The Indian Express investigation and Ayodhya land scam: উত্তরপ্রদেশে নির্মিত রামমন্দির, আশপাশের রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে তুঙ্গে তুলে দিয়েছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে অযোধ্যা (ফৈজাবাদ) আসনে বিজেপি হেরে গিয়েছে। জিতেছে সমাজবাদী পার্টি। তার পিছনেও যে এই জমি লেনদেনের ভূমিকা নেই, একথা হলফ করে বলা সম্ভব নয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তে উঠে এসেছে, রামমন্দির নির্মাণের পর ওই অঞ্চলের আশপাশের জমির লেনদেন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই লেনদেন সবচেয়ে বেড়েছে, অযোধ্যা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর অন্তত ২৫টি গ্রামে। বিশেষ করে গোন্ডা এবং বস্তি এলাকায় জমির লেনদেন সবচেয়ে বেড়েছে। এই সব অঞ্চল রামমন্দিরের ১৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে পড়ে।
কারা আছেন তালিকায়
তদন্তে উঠে এসেছে এই সব জমির লেনদেনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সরকারি কর্মচারিরাও জড়িয়ে পড়েছেন। জানুয়ারিতে রাম মন্দির উদ্বোধনের পর, এক বিশাল সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন প্যাকেজ, অযোধ্যার আশপাশের জমিকে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সোনার খনি বানিয়ে তুলেছে। একইসঙ্গে অনেকগুলো বিভাজন রেখাও স্পষ্ট করেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস রামমন্দিরের কাছাকাছি ২৫টি গ্রামে ২,৫০০টিরও বেশি জমির রেজিস্ট্রির নথি খতিয়ে দেখেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, এই সব জমি কেনাবেচনার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, উচ্চপদস্থ আধিকারিক ও তাঁদের আত্মীয়রা যুক্ত। তালিকায় আছে অরুণাচল প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের প্রধান, ব্রিজ ভূষণের সাংসদ পুত্র-সহ অনেকের নাম।
আরও পড়ুন- নিটের নিয়মে অনিয়ম! ভাগ্য ঝুলছে সুপ্রিম কোর্টে, কতটা চাপে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রক?
১. অরুণাচল প্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী চৌনা মেন: অরুণাচল প্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী চৌনা মেনের ছেলে চৌ কান সেং মেন ও আদিত্য মেন ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে রামমন্দির থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে মহেশপুরের (গোন্ডা)-য় সরযূ নদীর ওপারে ৩.৭২ কোটি টাকায় ৩.৯৯ হেক্টর জমি কিনেছিলেন। ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল, তাঁরা ৯৮ লক্ষ টাকায় ০.৭৬৮ হেক্টর জমি বিক্রি করেন। এই ব্যাপারে আদিত্য মেন বলেন, 'আমরা পর্যটন উন্নয়নের জন্য জমি কিনেছি। আমরা একটি হোটেল তৈরি করব এবং কিছু জমি প্রোমোটিং করে বিক্রি করব।' চলতি বছরের জুনে, মেন নতুন অরুণাচল মন্ত্রিসভায় উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফের শপথ নিয়েছেন।
২. বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ ব্রিজভূষণ সিং: বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ ব্রিজভূষণ সিংয়ের ছেলে করণ ভূষণ নন্দিনী ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মালিক। এই সংস্থা ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ১.১৫ কোটি টাকায় মন্দির থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে মহেশপুরে (গোন্ডা) ০.৯৭ হেক্টর জমি কিনেছিল। তার থেকে, করণ ভূষণ ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ৬৩৫.৭২ বর্গমিটার জমি ৬০.৯৬ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছিলেন। ২০২৪ সালের জুনে করণ ভূষণ কায়সারগঞ্জের নতুন বিজেপি সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ব্রিজভূষণ হলেন জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের প্রাক্তন প্রধান। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও হামলার অভিযোগে আন্দোলন করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় কুস্তিগীররা। ব্রিজভূষণ অযোধ্যায় জমি লেনদেন নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
তালিকাটা বেশ লম্বা
এটা সামান্য দুটো উদাহরণ। তালিকাটা আসলে বেশ লম্বা। বলতে গেলে সেই তালিকায় কোন কেউকেটা নেই আর আদানি থেকে লোধা, কোন নামী ব্যবসায়ী যুক্ত নন- সেকথা বলাটাই মুশকিল। আর, যাঁরা সেখানকার এতদিনকার বাসিন্দা, যাঁরা বারবার বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, সেই সব কৃষিজীবী মানুষ, গ্রামের সাধারণ মানুষ নানা চাপের মুখে জমি বেচে দিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষিজমিও চরিত্র বদলে হয়ে যাচ্ছে বাস্তুজমি। ফলে, অযোধ্যায় বিজেপির ভোটারের সংখ্যাও ইতিমধ্যে হ্রাস পেয়েছে।