আমেরিকায় জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর ব্যাপক বিক্ষোভের জেরে রবিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন অতি বাম গোষ্ঠী আন্টিফাকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করবে তাঁর সরকার।
এর আগেও আন্টিফাকে তিনি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অন্য দক্ষিণপন্থী রাজনীতিবিদরাও এই গোষ্ঠীর সমালোচনা করেছেন, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন টেক্সাসের সেনেটর টেড ক্রুজও। গত বছর জুন মাসে ওরেগনের পোর্টল্যান্ডে অতি দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী প্রাউড বয়েজদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার পর এরা শিরোনামে আসে। এই হিংসায় দু পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হন, যাঁদের মধ্যে রক্ষণশীল সংবাদগোষ্ঠীর এক সাংবাদিকও ছিলেন।
গত কয়েকদশক ধরেই আন্টিফার অস্তিত্ব বজায় রয়েছে, তবে এর শুরু ঠিক কীভাবে, সেনিয়ে নানা মত রয়েছে।
বিভিন্ন ইউরোপিয় দেশে এই আন্দোলনের উপস্থিতি বজায় থাকলেও আমেরিকায় এদের উপস্থিতি নজরে এসেছে সম্প্রতিই। আন্টিফার কোনও সাংগঠনিক কাঠামো নেই। নিউ ইয়র্ক টাইমসের বক্তব্য অনুসারে, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার বা অকুপাই মুভমেন্টের মত আন্দোলন থেকে এরা কর্মী সংগ্রহ করে।
১৯৮০-র দশকে আমেরিকায় এদের কর্মকাণ্ড প্রথম দেখা যায়। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনের পরে এরা কয়েকটি হিংসাত্মক বিক্ষোভ ও প্রদর্শনের মাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসে। আন্টিফার সদস্যরা সাধারণত কালো পোশাক পরেন এবং কখনও কখনও প্রদর্শনের সময়ে মুখোশও পরে থাকেন। এঁরা পুঁজিবাদবিরোধী অতিবাম আদর্শের অনুসারী। এলজিবিটিকিউ বা আদিবাসীদের ইস্যু নিয়ে এঁরা সরব হন। এঁদের বৈশিষ্ট্য হল হিংসা।
লিবারাল রাজনীতিবিদদের কর্মকাণ্ড যথেষ্ট নয় বলে এঁদের অভিযোগ। আন্টিফা সদস্যরা কখনও রাস্তাঘাটে রক্ষণশীল প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে শারীরিক সংঘর্ষে লিপ্ত হন, তবে অহিংস আন্দোলনেও এঁরা অংশগ্রহণ করেন। জনসমক্ষে বিক্ষোভ প্রদর্শন ছাড়াও এঁরা ওয়েবসাইট চালান যার মাধ্যমে শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থী ও অতিদক্ষিণপন্থীদের উপর নজর রাখা হয়।
সাম্প্রতিক ক্রিয়াকলাপ
আন্টিফা সদস্যদের কার্যকলাপ সারা আমেরিকায় একই রকম নয়। ওরেগন, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস ও পেনসিলভানিয়ায় এদের কাজকর্ম বেশি দেখা যায়।
২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলে দক্ষিণপন্থীদের এক বিশাল বিক্ষোভের পর আন্টিফার সদস্যরা রাস্তায় সংঘর্ষে জড়ান। ওই বছরই আন্টিফার সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তাঁরা বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে এক রক্ষণশীল নেতার সম্মেলনে গোলযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। ২০১৬ সালে এই গোষ্ঠীর এক সদস্য এক দক্ষিণপন্থী নেতার মুখে ক্যামেরার সামনে ঘুঁষি মেরেছিলেন বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবর।
আন্টিফার বারবার হিংসার ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার জেরে অনেক লিবারাল নেতাই তাদের বিরুদ্ধে দেশের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। তাঁরা মনে করেন, আন্টিফার কার্যকলাপের ফলে দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনতেও উগ্রপন্থী বলে বর্ণনা করা সুযোগ পায়। লেখক ও সমাজভাষ্যকার নোয়াম চমস্কি আন্টিফা সম্পর্কে বলেছেন এরা হল “দক্ষিণপন্থীদের কাছে দারুণ এক উপহার”। অনেকেই বলেছেন আমেরিকায় বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্কার সম্ভব হয়েছে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমেই।