এবছর ১৯ সেপ্টেম্বর (গণেশ চতুর্থী) দশ দিনের গণেশ উত্সব শুরু হয়েছে। ভারতজুড়ে, বিশেষ করে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ ভক্তির সঙ্গে উত্সবটি পালিত হল। অসংখ্য মানুষ এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৯৩ সালের আগে এই উৎসব ছিল একদিনের। মূলত ব্রাহ্মণ এবং উচ্চবর্ণের ব্যক্তিরা গণেশ উৎসব ব্যক্তিগতভাবে পালন করতেন। যাইহোক, ১৮৯৩ সালে কিছু পরিবর্তন ঘটে। যার ফলে গণেশ উৎসব জমকালো উদযাপনের মাধ্যমে পালন শুরু হয়।
সিপাহি বিদ্রোহের পর
এই গণেশ উৎসবকে সর্বজনীন করে তোলার পিছনে যিনি প্রাথমিকভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি হলেন মহান জাতীয়তাবাদী এবং দেশপ্রেমিক নেতা বাল গঙ্গাধর তিলক। যাঁকে 'লোকমান্য' বা জনগণের নেতা হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। ১৯ শতকের শেষ দশকে, ভারতজুড়ে (এবং কিছুটা ব্রিটেনে) বেশ কিছু জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব হয়েছিল। তাঁরা আধুনিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার এবং ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভণ্ডামি ও শোষণের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে যখন কোম্পানির সেনাবাহিনীর ভারতীয় সৈন্যরা ব্রিটিশদের উৎখাত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন, সেই সময় ব্রিটিশরা সিপাহি বিদ্রোহকে নির্মমভাবে দমন করেছিল। তখনই কিছু জাতীয়তাবাদী ব্যক্তির আবির্ভাব হয়। যাঁরা, ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক শাসন সম্পূর্ণ ছুড়ে ফেলার পরিবর্তে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের দাবি জানাতে শুরু করেন।
তিলক ছিলেন ব্যতিক্রম
সেক্ষেত্রে একজন ছিলেন ব্যতিক্রম। তাই তাঁর আদর্শের নাম দেওয়া হয়েছিল উগ্র জাতীয়তাবাদ। কারণ, তাঁর লক্ষ্য ছিল একটু বেশি: স্বরাজ বা স্বশাসন। তিনি ছিলেন মারাঠি সাংবাদিক, শিক্ষক এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মী বাল গঙ্গাধর তিলক (১৮৫৬-১৯২০)। তিলক ১৮৮১ সালে, জিজি আগরকরের সঙ্গে ইংরেজিতে 'কেশরি' এবং মারাঠিতে 'মহরাত্তা' পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর জ্বালাময়ী এবং নির্ভীক লেখা অল্পদিনেই পাঠকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
'স্বরাজ জন্মগত অধিকার'
মহাত্মা গান্ধীর উত্থানের পূর্বে, লোকমান্য তিলকই ছিলেন তর্কহীনভাবে ভারতের ঔপনিবেশিক বিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় নেতা এবং দেশের উগ্র আন্দোলনের একজন ধারক ও প্রচারক। ভারতের স্বাধীনতা যখন অনেক দূরের স্বপ্ন, সেই সময়ই তিলক ঘোষণা করেছিলেন, 'স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার, এবং আমি তা পাব।' তাঁর সেই উক্তি অচিরেই দেশবাসীর মনে দাগ কাটে। তাঁর সেই স্বরাজ্য আন্দোলনের প্রতীক হিসেবেই তিলক গোটা মহারাষ্ট্রকে একসূত্রে বাঁধতে চেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- ভুলে যাওয়া, স্মৃতি হারানো রোখার গবেষণায় বিরাট সাফল্য!
উৎসব শুরুর বছর
বছরটি ছিল ১৮৯৩ সাল। দেশপ্রেমিক লোকমান্য তিলক ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও সংঘবদ্ধ করার উপায় খুঁজছিলেন। তিনি ভারতীয় সংস্কৃতি এবং হিন্দু ভাবনার মধ্যে মিশে থাকা মিলগুলোকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। আর, এজন্যই তিনি গণেশ উৎসবকে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তবে, সেই কারণে তিলক কিছু মহলে সমালোচিতও হয়েছেন।