রিলায়েন্সের বিরুদ্ধে সেবির নির্দেশ বাতিল করল ট্রাইব্যুনাল। ২০২১ সালে শেয়ারে কারচুপির অভিযোগে ওই নির্দেশ দিয়েছিল সেবি। সেই নির্দেশই ট্রাইব্যুনাল বাতিল করল। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (আরআইএল) চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুকেশ অম্বানি। তাঁর বিরুদ্ধেও নির্দেশ দিয়েছিল সেবি। পূর্ববর্তী রিলায়েন্স পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের (আরপিএল) শেয়ারে কারচুপির অভিযোগে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি (SEBI) ওই নির্দেশ দিয়েছিল। ২০২১ সালের সেই নির্দেশই বাতিল করেছে আপিল ট্রাইব্যুনাল।
কেন নোটিস?
আরপিএল আরআইএলের সঙ্গে মিশে যাওয়ার আগে, আরআইএল আরপিএলকে ৪.১ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছিল। অভিযোগ উঠেছে, আরপিএলের শেয়ারের দামের পতন রোধ করতে ওই সংস্থার সাধারণ বা ইক্যুইটি শেয়ার প্রথমে ফিউচার মার্কেটে (ভবিষ্যতের লেনদেনের জন্য চুক্তি), পরে স্পট মার্কেটে (বর্তমান শেয়ার বাজার) বিক্রি করা হয়েছিল। এনিয়েই সংস্থাটিকে নোটিস দিয়েছিল বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া বা সেবি (SEBI)। আরপিএল ২০০৮ সালেই মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স গ্রুপের নেতৃত্বাধীন আরআইএলের সঙ্গে মিশে গেছে। সেই কারণে মুকেশ অম্বানিকেও নোটিস দেওয়া হয়েছিল। এই মামলা গত ১৫ বছর ধরে চলছে।
সেবি-র নির্দেশ
সেবি ২০১৭-র ২৪ মার্চ, আরআইএলকে জানায়, ২০০৭-এর ২৯ নভেম্বর থেকে ওই দিন পর্যন্ত বার্ষিক ১২ শতাংশ হারে গণনা করা সুদের সঙ্গে ৪৪৭.২৭ কোটি টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। কারণ, এই লেনদেন অবৈধ। এক বছরের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্টক এক্সচেঞ্জের ফিউচার অ্যান্ড অপশনস (এফএন্ডও) বিভাগে ইক্যুইটি ডেরিভেটিভস লেনদেন করতেও আরআইএলকে বারণ করে সেবি। ২০২০-র নভেম্বরে, সিকিউরিটিজ আপিল ট্রাইব্যুনাল, স্যাট (SAT)-ও সেবির নির্দেশ বহাল রাখে। স্যাটের সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে আরআইএল সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায়। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন।
নতুন কীর্তি ফাঁস, জরিমানা
এরপর ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে সেবি বলে যে আরআইএল ২০০৭ সালের নভেম্বরে আরপিএল ফিউচারে লেনদেন করার জন্য ১২টি এজেন্ট নিয়োগ করেছিল। সেই ১২টি সংস্থাকে নবি মুম্বই স্পেশাল ইকোনমিক জোন, সেজ (SEZ) এবং মুম্বই সেজ অর্থ দিয়েছিল। এই অভিযোগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি, আরআইএল এবং মুকেশ অম্বানিকে যথাক্রমে ২৫ কোটি ও ১৫ কোটি টাকা জরিমানা করে। তার পাশাপাশি, সব খতিয়ে না-দেখে অর্থ বিনিয়োগ করায়, নবি মুম্বই এসইজেড প্রাইভেট লিমিটেডকে ২০ কোটি টাকা আর, মুম্বই এসইজেড লিমিটেডকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করে সেবি।
আরও পড়ুন- একাকীত্ব ঘুচল কলকাতার, ডেঙ্গুতে তিলোত্তমার জুড়িদার এবার ইউরোপ, কারণটা কী?
কেন সেবির নির্দেশ বাতিল?
সেবি নির্দেশে বলেছিল, এই লেনদেনে বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হয়েছেন। কোম্পানির শীর্ষকর্তা হিসেবে এই কারসাজির দায় এমডি এড়াতে পারেন না। তাই তাঁকেও জরিমানা করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বলেছে, সেবি প্রমাণ করতে পারেনি যে বিষয়টির সঙ্গে মুকেশ অম্বানি জড়িত ছিলেন। সংস্থার যা কিছু কর্পোরেট আইন লঙ্ঘন, তার দায় কখনও এমডির ঘাড়ে চাপতে পারে না। বিচারপতি তরুণ আগরওয়াল ও প্রিসাইডিং অফিসার মীরা স্বরূপের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ বলেছে, এক্ষেত্রে আরআইএল বোর্ড বিশেষভাবে দুই ব্যক্তিকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছিল। আরআইএল বোর্ডের দুটি সভার কার্যবিবরণীতে দেখা গিয়েছে, এমডিকে না-জানিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওই দুই ব্যক্তি। আর, আরআইএল ফিউচার মার্কেট থেকে টাকা তুলবে, নাকি অন্য কোনও জায়গা থেকে, সেটা না-জানালে নবি মুম্বই এসইজেড এবং মুম্বই এসইজেডের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তাই তাদের জরিমানা করা অর্থহীন। এসব বলে মুকেশ অম্বানি, নবি মুম্বই এসইজেড এবং মুম্বই এসইজেডকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দিলেও ট্রাইব্যুনাল কিন্তু আরআইএলের বিরুদ্ধে সেবির নির্দেশ বহাল রেখেছে।