Assam Muslim Marriage Act: বিজেপিশাসিত উত্তরাখণ্ডের পর এবার বিজেপিশাসিত অসম। ফের মুসলিম বিবাহ আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিল ভারতের আরও একটি রাজ্য। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এক বৈঠকের পর একথা জানিয়েছে অসম সরকার। অসমে এতদিন যে মুসলিম বিবাহ এবং বিচ্ছেদ আইন রয়েছে, তা ১৯৩৫ সালের। ৮৯ বছরের সেই আইনের পরিবর্তে তৈরি হয়েছে, 'অসম রিপিলিং অর্ডিন্যান্স ২০২৪'। যা আগের আইনকে বাতিল করবে।
উদ্দেশ্যটা কী?
এতদিন ধরে ১৯৩৫ সালের তৈরি আইনেই মুসলিম বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ নথিবদ্ধ হত। ২০১০ সালের এক সংশোধনী অসমে মুসলিম বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ নথিবদ্ধকরণ বাধ্যতামূলক করেছে। আগে ব্যাপারটা ছিল ইচ্ছার ওপর নির্ভর। এখন 'বাধ্যতামূলক'ভাবে নথিবদ্ধ করতেই হবে। এজন্য কোনও মুসলিম রেজিস্ট্রারের কাছে বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদের নথির জন্য নাগরিকরা এজন্য আবেদন করতে পারবেন। নতুন আইন মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি করা হয়েছে।
অসম সরকারের বক্তব্যটা কী?
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নতুন আইনকে 'অসমে বাল্যবিবাহ রোধের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ' বলে দাবি করেছেন। অসম সরকার মনে করছে, এতদিনকার ব্রিটিশ যুগের আইনটি সময়ের তালে গুরুত্ব হারিয়েছে। তাই নতুন আইনের দরকার হয়ে পড়েছিল। অসম সরকারের নতুন আইন তৈরির কমিটির অংশ ছিলেন আইনজীবী নেকিবুর জামান। তিনি জানিয়েছেন, নতুন আইনে বেআইনি ভাবে তালাক দেওয়া যাবে না। নিকাহ করা যাবে না। অসমের বিজেপি সরকারের তরফে মন্ত্রী জয়ন্ত মাল্লা বড়ুয়া জানিয়েছেন, তাঁরা শীঘ্রই আইনটি চালু করতে চান।
উত্তরাখণ্ডের পরেই অসম
এক পক্ষকাল আগে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার সেরাজ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর লক্ষ্যে এককদম এগিয়ে গিয়েছিল। তারপরই অসমের মত আরও এক বিজেপিশাসিত রাজ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কায়দায় এই নতুন মুসলিম বিবাহ আইন তৈরির কথা জানা গেল। এব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলা বিচারক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করাই যদি অসম সরকারের লক্ষ্য থাকে, তবে সরকারকে সেই আইনগুলোও বাতিল করতে হবে, যেগুলো এই নতুন আইনের বিরোধী।
বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
অসম সরকার ২০২৬ সালের মধ্যে অসম থেকে বাল্যবিবাহ 'নির্মূল' করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে বাল্যবিবাহ রুখতে ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে। ৪,০০০-এরও বেশি অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে পকসো আইনে অভিযুক্তদের বিচার করা হচ্ছে। তবে, নতুন আইন বাল্যবিবাহ নির্মূল করতেই আনা হচ্ছে, এমনটা মানতে নারাজ অসম মিল্লাত ফাউন্ডেশনের সভাপতি আইনজীবী জুনেইদ খালিদ। তিনি বলেছেন, সরকার যদি বাল্যবিবাহ রোধে সত্যিই তৎপর হত, তবে নির্দিষ্ট বয়স সীমার নীচে বিবাহ নথিবদ্ধ হবে না, তা উল্লেখ করতে পারত। কিন্তু, সরকার নতুন আইনে তা তো করেইনি। উলটে, ছাড় দিয়েছে। তাতে বাল্যবিবাহ বাড়ার সম্ভাবনা আছে।
সমালোচনা কংগ্রেসের
অসমের বিজেপি সরকারের নতুন মুসলিম বিবাহ ও বিচ্ছেদ আইনের কড়া সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা আইনজীবী আমান ওয়াদুদও। তিনি বলেছেন, বর্তমানে অসমজুড়ে ৯৪জন কাজি আছেন। এখন, যদি মুসলিম বিবাহ আইনের বদলে বিশেষ বিবাহ আইন লাগু করা হয়, সেক্ষেত্রে নোডাল অফিস হবে জেলা কমিশনারের কার্যালয়। এই বিশেষ বিবাহ আইনে নোটিস দিতে হবে একমাসেরও আগে। বিয়ের নথিপত্রেও বেশ কড়াকড়ি থাকবে। বিষয়টি অত্যন্ত জটিল ব্যাপার। যা দরিদ্র, নিরক্ষর লোকেদের কাছে অসম্ভব বলে মনে হবে। এর ফলে, বিবাহ নথিবদ্ধ হওয়ার ঘটনাই কমবে। আর, অনুমোদিত কাজিদের বদলে, অনুমোদিত কাজিরা বিয়ে দেবেন।
আরও পড়ুন- তিন অধিকারীতে নাজেহাল তৃণমূল, সন্দেশখালি কি উৎপাত বাড়াল?
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হয়েছে। সেখানে মুসলমানরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৩.৯৫ শতাংশ। সেই তুলনায় অসমে মুসলমানদের সংখ্যাটা অনেক বেশি। ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুসারে সংখ্যাটা প্রায় ৩৪ শতাংশ। যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বাঙালি বংশোদ্ভূত মুসলমান। যাদের গায়ে হামেশা 'বাংলাদেশি' তকমা লাগিয়ে দেন অসমের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদরা। এই প্রেক্ষাপটে কয়েক বছর ধরে অসমের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের সমর্থনপুষ্ট বিজেপির হেমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার পরিবার, বিবাহ এবং প্রজননে কড়াকড়ি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বাল্যবিবাহের অভিযোগে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৬২ শতাংশ মুসলিম।