সামনেই কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচন, ২০২৩। তার আগে, 'আমুল বনাম নন্দিনী' বিতর্ক দক্ষিণের এই রাজ্যে তুমুল আলোড়ন তৈরি করেছে। বিরোধী নেতৃত্ব এবং কন্নড়পন্থী দলগুলো বেঙ্গালুরুতে আমুলকে তাজা দুধ এবং দই বিক্রি করার অনুমতি দেওয়ায় কর্ণাটকের বিজেপি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, তাজা দুধের বাজারে আমুলের প্রবেশ কর্ণাটকের স্থানীয় ব্র্যান্ড নন্দিনীর বিকাশে সমস্যা তৈরি করবে। আর, এই নিয়েই বিতর্ক। কারণ, নন্দিনী ব্র্যান্ড কর্ণাটকের দুগ্ধবাজারের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
কর্ণাটকে আমুল-নন্দিনী বিতর্ক
এই বিতর্কের সূত্রপাত ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। সেই সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মান্ডার এক জনসভায় সমবায়-ভিত্তিক দুগ্ধ কোম্পানি, আমুল ও নন্দিনির মধ্যে 'সহযোগিতা' গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। যার বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিল বিরোধী দলগুলো। তাদের অভিযোগ ছিল যে, কর্ণাটকের বিজেপি সরকার নন্দিনীকে আমুলের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যা কর্ণাটক মিল্ক ফেডারেশনের ব্র্যান্ডের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমানে বিতর্কের কারণ
অতি সম্প্রতি, রাজ্যে ফের এই বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ৫ এপ্রিল আমুল তাজা দুধ এবং দই চালু করে বেঙ্গালুরুতে তাজা দুধের বাজারে তাদের প্রবেশের কথা ঘোষণা করে। কংগ্রেস, জেডিএস এবং কন্নড়পন্থী বিরোধী দলগুলোর মধ্যে যা তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করে। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় '#GoBackAmul', '#SaveNandini, প্রচারাভিযান শুরু করেছে। তারপর গ্রীষ্মের সময় নন্দিনীর দুধের উৎপাদন কমে যাওয়ায়, বিরোধী দলগুলি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। তারা অভিযোগ করেছে যে বিজেপি সরকার গুজরাট-ভিত্তিক আমুলকে পিছনের দরজা দিয়ে কর্ণাটকের দুধ বাজারে প্রবেশ করানোর জন্য একটি 'কৃত্রিম অভাব' তৈরি করছে।
আরও পড়ুন- জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের খলনায়ক জেনারেল ডায়ারের পরিণতিটা জানেন?
কর্ণাটকে নন্দিনীর উপস্থিতি
'নন্দিনী' নামে কর্ণাটকে দই-সহ তাজা দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রি হয়। কর্ণাটক কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রোডিউসার্স ফেডারেশন লিমিটেড (কেএমএফ), কর্ণাটকের দুগ্ধ সমবায় আন্দোলনের শীর্ষ সংস্থা। তারা এই দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য বাজারজাত করে থাকে। কেএমএফ বহু বছর ধরে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ড. রাজকুমার, উপেন্দ্র, এবং পুনীত রাজকুমারের মতো জনপ্রিয় অভিনেতাদের ব্যবহার করেছে। আর, সেসবের সুবাদে নন্দিনী বর্তমানে কর্ণাটকে একটি পরিবারের নাম হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, সম্ভবত তা অনেক পরিবারের কাছে একটি 'আবেগ'ও। কেএমএফ ডেয়ারি প্রথম তৈরি হয় ১৯৫৫ সালে কোডাগু জেলায়। ১৯৮৪ সালের মধ্যে এই দুগ্ধ ফেডারেশন জনপ্রিয়তার ওপর নির্ভর করে কর্ণাটকের ১৪টি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।
দুধ বিক্রেতাদের সমন্বয়ের নাম 'নন্দিনী'
বর্তমানে কর্ণাটকে কেএমএফের ১৬টি জেলায় দুধ ইউনিয়ন আছে। তারা রাজ্যের বিভিন্ন শহর, শহরতলি এবং গ্রামীণ বাজারে দুধ-দই বিক্রি করে। আর, এই বিক্রির জন্য সংস্থাটি প্রাথমিক ডেয়ারি কো-অপারেটিভ সোসাইটি (ডিসিএস) থেকে দুধ সংগ্রহ করে। গ্রাম পর্যায়ে ডিসিএস এবং জেলা পর্যায়ে জেলা দুধ ইউনিয়ন (যেমন বেঙ্গালুরু, হাভেরি, বেলগাঁও, হাসন দুধ ইউনিয়ন) দুধ সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং বাজারজাতকরণের কাজ পরিচালনা করে। তারা রাজ্যে দুগ্ধ খাতের বৃদ্ধির সমন্বয় সাধন করে। পাশাপাশি, রাজ্যস্তরে ফেডারেশনকে দুধের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রযুক্তি ও পরিষেবার ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে।