Advertisment

অযোধ্যা: মধ্যস্থতার ভাবনা এল কোথা থেকে, কেন ব্যর্থ হল সমঝোতার চেষ্টা

এবার সুপ্রিম কোর্টে ৬ অগাস্ট থেকে এলাহাবাদ হাইকোর্টের ২০১০ সালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানি শুরু হবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Ayodhya Mediation Failed

অযোধ্যা মধ্যস্থতা ব্যর্থ (এক্সপ্রেস ফাইল ফোটো- তাশি তবগিয়াল)

রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ নিয়ে আদালতের বাইরে সমঝোতার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এবার সুপ্রিম কোর্টে ৬ অগাস্ট থেকে এলাহাবাদ হাইকোর্টের ২০১০ সালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানি শুরু হবে।

Advertisment

২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল অযোধ্যার ২.৭৭ একর জমি সমানভাবে নির্মোহী আখড়া, উত্তর প্রদেশের সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড এবং রামলালা বিরাজমনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হোক।

আরও পড়ুন, অযোধ্যা মধ্যস্থতায় শ্রী শ্রী রবিশংকরের ব্যর্থ প্রচেষ্টার ইতিহাস

হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে ১৪টি আবেদন জমা পড়েছিল।

 মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অযোধ্যা নিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে এক ঘণ্টা শুনানি শেষে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ৫ মার্চ পর্যন্ত শুনানি স্থগিত রাখে।

আদালত সব পক্ষকে বলে এই সমস্যা সমাধানে আদালতের নজরদারিতে বন্ধ কামরায় সমাধানের চেষ্টা করতে। এর ফলে, উপশমের একটা রাস্তা বেরোতে পারে বলে মত দেয় আদালত।

বিচারপতি এস এ বোবডে সেদিন বলেছিলেন, “আমরা সত্যিই মধ্যস্থতার ব্যাপারটা নিয়ে চেষ্টা করতে চাইছি, যেহেতু এটা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়… যদি এক শতাংশও বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা থাকে, তাহলে আমরা সে ব্যাপারে চেষ্টা করতে চাই।”

মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া যে গোপনে চলবে সে কথাও নিশ্চিত করে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

এই বেঞ্চের নেতৃত্বে রয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। এ ছাড়া বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি অশোক ভূষণ, এবং বিচারপতি এস আবদুল নাজির।

৬ মার্চ যখন বেঞ্চ তার নির্দেশ দান মুলতুবি রেখেছিল, সে সময়ে তারা বলেছিল এই পুরো আইডিয়াটাই হল সম্ভব হলে মন, হৃদয় ও উপশমের দিকে লক্ষ্য রাখা।

দু দিন পর, ৮ মার্চ আদালত মধ্যস্থতার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়।

আদালত বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মতানৈক্যের বিষয়টি খেয়াল করেও বলেছিল, আমরা মনে করি এ সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতার একটা চেষ্টা করা উচিত। এ ব্যাপারে প্রাক্তন শীর্ষ আদালতের বিচারপতি পকির মহম্মদ ইব্রাহিম কলিফুল্লার নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়।

প্যানেলে অন্য যে দুজন ছিলেন, তাঁরা হলেন আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী রবিশংকর এবং প্রবীণ আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চু। উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদে বন্ধ কামরায় মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া শুরু হয়।

আরও পড়ুন, অযোধ্যা সমস্যার সমাধানে তিন মধ্যস্থতাকারীর সংক্ষিপ্ত পরিচয়

বিভিন্ন পক্ষের পূর্ববর্তী অবস্থান

সুপ্রিম কোর্টে বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন মুসলিম পক্ষ জানায়, মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমাধানের রাস্তায় যেতে তাদের নীতিগত আপত্তি নেই। ‘হিন্দু’ পক্ষের মধ্যে রামলালা বিরাজমন এবং মহান্ত সুরেশ দাসের কৌঁসুলি এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তাঁদের বক্তব্য, মধ্যস্থতার চেষ্টা আগেও হয়েছে, এবং তা ব্যর্থ হয়েছে। নির্মোহী আখড়া মধ্যস্থতার পক্ষে ছিলেন।

এই অবস্থান থেকেই শুরু হয়েছিল মধ্যস্থতা।

মধ্যস্থতার আইনি ভিত্তি

সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে মধ্যস্থতার প্রস্তাব নতুন কিছু নয়। সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে এটি অনুমোদিত বিষয়।

