Advertisment

সেনাবাহিনী কেন চায় না পুলিশ তাদের পোশাক জাল করুক

সেনাবাহিনীর তরফ থেকে গত বেশ কয়েক বছর ধরে এ অনুরোধ করা হয়েছে, কারণ কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী ও রাজ্য পুলিশবাহিনীর মধ্যে দাঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সামরিক রণপোশাক ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Military Uniform

মৌজপুর জাফরাবাদ রোডের দাঙ্গা কবলিত এলাকায় পুলিশ বাহিনী (ছবি অমিত মেহরা, ২৫ ফেব্রুয়ারি)

রাজ্য পুলিশের বাহিনী ও কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশবাহিনী যেন সামরিক যুদ্ধের পোশাক না পরে ভিড় না সামলায় বা দাঙ্গাপরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে , এ নিয়ে নির্দেশিকা জারি করার জন্য সেনাবাহিনীর তরফ থেকে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

Advertisment

সেনাবাহিনী এ ধরনের নির্দেশিকা কেন চাইছে?

২৩ ফেব্রুয়ারি উত্তরপূর্ব দিল্লির জাফরাবাদে ক্যা পন্থী ও ক্যা বিরোধীদের মধ্যে হিংসাত্মক সংঘর্ষের পর বেশ কিছু ছবি সামনে এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে ওই এলাকায় যে সামরিক বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে, তার সঙ্গে ভারতীয় সেনার পোশাকের সঙ্গে অত্যন্ত মিল রয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় এই ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে, কিছু ছবি ও ভিডিও সংবাদসংস্থা এএনআই তাদের টুইটার হ্যান্ডেলে প্রকাশও করে। এর ফলে জনগণের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে ওই এলাকায় সেনা নামানো হয়েছে।

দিল্লির হিংসা ঠেকাতে কেজরিওয়ালের সরকার কী করতে পারে, কী পারে না?

ওইদিন সন্ধেতেই এএনআই "ভারতীয় সেনাবাহিনীর সূত্র" উদ্ধৃত করে টুইট করে বলে, "রাজ্য পুলিশ বাহিনী ও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা সেনাবাহিনীর পোশাকে ক্যামোফ্লেজ করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে" ভারতীয় সেনা। কারণ হিসেবে বলা হয়, "সামরিক পোশাক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নীতিগত নির্দেশিকা রয়েছে, যার বলে আধাসামরিক বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ বাহিনীর উপরে সামরিক পোশাক পরিধানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।" (সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ দেখিয়ে দিয়েছেন যে দিল্লির জামিয়া মিলিয়াতেও নিরাপত্তা কর্মীরা যে পোশাক পরেন, তার সঙ্গে সৈন্যবাহিনীর পোশাকের মিল রয়েছে)।

পরদিনই সেনার তরফে তাদের সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলে জানিয়ে দেওয়া হয় আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ব্যাপারে তাদের নিয়োগ করা হয়নি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সরকারকেও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় "আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বা শহরাঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করার জন্যও সামরিক বাহিনীর রণপোশাক পরার প্রয়োজন আধা সামরিক বাহিনীর নেই, কারণ পরিস্থিতি তেমনটা দাবি করে না।"

সেনাবাহিনীর বক্তব্য "রং ও প্যাটার্নের দিক থেকে একদম পৃথক ধরনের পোশাক কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী বা রাজ্য পুলিশ ব্যবহার করতে পারে জঙ্গলের অতিবাম অধ্যুষিত এলাকায়।" তারা আরও বলেছে, "সেনাবাহিনীর ধরনের পোশাক খোলা বাজারে বিক্রির উপরেও নিয়ন্ত্রণ আনা প্রয়োজন।"

সেনা কি আগেও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে?

হ্যাঁ। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে গত বেশ কয়েক বছর ধরে এ অনুরোধ করা হয়েছে, কারণ কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী ও রাজ্য পুলিশবাহিনীর মধ্যে দাঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সামরিক রণপোশাক ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। কিছু কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর এমনকি সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসারদের মত পোশাকের কলারে তারকা চিহ্নও ব্যবহার করছেন। এই পোশাকের ধরন একদম সেনার মত নয়, কিছুটা আলাদা। কিন্তু সেনার দাবি সাধারণ নাগরিকরা এই সূক্ষ্ম তফাৎ ধরতে পারবেন না, এবং তাঁদের মধ্যে ভুল ধারণা জন্মাবে যে সেনা নিয়োগ করা হয়েছে।

মোদীর কথাই কি ঠিক, দেশভাগের পর সত্যিই হিন্দু ও মুসলিম শরণার্থীদের মধ্যে বিভাজন করা হয়েছিল?

এ ধরনের পোশাক পরিধানের নিয়ম কী?

ভারতীয় দণ্ডবিধি ১৭১ নং ধারায় বলা হয়েছে, কেউ সরকারি কর্মচারী না হয়েও যদি সরকারি কর্মচারীর বেশ ধারণ করেন, তাঁর যদি উদ্দেশ্য থাকে লোককে মিথ্যা বোঝানো এবংএবং তিনি বিশ্বাস করেন যে এই বেশধারণের ফলে লোকে ভুল বুঝতে পারে, তাহলে তাঁর তিন মাস পর্যন্ত জেল বা ২০০ টাকা জরিমানা বা উভয় শাস্তি একযোগে হতে পারে।

২০০৫ সালের বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা (নিয়ন্ত্রণ) আইনে বলা হয়েছে, "যদি কোনও বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী বা সুপারভাইজর সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী বা কোনও কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী বা পুলিশের পোশাক পরেন, তাহলে তাঁর এবং সেই বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার মালিকের এক বছর জেল বা ৫০০০ টাকা জরিমানা অথবা দুইই একসঙ্গে হতে পারে।"

সেনাবাহিনীতে কেন এল যুদ্ধ পোশাক?

১৯৪৭ সালের আগে ভারতীয় সেনার কেবল খাকি পোশাকই ছিল। স্বাধীন ভারতে সেনাবাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে উত্তর পূর্ব ও বর্মার জঙ্গলে লড়াই করবার জন্য জলপাই সবুজ রঙের পোশাক গ্রহণ করে।  ভারতের সেনাবাহিনী ৮-এর দশকের শেষের দিকে রণপোশাক ব্যবহার শুরু করে, যখন ভারতীয় শান্তিবাহিনী শ্রীলঙ্কায় এলটিটিই-র বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে।

২০০৫ সালে এই পোশাকের ডিজাইনে ঢোকানোহ সেনাবাহিনীর এমব্লেম জোড়া তলোয়ার, লেখা হয় ‘Indian Army’। পুলিশবাহিনী যাতে সেনার পোশাক নকল না করতে পারে, সে কারণেই এই প্রয়াস।

Advertisment