একটি নতুন সমীক্ষা অনুসারে, অ্যান্টার্কটিকার বেলিংশউসেন সাগরের চারটি উপনিবেশে প্রায় ১০,০০০ পর্যন্ত পেঙ্গুইন ছানা মারা যেতে পারে। কারণ, তাদের প্রজননস্থলের নীচের সমুদ্রের বরফ গলে ২০২২ সালের শেষের দিকে ভেঙে গেছে। সমুদ্রের বরফ হ্রাসের কারণে একটি অঞ্চলের একাধিক স্থানে পেঙ্গুইনের প্রজনন ব্যাপক সমস্যায় পড়েছে। যা প্রথমবার বিপুল পরিমাণে ঘটল। পেঙ্গুইন সাঁতার শেখা শুরু করার আগে সমুদ্রের বরফের কিছুটা গলে যায়। তারপরই সেখানে শিশু পেঙ্গুইনগুলো ডানাগুলো ছড়িয়ে সাঁতার কাটতে শেখে।
কিন্তু, এবার প্রজনন সমস্যার জন্য শিশু পেঙ্গুইনগুলো সম্ভবত ডুবে গেছে বা হিমায়িত হয়ে মারা গেছে। তারা ভিজে যাওয়ার পরে তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এমনটাই মনে করছেন গবেষকরা। গত ২৪ আগস্ট কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, '২০২২ অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফ রেকর্ড কমেছে। যা পেঙ্গুইনদের বিপর্যয়মূলক প্রজনন ব্যর্থতার দিকে পরিচালিত করেছে।' ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে (কেমব্রিজ)-এর পিটার টি ফ্রেটওয়েল এবং নরম্যান ব়্যাটক্লিফ এবং প্যারিসের গবেষক অড বুটে গোটা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন।
২০১৬ সাল থেকে, অ্যান্টার্কটিকার সামুদ্রিক বরফের পরিমাণ (সমুদ্র-বরফের আচ্ছাদন-সহ মোট অঞ্চল এবং মহাদেশের চারপাশে হিমায়িত জলের মোট এলাকা) প্রতিবছর গড়ে কমপক্ষে ১৫% হ্রাস পেয়েছে। যা ৯০%-এরও বেশি পেঙ্গুইন উপনিবেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। কারণ, এই পেঙ্গুইনরা শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে, যদি পৃথিবী বর্তমান হারে উষ্ণ হতে থাকে। এই ব্যাপারটিকে গবেষকরা বলেছেন, 'আমাদের অনুসন্ধানগুলো সামুদ্রিক বরফের অসামঞ্জস্য এবং পেঙ্গুইন প্রজনন ব্যর্থতার মধ্যে একটি স্পষ্ট যোগসূত্র তুলে ধরেছে। যা ভবিষ্যতের গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।' এই গবেষণা দেখাচ্ছে যে অ্যান্টার্কটিকা উষ্ণ হয়ে উঠেছে, যেখানে এই ধরনের ঘটনাগুলো আরও ঘন ঘন এবং ব্যাপক হয়ে উঠেছে। পেঙ্গুইনের সংখ্যা যার জেরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে বলেই গবেষকরা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন- চাঁদে ‘শিব শক্তি’ নামকরণ বিতর্ক, কারা এইসব নাম ঠিক করে?
পেঙ্গুইনদের এই প্রজনন চক্রে স্থিতিশীল সমুদ্রের বরফের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যতম গবেষক ফ্রেটওয়েল দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে একটি ইমেলে বলেছেন, 'পেঙ্গুইনরা তাদের পুরো প্রজনন চক্র সমুদ্রের বরফে ব্যয় করে। তাদের এটি এপ্রিলের শুরু থেকে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া দরকার।' মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের মধ্যে পেঙ্গুইনরা সমুদ্র থেকে তাদের পছন্দের প্রজনন স্থানে আসে। তারা সঙ্গম করে এবং তারপর মে এবং জুন মাসে ডিম পাড়ে। আগস্টে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। যার পর অভিভাবক পেঙ্গুইন তার ছানাকে খাওয়ানো শুরু করে। ফ্রেটওয়েল বলেন, 'ছানাটি দ্রুত বড় হয় এবং ডিসেম্বরের মধ্যে তার ধূসর পালক ঝরতে শুরু করে। বদলে গজিয়ে ওঠে মসৃণ কালো জলরোধী প্রাপ্তবয়স্ক পালক।'