ইডেন গার্ডেনের মাটিকে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলা, তাও আবার নিজেদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর সামনে, এমনটা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের স্বপ্ন।
কিন্তু সে স্বপ্ন এখন জর্জরিত নানা সমস্যায়। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির প্লেয়াররা এবার ধর্মঘটে যাচ্ছেন। তাঁদের দাবি বেতন ও সুযোগ সুবিধে বাড়াতে হবে এবং ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামোর উন্নতি ঘটাতে হবে।
গড় বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা সারা পৃথিবীর ক্রিকেটারদের তুলনায় কম অর্থ রোজগার করে থাকেন। প্লেয়ারদের দাবি দেশে যে ভাবে ক্রিকেটকে চালানো হচ্ছে, তাতে রোজগারের সম্ভাবনাও কমে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: টিম ইন্ডিয়া কতদিন সাফল্য ধরে রাখতে পারবে?
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ১১ জন তারকা, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সামনে ১১ দফা দাবি রেখেছেন। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, এ দাবি সমূহ পূরণ না করা হলে তাঁরা খেলায় ফিরবেন না। এঁদের মধ্যে রয়েছেন শাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল এবং মাহমুদুল্লা।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: ‘দ্য হান্ড্রেড’, ক্রিকেটের নতুন ফর্ম্যাট
* খেলোয়াড়রা বাংলাদেশ ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কাজকর্মে অসন্তুষ্ট, তাঁরা মনে করেন এই সংস্থা খেলোয়াড়দের সুযোগ সুবিধের জন্য কিছু করে না। ফলে, তাঁরা চান সংস্থার সভাপতি ও সচিব পদত্যাগ করুন। পরবর্তী সভাপতি ও সচিবকে ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচন করবেন প্লেয়াররা।
* প্লেয়াররা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দলগুলির সঙ্গে নিজেদের বেতন নিয়ে দরাদরি করতে পারবেন এবং নিজেদের দল বাছতে পারবেন।
* বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দলগুলি এখন ক্রিকেট বোর্ডই চালায়। দাবি উঠেছে পুরনো ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল ফিরিয়ে আনা হোক, যেখানে স্থানীয় প্লেয়াররা তাদের নিজেদের বেস প্রাইজ স্থির করতে পারে।
* প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পারিশ্রমিক ম্যাচ পিছু ১ লক্ষ বাংলাদেশি টাকা (৮৩,৭০০ ভারতীয় টাকা) করতে হবে। এই অর্থ এখনকার পারিশ্রমিকের প্রায় তিন গুণ- এর সঙ্গে বাড়াতে হবে ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা।
* কেন্দ্রীয় ভাবে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ করতে হবে।
* গ্রাউন্ডসম্যান, স্থানীয় কোচ, আম্পায়ার, ফিজিও এবং প্রশিক্ষকদের মাইনে বাড়াতে হবে।
* ঘরোয়া ক্রিকেটে এখন একটি ওয়ান ডে এবং একটি টি ২০ প্রতিযোগিতা হয়। এই সংখ্যা অন্তত একটি করে বাড়াতে হবে।
* ঘরোয়া ক্রিকেটের একটি যথাযথ ক্যালেন্ডার আদে থেকে চূড়ান্ত করতে হবে।
* ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্লেয়ারদের বকেয়া অর্থ দিয়ে দিতে হবে।
* বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সারা বিশ্বের মাত্র দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলার অনুমতি দেয় প্লেয়ারদের। এই সংখ্যা বাড়াতে হবে।
* ঘরোয়া ক্রিকেট আরও প্রতিযোগিতামূলক করার বন্দোবস্ত করতে হবে এবং খেলাকে আরও ছড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
* প্লেয়াররা বিসিবি-র প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ে তাঁদের অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন বটে, তবে তাঁদের তোলা পয়েন্টগুলি সবই প্রায় তাঁদের আয়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
* বিদেশি টি ২০ লিগ খেলতে দেবার ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে, আরও বেশি ঘরোয়া লিমিটেড ওভার টুর্নামেন্ট করার উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে, এসব থেকে স্পষ্ট প্লেয়াররা বর্তমান আয় নিয়ে সন্তুষ্ট নন।
* ঘরোয়া ক্রিকেটে কোন প্লেয়াররা খেলবেন, কত অর্থের বিনিময়ে খেলবেন, এসব স্থির করতে চাওয়ার মাধ্যমে ওঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন দেশে তাঁদের তারকামূল্য কত, তা নিয়ে তাঁরা সচেতন এবং সে বিষয়টিকে তাঁরা কাজে লাগাতে চান।
* বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে উৎসাহ খুবই বেশি, কিন্তু প্লেয়ারদের চাহিদা পূরণ করার মত আর্থিক সম্পদ সে দেশের রয়েছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক থাকবে।
বিসিবি অপ্রস্তুত
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড জানিয়েছে প্লেয়ারদের ধর্মঘটের ব্যাপারে তাঁদের সরকারি ভাবে কেউ কিছু জানায়নি।
বিসিবি-র চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার নিজামুদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, আমরা সংবাদমাধ্যমের কাছে এ খবর পেয়েছি। প্লেয়াররা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তাঁদের সঙ্গে বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলব। যথাসময়ে বোর্ডের বৈঠকে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আমাদের কাছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাবি আসে, আমরা সেগুলো মেটানোর চেষ্টাও করি। আজ এই বিষয়টি সামনে এসেছে এবং আমরা অবশ্যই বোর্ডের মিটিংয়ে এ নিয়ে আলোচনা করব এবং সিদ্ধান্ত নেব।
Read the Full Story in English