Advertisment

ফের বালাকোট চালু: দেখে নিন পাকিস্তানের জঙ্গি ক্যাম্পের ইতিহাস ভূগোল

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মানশেরা জেলায় অবস্থিত বালাকোট। এর ৬৩ কিলোমিটার দক্ষিণে অ্যাবোটাবাদ, এখানে ২০১১ সালের মে মাসে বিশেষ মার্কিন বাহিনী ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Balakot, Jaish E Mohammad

ভারতীয় গোয়েন্দাসংস্থাগুলির মিলিত উদ্যোগে তৈরি এক ডসিয়ের অনুসারে এই শিবির ৬ একরের বেশি জায়গা নিয়ে তৈরি, যেখানে ৬০০ জন জঙ্গি একসঙ্গে থাকতে পারে।

সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত বলেছেন পাকিস্তান অতি সম্প্রতি বালাকোটে জৈশ-এ মহম্মদের ট্রেনিং ক্যাম্প ফের সক্রিয় হয়েছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে হামলা করেছিল ভারতীয় বিমানবাহিনী। এই ক্যাম্পের খুঁটিনাটি এবং ভারতে সন্ত্রাস রফতানির ক্ষেত্রে এর ভূমিকা-

Advertisment

বালাকোট জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মানশেরা জেলায় অবস্থিত বালাকোট। এর ৬৩ কিলোমিটার দক্ষিণে অ্যাবোটাবাদ, এখানে ২০১১ সালের মে মাসে বিশেষ মার্কিন বাহিনী ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেছিল। বালাকোট পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের ২০০ কিলোমিটার দূরে, এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত।

ভারতীয় বিমানবাহিনী হামলা চালায় বালাকোটের বনের মধ্যে অবস্থিত পাহাড়ের উপরে, যেখান জৈশ এ মহম্মদের শিবির ছিল। ভারতীয় গোয়েন্দাসংস্থাগুলির মিলিত উদ্যোগে তৈরি এক ডসিয়ের অনুসারে এই শিবির ৬ একরের বেশি জায়গা নিয়ে তৈরি, যেখানে ৬০০ জন জঙ্গি একসঙ্গে থাকতে পারে।

আরও পড়ুন, জৈশ-এ-মহম্মদ কেন পাক গোয়েন্দা সংস্থার নয়নের মণি

সন্ত্রাসের কেন্দ্রে অবস্থিত

বালাকোট, এবং পুরো মানশেরা জেলাটিই দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান নিরাপত্তা বাহিনীর জিহাদপন্থী প্রকল্পের কেন্দ্র। এই এলাকায় প্রচুর পরিমাণ মাদ্রাসা ও মসজিদ রয়েছে, এবং এখানেই প্রথমে আফগান যুদ্ধ ও পরে কাশ্মীরের জন্য জিহাদি ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপিত হয়েছিল।

বালাকোটের কাছে অবস্থিত গাড়ি হবিবুল্লা, যেখানে হিজবুল মুজাহিদিনের ট্রেনিং ক্যাম্প রয়েছে বলে খবর। ২০০৫ সালে পাকিস্তানি পত্রিকা হেরাল্ডে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সে রিপোর্ট অনুসারে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় হামলা চালানোর পর এ অঞ্চলে যে ট্রেনিং ক্যাম্পগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলি ফের চালু হয় ২ বছর পর।

জৈশ কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র

ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার পর সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশ সচিব বিজয় গোখলে জানিয়েছিলেন, বালাকোটের ট্রেনিং ক্যাম্প দেখভালের দায়িত্ব নিজের শ্যালক ইউসুফ আজহারের উপর দিয়েছিল মাসুদ আজহার। সন্ত্রাস সাম্রাজ্যের বিভিন্ন দায়িত্ব নিজের পরিবারের লোকজনের মধ্যেই ভাগ করে দিতে চায় সে।

ভারত জৈশের উপর যে ডসিয়ের বানিয়েছিল, তাতে ইউসুফ আজহারের ফোটোগ্রাফ রয়েছে, এবং বালাকোটের ফায়ারিং রেঞ্জ ও পাহাড়ি প্রশিক্ষণ এলাকার মধ্যে যাতায়াত করার জন্য তার ব্যবহৃত গাড়ির ছবিও রয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের বক্তব্য, যেসব জঙ্গিরা ট্রেনিংয়ে কৃতকার্য হয়েছে, তাদের পাশ করা উপলক্ষে কর্মসূচি  আয়োজিত হয় ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল। সেখানে হাজির ছিল মাসুদ আজহারের ভাই আব্দুল রাউফ আসগর।

বালাকোট- জৈশের প্রেরণাস্থল

জৈশের কাছে বালাকোটের প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে। উপমহাদেশের প্রথম জিহাদ সংগঠক সৈয়দ আহমেদ শহিদ ও শাহ ইসমাইল শহিদ ১৮৩১ সালের মে মাসে শিখ মাহারাজ রণজিৎ সিংয়ের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে প্রাণ দেবার পর এখানেই সমাধিস্থ হয়।

সৈয়দ আহমেদ শহিদের নামেই বালাকোটে জৈশের প্রশিক্ষণ শিবির।

ভারতীয় গোয়েন্দাবিভাগ মনে করছে, মাসুদ আজহারের দুই ভাইপো এক বছরের মধ্যে কাশ্মীরে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে নিহত হবার পর, বালাকোটের সৈয়দ আহমেদ শহিদ ট্রেনিং ক্যাম্প আরও সংগঠিত হয়েছে এবং আরও বেশি সংখ্যক জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে এসেছে।

আজহারের শ্যালক আবদুল রশিদের ছেলে তালহা রশিদ ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে পুলওয়ামায় সংঘর্ষে মারা যায়। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ত্রালে নিহত হয় আজহারের আরেক ভাইপো উসমান হায়দর।

উসমান হায়দারের বাবার নাম ইব্রাহিম আজহার, যে আসি ৮১৪ বিমান ছিনতাইকারীদের অন্যতম। ওই বিমান ছিনতাই করেই দু দশক আগে মাসুদ আজহারকে ভারতের জেল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর ভারত হামলা করতে পারে এই আশঙ্কায় জৈশের ভাওয়ালপুর হেডকোয়ার্টার খালি করিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান। আরও বেশি সংখ্যায় জঙ্গি তারা জড়ো করেছিল বালাকোটের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে।

Read the Full Story in English

Jaish-e-Mohammad Balakot
Advertisment