আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতার মার্কিন কমিশন (USCIRF) সোমবার বলেছে যদি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদ পাশ হয়ে যায়, তাহলে ওয়াশিংটনের উচিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত।
এক বিবৃতিতে USCIRF বলেছে লোকসভায় ক্যাব পাশ হয়ে যাওয়ায় তারা অতীব চিন্তিত। এই বিলে ধর্মীয় মানদণ্ড রাখবার বিষয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বলা হয়েছে, সংসদের দুই কক্ষেই যদি ক্যাব পাশ হয়ে যায়, তাহলে মার্কিন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্য মুখ্য নেতাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবার কথা ভাবনা চিন্তা করা উচিত।
পড়ুন, কোথায় কোথায়, কেন লাগু হবে না ক্যাব?
USCIRF কারা?
নিজেদের ওয়েবসাইটে USCIRF বলেছে তারা স্বাধীন এবং দ্বিদলীয় মার্কিন ফেডারেল সরকারের কমিশন। আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন (IRFA) দ্বারা এই সংগঠনের সৃষ্টি বলে জানান হয়েছে ওয়েবসাইটে।
IRFA কী?
১৯৯৮ সালের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন পাশ হয় ১০৫ তম মার্কিন কংগ্রেসে। ১৯৯৮ সালের ২৭ অক্টোবর এ বিলে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন। এটি বিদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন নিয়ে মার্কিন আশঙ্কা প্রকাশ করে একটি বিবৃতি।
আইনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে ধর্মের কারণে মানুষের উপর যে অত্যাচার হয় তার সাপেক্ষে, বিদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ব্যাপারে মার্কিন প্রতিক্রিয়াকে প্রাধিকার দিতে এই আইন। এই আইনের বলে একজন রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতার একটি কমিশন এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের আওতায় আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক এক বিশেষ উপদেষ্টা থাকবেন।
পড়ুন, বিশ্লেষণ: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) কী, এ নিয়ে এত বিতর্কই বা কেন?
USCIRF কী করে?
USCIRF-এর কাজ বিদেশে সার্বজনীন ধর্মীয় স্বাধীনতার দেখভাল করা। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখবার জন্য এবং সে উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি অফ স্টেট এবং কংগ্রেসকে প্রস্তাব দেওয়া এই সংস্থার দায়িত্ব।
USCIRF কমিশনারকে নিয়োগ করেন প্রেসিডেন্ট এবং দুই রাজনৈতিক দলের কংগ্রেসের নেতারা। স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে এর যোগ না থাকলেও ওই বিভাগের যিনি IRFA-র রাষ্ট্রদূত তিনিই USCIRF-এর কমিশনার হন। তবে তাঁর ভোটাধিকার থাকে না।
USCIRF-এর মূল কাজ:
* প্রতি বছর মে মাসে একটি রিপোর্ট জমা দিতে হয়। মার্কিন সরকারের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন খতিয়ে দেখে এই রিপোর্ট দেওয়া হয়। ধর্মীয় স্বাধীনতা যেসব দেশে খর্ব হচ্ছে সেসব দেশগুলিকে চিহ্নিত করতে হয় ওই রিপোর্টে। ৩০টি দেশের পরিস্থিতি, গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতার কথা জানানো এবং মার্কিন নীতির প্রস্তাবও ওই রিপোর্টের অন্তর্ভুক্ত থাকে।
* মার্কিন কংগ্রেসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, আইন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ে বক্তব্য রাখা USCIRF-এর কাজ।
* হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, তথ্যের আদানপ্রদান, উদ্বেগের বিষয়গুলি তুলে ধরা এবং মার্কিন নীতি প্রসঙ্গে USCIRF-এর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করাও এই সংস্থার দায়িত্ব।
USCIRF কীভাবে বিদেশে ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতার বিষয়টি নির্ধারণ করে?
ওয়েবসাইটে কমিশন বলেছে, ”আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তিতে ধর্মীয় স্বাধীনতা অতীব গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার বলে স্বীকৃত... ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতা চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত, এবং এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মতপ্রকাশের, মেলামেশার ও সংঘবদ্ধ হবার স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতায় উৎসাহদান মার্কিন বিদেশনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।”
লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হবার পর এক বিবৃতিতে ব্যাপক উদ্বেগ ও নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাবের দিকে লক্ষ্য রেখে USCIRF বলেছে, ”এই বিল নির্দিষ্টভাবে মুসলিম বাদ দিয়ে অন্য ধর্মাবলম্বী অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেবার রাস্তা তৈরি করে দিচ্ছে, যার মাধ্যমে ধর্মের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়ার পথ তৈরি হচ্ছে।”
ক্যাব সম্পর্কে তাদের বক্তব্য, ”এটি ভুল পথে বিপজ্জনক এক বাঁক, ভারতের দীর্ঘদিনের ধর্মনিরপেক্ষ বহুত্ববাদ এবং ভারতীয় সংবিধান- যা বিশ্বাসের ঊর্ধ্বে আইনকে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে, তার উল্টো পথের যাত্রী। আসামে যে এনআরসি প্রক্রিয়া চলছে এবং যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সারা দেশে লাগু করতে চাইছেন, USCIRF-এর আশঙ্কা তার মাধ্যমে ভারত সরকার ভারতীয় নাগরিকত্বকে ধর্মীয় পরীক্ষার মুখে ফেলবে এবং তার ফলে লক্ষ লক্ষ মুসলিম নাগরিকত্ব হারাবেন।”