনুচ্ছেদের শিরোনাম "শান্তির পক্ষে বিপজ্জনক, শান্তিভঙ্গ এবং আক্রমণের ঘটনায় পদক্ষেপ"। এই পরিচ্ছেদে ধরে নেওয়া হয় যে নিরাপত্তা পরিষদ পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই দখলে রেখেছে।
আরও পড়ুন, ফের বালাকোট চালু: দেখে নিন পাকিস্তানের জঙ্গি ক্যাম্পের ইতিহাস ভূগোল
৫১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "রাষ্ট্রসংঘের সদস্যমাত্রেরই আক্রান্ত হলে ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত ভাবে আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে"। ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার চেষ্টা করে যাবে। বলা হয়েছে, "অধিকার রক্ষার এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সদস্যকে নিরাপত্তা পরিষদে তাৎক্ষণিক ভাবে জানাতে হবে। কালবিলম্ব না করে আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষা বা ফিরিয়ে আনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বর্তমান সনদের আওতায় কোনওভাবেই নিরাপত্তা পরিষদের কর্তৃত্ব ও দায়িত্বকে প্রভাবিত করবে না।"
ফলাফল
ইউনাইটেড নেশনস মিশন তৈরির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল ২০ জানুয়ারি। রাষ্ট্রসংঘ ৩৪ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে "পরিস্থিতি অনুসন্ধানের জন্য এই মিশন তৈরি করে যাদের উপর যে কোনও ধরনের মধ্যস্থতার প্রভাব তৈরি করতে বলা হয়... যাতে সমস্যা দূর হয়"।
বিষয়টির শিরোনামও বদলে দেয় নিরাপত্তা পরিষদ, "জম্মু কাশ্মীর প্রশ্ন" থেকে তা পরিবর্তিত হয় ভারত-পাক প্রশ্নে। পাঁচ সদস্যের ওই মিশনের সদস্যদের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের তরফ থেকে নির্বাচিত দুই সদস্যও ছিলেন। ওই মিশন ১ জানুয়ারি, ১৯৪৯ থেকে শত্রুতা বন্ধ করার ব্যাপারে সক্ষম হয় এবং ১৯৪৯ সালের ২৭ জুলাই থেকে সংঘর্ষবিরতি রেখাও ঘোষিত হয়। সে সময়ে জম্মু কাশ্মীরের এক অংশ পাকিস্তানের দিকে রয়ে যায়। ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তিতে সংঘর্ষবিরতি রেখাকে নিয়ন্ত্রণরেখা বলে চিহ্নিত করা হয়।
Read the Full Story in English