Advertisment

অযোধ্যা সমস্যার সমাধানে মধ্যস্থতাপ্রয়াসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

‘মুসলিম’ পক্ষ বেঞ্চকে জানিয়ে দিয়েছিল, মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমাধানের রাস্তায় যেতে তাদের তেমন কোনও অসুবিধা নেই। ‘হিন্দু’ পক্ষের মধ্যে রামলালা বিরাজমন এবং মহান্ত সুরেশ দাসের কৌঁসুলি এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Ayodhya Meditation Explained

ফাইল ফোটো- তাশি তবগিয়াল

বুধবার সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যা মামলায় মধ্যস্থতা নিয়ে তাদের রায়দান স্থগিত রেখেছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গোপনে এবং আদালতের নজরদারিতে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিষয়টি মেটানো যায় কিনা সে ব্যাপারে সব পক্ষকে সময় দেওয়ার জন্য শুনানি স্থগিত রেখেছিল।

Advertisment

বিচারপতি এস এ বোবডে সেদিন বলেছিলেন, “আমরা সত্যিই মধ্যস্থতার ব্যাপারটা নিয়ে চেষ্টা করতে চাইছি, যেহেতু এটা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়… যদি এক শতাংশও বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা থাকে, তাহলে আমরা সে ব্যাপারে চেষ্টা করতে চাই।” মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া যে গোপনে চলবে সে কথাও নিশ্চিত করে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

‘মুসলিম’ পক্ষ বেঞ্চকে জানিয়ে দিয়েছিল, মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমাধানের রাস্তায় যেতে তাদের তেমন কোনও অসুবিধা নেই। ‘হিন্দু’ পক্ষের মধ্যে রামলালা বিরাজমন এবং মহান্ত সুরেশ দাসের কৌঁসুলি এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তাঁদের বক্তব্য, মধ্যস্থতার চেষ্টা আগেও হয়েছে, এবং তা ব্যর্থ হয়েছে।

সিভিল প্রসিডিওর কোডের ৮৯ নং ধারায় বলা হয়েছে, যদি আদালতের মনে হয় যে সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনও সমঝোতার উপাদান রয়েছে, সেক্ষেত্রে আদালত সমঝোতার শর্তসমূহ স্থির করে সব পক্ষকে সে বিষয়ে জানিয়ে তাদের মতামত নেবে এবং সে মতামত পাওয়ার পর আদালত ১) সালিশি, ২) মিটমাট, ৩) লোক আদালতের মাধ্যমে বিচারবিভাগীয় সমঝোতা বা ৪) মধ্যস্থতার পথ নেওয়ার প্রস্তাব দেবে।

এই বেঞ্চের নেতৃত্বে রয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। এ ছাড়া বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি বোবডে, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি অশোক ভূষণ, এবং বিচারপতি এস আবদুল নাজির।

২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানি চলছে এই বেঞ্চে। এলাহাবাদ হাইকোর্ট রাম জন্মভূমি বাবরি মসজিদের বিতর্কিত ২.৭৭ একর এলাকা নির্মোহী আখড়া, উত্তর প্রদেশের সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড এবং রামলালা বিরাজমনের মধ্যে সমভাবে বণ্টনের কথা বলা হয়েছিল।

অযোধ্যা মামলায় তিন বিচারপতির লখনউ বেঞ্চ ২০১০ সালে ৩ অগাস্ট সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর মধ্যস্থতার পথে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। সমস্ত আইনজীবীদের চেম্বারে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তারা মিটমাট চায় কিনা। এ প্রক্রিয়া কৃতকার্য হয়নি, কারণ হিন্দু পক্ষ বলেছিল, এ প্রস্তাব তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

২০১৭ সালের ২১ মার্চ ভারতের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর বলেছিলেন, “কিছুটা দিন, কিছুটা ছাড়ুন। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। এসব ব্যাপারে যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবচেয়ে ভাল… এগুলি অনুভূতি ও ধর্মের বিষয়। যদি আপনারা সমাধান না করতে পারেন, তখনই আদালতের কাছে আসা উচিত… যদি সব পক্ষ চায় আমি দুপক্ষের পছন্দের মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে বসি, তাহলে আমি সে দায়িত্ব নিতে রাজি আছি।”

এ ব্যাপারে বিজেপি সভাপতি সুব্রহ্মণ্যন স্বামী দ্রুত শুনানির আর্জি জানালে বিচারপতি খেহর বলেছিলেন, “যদি আপনারা চান, আমি রাজি। যদি আপনারা না চান, আমি করব না। যদি আপনারা অন্য বিচারপতিদের চান, তাদেরও নিতে পারেন, কিন্তু সবার আগে সবার সঙ্গে বসে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করুন। শেষ পর্যন্ত এসব অনুভুতির ব্যাপার। এবং যদি আপনারা কোনও মুখ্য মধ্যস্থতাকারী চান, আমরা সে ব্যবস্থাও করতে পারি।”

বিচারপতির এ প্রয়াস অবশ্য ফলপ্রসূ হয়নি।

১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং সারা ভারত মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মধ্যে কথাবার্তা চালানোর প্রভূত চেষ্টা হয়েছিল, যে ব্যাপারে চন্দ্র শেখর এবং পিভি নরসিমহা রাও সহ অন্তত তিনজন প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দেন নি। তার মূল্য দিতে হয়েছে ধ্বংসের মাধ্যমে।

সুপ্রিম কোর্টের এই সাম্প্রতিকতম প্রয়াস নতুন কিছু না হলেও, একটা ফারাক রয়েছে। এর আগের কোনও প্রচেষ্টাই আদালতের পর্যবেক্ষণে হয়নি।

supreme court Ram Temple Babri Mosque Ayodhya
Advertisment