সিভিল প্রসিডিওর কোডের ৮৯ নং ধারায় বলা হয়েছে, যদি আদালতের মনে হয় যে সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনও সমঝোতার উপাদান রয়েছে, সেক্ষেত্রে আদালত সমঝোতার শর্তসমূহ স্থির করে সব পক্ষকে সে বিষয়ে জানিয়ে তাদের মতামত নেবে এবং সে মতামত পাওয়ার পর আদালত ১) সালিশি, ২) মিটমাট, ৩) লোক আদালতের মাধ্যমে বিচারবিভাগীয় সমঝোতা বা ৪) মধ্যস্থতার পথ নেওয়ার প্রস্তাব দেবে।

এর আগে ২০১০ সালের ৩ অগাস্ট সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর এলাহাবাদ হাইকোর্টের তিন সদস্যের লখনউ বেঞ্চ মধ্যস্থতার চেষ্টা করে। সব পক্ষের আইনজীবীদের বিচরাপতিদের চেম্বারে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তাঁরা মিটমাট করতে চান কিনা। হিন্দু পক্ষ জানায় কোনও মিটমাট তাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এর পরই সে প্রচেষ্টার ইতি।

মধ্যস্থতার পূর্ব প্রচেষ্টা

কলিফুল্লা প্যানেল তৈরির দু বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট এ সমস্যার সমাধানে মধ্যস্থতার কথা বলেছিল। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে অনেক আবেদন জমা পড়ার পর, ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, এ বিষয়টি ধর্ম ও অনুভূতির, এবং প্রস্তাব দিয়েছিল এ ধরনের বিতর্কিত বিষয় যদি সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করা যায় তাহলেই সবচেয়ে ভাল হয়।

২০১৭ সালের ২১ মার্চ ভারতের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর বলেছিলেন, “কিছুটা দিন, কিছুটা ছাড়ুন। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। এসব ব্যাপারে যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবচেয়ে ভাল… এগুলি অনুভূতি ও ধর্মের বিষয়। যদি আপনারা সমাধান না করতে পারেন, তখনই আদালতের কাছে আসা উচিত… যদি সব পক্ষ চায় আমি দুপক্ষের পছন্দের মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে বসি, তাহলে আমি সে দায়িত্ব নিতে রাজি আছি।”

এ ব্যাপারে বিজেপি সভাপতি সুব্রহ্মণ্যন স্বামী দ্রুত শুনানির আর্জি জানালে বিচারপতি খেহর বলেছিলেন, “যদি আপনারা চান, আমি রাজি। যদি আপনারা না চান, আমি করব না। যদি আপনারা অন্য বিচারপতিদের চান, তাদেরও নিতে পারেন, কিন্তু সবার আগে সবার সঙ্গে বসে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করুন। শেষ পর্যন্ত এসব অনুভুতির ব্যাপার। এবং যদি আপনারা কোনও মুখ্য মধ্যস্থতাকারী চান, আমরা সে ব্যবস্থাও করতে পারি।”

স্বামী বলেছিলেন তিনি মুসলিমদের সঙ্গে আলোচনায় বসার চেষ্টা করেছেন যাঁরা তাঁকে বলেছেন এ সমস্যা সমাধানে বিচারবিবাগের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। আদালত তাঁকে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ৩১ মার্চ পরিস্থিতি জানাতে বলেছিল।

৩১ মার্চ প্রধান বিচারপতি খেহর স্বামীকে বলেন, আপনি আমাদের জানাননি যে এ মামলায় আপনি কোনও পার্টি নন, আমরা এ কথা সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে জানতে পেরেছি।

১৯৯২ সালের আগের প্রচেষ্টা

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আগেও আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা হয়েছে। বিভিন্ন ভাবে কথা হয়েছে রামজন্মভূমি আন্দোলনের নেতৃত্বদায়ী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং সারা ভারত মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মধ্যে।

এই প্রয়াসগুলির দেখভালের ব্যাপারে করতে মূলত চন্দ্র শেখর এবং পিভি নরসিমহা রাও সহ অন্তত তিনজন প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দেন নি। তার মূল্য দিতে হয়েছে ধ্বংসের মাধ্যমে।

Read the Story in English

supreme court Ayodhya
Advertisment