সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার একটি ট্রাস্ট গঠন করবে।
আরএসএস, বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে ওই স্থানে মন্দির নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল। আরএসএস এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এমন কথাও বসেছিল অযোধ্যা রাম মন্দির নির্মাণ আদালতের বিষয় নয়, বিশ্বাসের বিষয়। সুপ্রিম কোর্ট এ দৃষ্টিভঙ্গি খারিজ করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন, অযোধ্যার বিতর্কিত জমির সবটাই কেন হিন্দুদের হাতে তুলে দিল সুপ্রিম কোর্ট?
অযোধ্যায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও আরএসএস কী চেয়েছে আর বিজেপি কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে একবার এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক।
আরএসএস-এর প্রথম দিককার দাবিদাওয়া
* ১৯৮৬ সালে আরএসএস প্রতিনিধি সভা একটি প্রস্তাব পাশ করে। সে প্রস্তাবে সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়, জন্মভূমি স্থল এবং সংলগ্ন জমি রাম জন্মভূমি ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হোক।
*১৯৮৭ সালে আরেকটি প্রস্তাবে সোমনাথ মন্দির নবনির্মাণের প্রসঙ্গ তুলে তারা বলে, "প্রাচীন ও ক্ষয়িষ্ণু রাম জন্মভূমি মন্দিরও পুরনো মহিমায় পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন।"
*১৯৮৯ সালে আরএসএস-এর কেন্দ্রীয় কার্যকরী মণ্ডল একটি প্রস্তাব পাশ করে। সেখানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় পবিত্র কোরাণ বিচার বিভাগের অধীন নয় বলে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে একটি মামলা প্রত্যাহার করার ব্যাপারে তিনি ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই সরকারই রামজন্মভূমি বিষয়ে আদালতে বিচারাধীন করার বিষয়টি পক্ষপাতমূলক নীতি বলে অভিহিত করে তারা।
বিজেপির প্রথম দাবি
*বিজেপি প্রথম সামনে এল ১৯৮৯ সালে, হিমাচলপ্রদেশের পালামপুরে তাদের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে। " জনগণের বিশ্বাসের মর্যাদা দেওয়া উচিত এবং রাম জন্মভূমি হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়া উচিত। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ের মীমাংসা করা উচিত অথবা তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে আইন পাশ করা উচিত। এবিষয়ের মীমাংসা আদালতে হতে পারে না।"
আরও পড়ুন, অযোধ্যা মামলায় কী কী প্রমাণের কথা বলছে সুপ্রিম কোর্ট?
*১৯৯০ সালে বিজেপি যখন বাইরে থেকে ভিপি সিং সরকারকে সমর্থম দেয় তখন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ফেব্রুয়ারি মাসে রাম মন্দির নির্মাণের প্রস্তুতি নেয় কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে তারা সে কাজ মুলতুবি রাখে। জুন মাসের হরিদ্বারে এক বৈঠকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ৩০ অক্টোবর তারিখের নড়চড় হবে না। ইতিমধ্যে বিজেপির লালকৃষ্ণ আদবানি ২৫ সেপ্টেম্বর সোমনাথ থেকে রামরথ যাত্রা শুরু করেন। ভাগলপুরে বিহার সরকার আদবানিকে গ্রেফতার করার পর বিজেপি ভিপি সিং সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়।
*১৯৯১ সালে ইস্তেহারে বিজেপি বলে, "যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে বাবরি মসজিদ সরিয়ে জন্মস্থানে শ্রীরামমন্দির নির্মাণের ব্যাপারে দল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
বাজপেয়ী জমানায়
*১৯৯৬ সালের ইস্তেহারে বিজেপি বলে, " বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর অযোধ্যায় শ্রীরাম মন্দির নির্মাণের ব্যাপারে সমস্ত বাধা অপসারিত করবে।" ১৯৯৬ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের মেয়াদ ছিল ১৩ দিন।
*১৯৯৮ ও ১৯৯ সালে এনডিএ কোয়ালিশন সরকারের নেতৃত্বে থাকাকালীন বিজেপি বিতর্কিত ইস্যুকে সামনে আনেনি।
*২০০১ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অযোধ্যায় যখন ফের আন্দোলন শুরু করে, সে সময়ে তারা বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বা উত্তর প্রদেশ সরকারের কাছ থেকে কোনও সমর্থন পায়নি।
*২০০৩ সালে, রায়পুরে বিজেপি কর্মসমিতির বৈঠকে একটি প্রস্তাব পাশ হয়। " এনডিএ-র সাধারণ লক্ষ্যে অযোধ্যা সমস্যার সমাধানে কোনও আইনি উদ্যোগের বিষয় না থাকলেও বিজেপি মনে করে এ দিকটিও খতিয়ে দেখা উচিত। আমাদের দল পালামপুর প্রস্তাবেও একই কথা বলেছিল। এবারের সংসদে এই উদ্যোগ এনডিএ-র অন্য শরিকদের এবং বিরোধী দলগুলি বিশেষ করে কংগ্রেসের সমর্থন পেলে ফলদায়ী হতে পারে।"
*২০০৪ সালে ক্ষমতাসীন এনডিএ নির্দিষ্ট সময়ের আগে নির্বাচনে যায়। তারা বলেছিল, " এনডিএ-র বিশ্বাস, অযোধ্যা সমস্যার দ্রুত ও গ্রহণযোগ্য সমাধান জাতীয় সংহতিকে শক্তিশালী করবে। আমরা মনে করি আদালতের রায় সকলের মেনে নেওয়া উচিত। একই সঙ্গে পারস্পরিক বিশ্বাস ও শুভেচ্ছার ভিত্তিতে আলোচনা এ গ্রহণযোগ্য সমাধানের চেষ্টাও জোরদার করা উচিত।"
বাজপেয়ী পরবর্তী বিজেপি
*২০০৯ সালে ক্ষমতার বাইরে থাক সময়ে নিজেদের ইস্তেহারে বিজেপি বলেছিল, "ভারতের এবং দেশের বাইরে থাকা মানুষের তীব্র আকাঙ্ক্ষা অযোধ্যায় শ্রীরামের জন্মভূমিতে মন্দির তৈরি হোক। বিজেপি এই নির্মাণ কাজের জন্য আলাপ-আলোচনা এবং আইনি পথ, সমস্ত রকম সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখবে।"
*২০১৪ সালের নির্বাচনী ইস্তেহারে বিজেপি বলেছিল, "অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে সমস্ত সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখতে চাওয়ার যে অবস্থান, বিজেপি তাতে অনড় রয়েছে।"
Read Full Text of Ayodhya Verdict