Operation Sarvashakti: সেনাবাহিনী জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরি-পুঞ্চ সেক্টরে 'অপারেশন সর্বশক্তি' চালু করেছে। পির পাঞ্জাল রেঞ্জের দুই পাশে বাহিনী মোতায়েন করেছে। লক্ষ্য সন্ত্রাসবাদীরা। কারণ, জঙ্গিরা এই এলাকায় সৈন্যদের ওপর ধারাবাহিক হামলা চালাচ্ছে। এই অঞ্চলে ২০২৩ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর তিনটি বড় হামলা হয়েছে। গত কয়েক বছরে এই এলাকায় জঙ্গি হামলায় ২০ জন সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। এখানে বেশিরভাগ জঙ্গিই বিদেশি বলেই ধারণা সেনাকর্তাদের। 'অপারেশন সর্বশক্তি'-র অংশ হিসেবে সৈন্যসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন রিজার্ভ এবং স্ট্রাইক কর্পস থেকে সেক্টরে কমপক্ষে তিন ব্রিগেড অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। দুই দশক আগে, এভাবেই সেনাবাহিনী কাশ্মীর এলাকায় অভিযান চালিয়েছিল। সেই অভিযান চলেছিল ২০০৩ সালে। ভারতীয় বাহিনী সীমান্তের ওপার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী এবং জঙ্গিদের নির্মূল করতে, 'অপারেশন সর্পবিনাশ' চালিয়েছিল। এই অভিযান চালাতে বাহিনী, পির-পাঞ্জাল রেঞ্জের দক্ষিণে ঘন জঙ্গলে, বিশেষ করে পুঞ্চের হিলকাকা এলাকায় ক্যাম্প তৈরি করেছিল।
আরও পড়ুন- রাহুল গান্ধীকে বটদ্রভা থান পরিদর্শনে বাধা, এনিয়ে হইচইয়ের পিছনে কোন বিরাট রহস্য?
অপারেশন সর্পবিনাশ কী?
এলাকায় বেশ কয়েকটি এনকাউন্টারের পর, সেনাবাহিনী ২০০৩ সালের এপ্রিল থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে তার সবচেয়ে বড় অভিযান চালিয়েছিল। মোটামুটি তিন মাস ধরে চলেছিল এই অভিযান। তিনটি শৃঙ্গঘেরা প্রায় ১৫০ বর্গ কিলোমিটার উঁচু বনে ঘেরা পাহাড়ি এলাকায় এই অভিযান চলেছিল। সেনাবাহিনীর ১৫ এবং ১৬ কোরের অধীনে প্রায় ১০,০০০ সৈন্য প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এই অভিযান চালিয়েছিল। এমআই-১৭ হেলিকপ্টারে চেপে বাকেরওয়ালের হিলকাকা গ্রামে সৈন্যরা নেমেছিলেন। এই গ্রাম জঙ্গিরা দখল করে রেখেছিল। ল্যান্সার হেলিকপ্টারগুলো অনুপ্রবেশকারীদের কংক্রিটের বাংকার ভাঙতে ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে। অভিযানে প্রায় ১০০ জঙ্গি মারা যায়। এই অভিযানে উদ্ধার হয় বিপুল সংখ্যক অস্ত্র, বিভিন্ন ধরনের প্রচুর বিস্ফোরক, প্রায় ৭ হাজার কেজি রেশন, ওষুধ এবং যোগাযোগের সরঞ্জাম। অভিযানে প্রায় ৪০-৫০টি জঙ্গি ডেরা ধ্বংস হয়েছিল।
আরও পড়ুন- ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশাল ঘোষণা মোদীর, আবার কোনও চমক নাকি?
সর্পবিনাশ কোন পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছিল?
১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ তখনও স্মৃতিতে টাটকা। তার মধ্যেই ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর, সংসদে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। ভারতীয় সশস্ত্র সেনা পালটা চালিয়েছিল, 'অপারেশন পরাক্রম' অভিযান। পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্তে লাগাতার গুলিগোলা চলে। যা ২০০২ সালের গ্রীষ্ম পর্যন্ত চলেছিল। ২০০৩ সালের গোড়ার দিকে ভারতীয় সেনা যখন আক্রমণের প্রস্তুতি শুরু করে, সেই সময় গোয়েন্দা সূত্রে খবর আসে যে, ৩০০ জনেরও বেশি বিদেশি জঙ্গি নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি)-জুড়ে অনুপ্রবেশ করেছে। তারা সুরানকোট এবং হিলকাকা এলাকায় নিরাপদ ঘাঁটি তৈরি করেছে। এই জঙ্গিরা পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি সংগঠনের সদস্য। তারা এই অঞ্চলে একটি জঙ্গিঘাঁটি তৈরি করেছিল এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেছিল। জঙ্গিরা গুহার ভিতরে একাধিক আস্তানাও তৈরি করেছিল। খামারে বাংকার বানিয়েছিল। তৈরি করেছিল একটি যোগাযোগের নেটওয়ার্ক।
আরও পড়ুন- কানাডায় বিদেশি ছাত্রদের ওপর নিষেধাজ্ঞা, কতটা প্রভাব পড়বে ভারতীয়দের ওপর?
কেন এই এলাকা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ?
মেনধারের দক্ষিণে হিলকাকা হয়ে পির-পাঞ্জাল রেঞ্জের দিকে যাওয়া অঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণরেখার ওপার থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশের সংক্ষিপ্ততম পথগুলোর অন্যতম। জঙ্গিরা শিবির স্থাপনের জন্য এই অঞ্চলকে বেছে নিয়েছিল। কারণ, এই অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করা, আধিপত্য বিস্তার করা পাকিস্তানিদের পক্ষে সহজ। সামরিক অভিযান চালানোও সহজসাধ্য। এখানকার খাড়া পাহাড়ের ঢালগুলো ঘন বনে আচ্ছাদিত। ভারতীয় সৈন্যরা যখনই এলাকায় তল্লাশি চালাত জঙ্গিরা বনে ঢুকে যেত। আর, ভারতীয় সৈন্যদের ওপর নাশকতা ঘটাত। জঙ্গিদের সেই সব স্থানীয় ডেরা কিছুটা হলেও এখনও অক্ষত আছে।
আরও পড়ুন- কলকাতা থেকে কাবুল হয়ে বার্লিন, কতটা কষ্টকর পথে ভারত ছেড়েছিলেন সুভাষ বসু?
অপারেশন সর্পবিনাশের ফলে কী হয়েছিল?
এই অভিযান ২০১৮ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনে। তারপরও উপত্যকায় জঙ্গিহানা ঘটতে থাকে। তবে, ২০২১ সাল থেকে এই অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার সংখ্যা বেড়েছে।