Advertisment

Explained: পারভেজ মুশারফ ভুগছেন গুরুতর অসুখে, জানেন কী সেই অসুখ, কী তার চিকিৎসা

নানা জাতীয় প্রোটিন থেকে অ্যামিলয়েড তৈরি হয়ে অঙ্গে অঙ্গে জমতে পারে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
musharraf

তাঁর মৃত্যুর খবর ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু সে খবর কি সত্যি? না, সত্যি নয়।
পারভেজ মুশারফ। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। তাঁর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, তিনি জীবিত রয়েছেন, তবে অসুস্থ। গত তিন সপ্তাহ ধরেই রোগজর্জর। 'তিনি ভেন্টিলেটরে নেই। তবে তিন সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে। অ্যামিলয়ডোসিসে ভুগছেন। কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, অরোগ্য সম্ভব নয়। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিক মতো কাজ করছে না। তাঁর প্রতিদিনকার জীবনধারণ যাতে সহজ হয়ে ওঠে, সে জন্য প্রার্থনা করুন।' এই হল পারভেজের পরিবারের বয়ান। আমরা এই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যামিলয়েডোসিস অসুখটা কী, সেই দিকে নজর দিতে চাইছি।

Advertisment

অ্যামিলয়েডোসিস কী?

এক ধরনের প্রোটিন, নাম অ্যামিলয়েড, যখন নানা অঙ্গে জমে ওঠে, তখনই অ্যামিলয়েডোসিস হয়। এতে ওই সব অঙ্গের কার্যকলাপ অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। হার্ট, মস্তিষ্ক, কিডনি ইত্যাদি নানা অঙ্গে অ্যামিলয়েড তাঁর কটু-খেলাটা দেখায়। জীবন এর ফলে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। জীবন খাদের কিনারায় চলে আসতে পারে। অ্যার্গান ফেলিওরে মর্ত্যলীলা সাঙ্গ হয়ে যেতে পারে। অ্যামিলয়েড প্রোটিনটি সাধারণ ভাবে দেহে পাওয়া যায় না। কিন্তু দেহে যে সব প্রোটিন মেলে, তাদের থেকে এর গঠন হয়। কয়েক ধরনের অ্যামিলয়েডোসিস অন্য অসুখের সঙ্গী হয়ে এসে হাজির হতে পারে। সেই ধরনগুলির চিকিৎসা হয়ে থাকে অনেক সময়, রোগী সেরে ওঠেন, কিন্তু কয়েকটি ধরনে মৃত্যু যেন-বা অবধারিত, ওৎ পেতে বসে থাকে।
যদিও ঠিক কী কারণে অ্যামিলয়েডোসিস হয়, তা এখনও অজ্ঞাত।

অ্যামিলয়েডোসিসের আরও কিছু
নানা জাতীয় প্রোটিন থেকে অ্যামিলয়েড তৈরি হয়ে অঙ্গে অঙ্গে জমতে পারে। হাতে গোনা কয়েকটি ক্ষেত্রে বড় সমস্যা ঘনিয়ে ওঠে। প্রোটিনের ধরন এবং কোথায় প্রোটিন মিলছে, সেই থেকে অ্যামিলয়েডোসিসের ধরনটা বোঝা যায়। কখনও অ্যামিলয়েড দেহের কোনও একটি অংশে জমে, আবার কখনও সারা শরীরেই সে নিজের অন্ধকারের ডানা মেলে দেয়।
কোনও কোনও সময় এই অসুখ বংশানুক্রমিকও, আবার অনেকের বেলায় অন্য নানা কিছু দায়ী থাকে এর জন্য। যেমন সংক্রামক কোনও অসুখ, বা দীর্ঘ সময় ধরে কোনও অসুখে ভুগতে থাকা।

অ্যামিলয়েডোসিসের এক লম্বাচওড়া জগৎ। লাইট চেন (এএল) অ্যামিলয়েডোসিস সব চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। বৃক্ক, প্লীহাতে এটি হয়। যাদের বোনম্যারো সংক্রান্ত অসুখ থাকে, তাদের এটি হতে পারে। বোন ম্যারোতে প্লাজমা কোষে এই ধরনটি মাথা তোলে। প্লাজমা কোষগুলি লাইট চেন এবং হেভি চেন দুই জাতীয় প্রোটিনের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। প্লাজমা কোষগুলি অস্বাভাবিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে থাকে এবং যাতে করে লাইট চেন প্রোটিন বেশি পরিমাণে তৈরি হতে থাকে, যার রক্তে গিয়ে মেশে বিনষ্ট হয়। এই নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রোটিন কণাগুলি দেহের টিস্যুগুলিতে জমা হয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন হার্টের হাড় জ্বালিয়ে তোলে। হৃদযন্ত্র অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে।

আরেকটি টাইপ হল--এএ অ্যামিলয়ডোসিস। আগে বলা হত-- সেকেন্ডারি অ্যামিলয়েডোসিস। ক্রনিক সংক্রমণ জনিত অসুখ থেকে এর জন্ম হয়ে থাকে অনেক সময়। যেমন রুমাটয়েড আর্থারাইটিস, আলসারেটিভ কোলাইটিস ইত্যাদি। এই অ্যামিলয়ডোসিস কিডনি, পাচনতন্ত্র, লিভার এবং হার্টে তার কালো ছায়াটা ফেলে। খুবই বিরক্ত করতে থাকে।

ডায়ালিসিসের ফলে এ সম্পর্কিত অ্যামিলয়েডোসিস হওয়াটা হল অতি সাধারণ ব্যাপার, বিশেষ করে বয়স্ক এবং যাঁরা ৫ বছরের বেশি সময় ধরে ডায়ালিসিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে। এই জাতীয় অ্যামিলয়েডোসিস রক্তে তৈরি বিটা-টু মাইক্রোগ্লোবিউলিন জমে হয়। নানা টিস্যুতে এটি জমতে থাকে। মূলত হাড়, জয়েন্ট এবং টেন্ডনগুলিতে জমে।

ট্রান্সথিরেটিন অ্যামিলয়েডোসিস বংশানুক্রমিক। তাই এটিকে ফ্যামিলিয়াল অ্যামিলয়েডোসিস বলা হয়ে থাকে। ট্রান্সথিরেটিন এক ধরনের প্রোটিন, যাকে প্রিঅ্যালবুমিনও বলা হয়, লিভারে তৈরি হয় এটি। যা লিভার, স্নায়ুতন্ত্র, হার্ট, কিডনি নানা অঙ্গে বিড়ম্বনার জন্ম দেয়। নানা ধরনের জেনেটিক সমস্যার সঙ্গে এই অ্যামিলয়েড জনিত অসুখের যোগ রয়েছে।

কী ধরনের উপসর্গ ?
প্রবল ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া,পেট ফুলে যাওয়া, পা-গোড়ালি ফুলে যাওয়া। অসাড়তা, ব্যথা, হাতে পায়ে কাঁপুনি। ত্বকের রং বদল। চোখের নীচে বা চার ধারে বেগুনি স্পট বা বেগুনি অদ্ভুত ছোপ। রক্ত বেরতে শুরু করলে বেশি সময় লাগে জমাট বাঁধতে। জিভ ফুলে যাওয়া। শ্বাসকষ্ট।

আরও পড়ুন- দিল্লিতে কয়লায় নিষেধাজ্ঞা, ‘ধোঁয়াশা’ রুখতে এই সিদ্ধান্ত কি কার্যকর হবে?

কী চিকিৎসা
অ্যামিলয়েডোসিসের চিকিৎসায় উন্নতি ধীরে হয়। ধীরে ধীরে উপসর্গ হ্রাস পায় এবং জীবনের মেয়াদ বাড়ে। কেমোথেরাপি এর একটি চিকিৎসা, ক্য়ানসার কোষগুলিকে নিধনে যে সব ওষুধ ব্যবহার করা হয়, তারও ব্যবহার হয় এটিতে । বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনও দরকার হতে পারে। ইউএসএফডিএ (United States Food and Drug Administration) ট্রান্সথিরেটিন অ্যামিলয়েডোসিসের জন্য বেশ কয়েকটি ওষুধে সিলমোহর দিয়েছে সম্প্রতি।

অ্যামিলয়েডোসিস হলে আপনাকে ভুগতে হতে পারে, সেরেও উঠতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে যেটা জরুরি, চিকিৎসককে উপসর্গ দেখে এবং সেই মতো পরীক্ষানীরিক্ষা করিয়ে রোগটি ধরতে হবে, সেই মতো চিকিৎসা করতে হবে উপযুক্ত এবং যথাযথ।

Read full story in English

pakistan President veg protein
Advertisment