একনজরে
৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থন ছিল বাংলাদেশের দিকে। আর, পাকিস্তানের প্রতি ছিল চিনের সমর্থন।
বর্তমানে ভারতের পাশাপাশি চিনও বাংলাদেশের অগ্রগতিতে সহায়তা করছে।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পর, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনের পরিস্থিতিতে রয়েছে। এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। যার পরিমাণ প্রায় ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২ সালে এই অর্থনীতি ৭.১% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলোকে বাংলাদেশের (Bangladesh) প্রতি আকৃষ্ট করেছে।
বাংলাদেশ নির্বাচন
আজ বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভারত এই নির্বাচনকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং যে কোনও ক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন চাইছে ভারত, তবে কেন এমন চাইছে ভারত? এর পিছনে রয়েছে কতগুলির নির্দিষ্ট কারণ।
বাংলাদেশে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ রবিবার (7th January) থেকে শুরু হচ্ছে। ৮ জানুয়ারি সকাল থেকেই ফলাফল সামনে আসতে শুরু করবে। প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পার্টি (বিএনপি) নির্বাচন বয়কট করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রায় নিশ্চিত।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন অনুসারে, ১১.৯৬ কোটি ভোটার দেশে মোট ৪২,০০০ ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবেন। ২৭ টি রাজনৈতিক দলের ১,৫০০ এরও বেশি প্রার্থী নির্বাচনের প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তাদের বাদে ৪৩৬ জন নির্দল প্রার্থীও তাদের ভাগ্য নির্ধারণের চেষ্টা করছেন।
শেখ হাসিনার জন্য কী সমীকরণ?
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পার্টির আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের জন্য ক্ষমতায় ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ দেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) নির্বাচন বয়কট করেছে। বিএনপির প্রধান হলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দুর্নীতির অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করার পর থেকে তিনি গৃহবন্দী রয়েছেন।
ভারতের ভূমিকা কী?
ভারতের তিন পর্যবেক্ষক সহ ১০০ টিরও বেশি বিদেশী পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেঅ চলছে আজকের এই ভোটপর্ব।
কেন ভারত শেখ হাসিনাকেঅ প্রধান মন্ত্রী হিসাবে ফিরে পেতে চায়?
ভারত বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং যে কোনও ক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন চায় ভারত। ভারত-বাংলাদেশ প্রায় ৪১০০ কিলোমিটারের সীমানা ভাগ করে নিয়েছে। দু'দেশের গভীর সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশই এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। শেখ হাসিনার আমলে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন গতি পেয়েছে।
জাতীয় সুরক্ষা: ভারতের পক্ষে এই নির্বাচনের তাৎপর্য বিশাল। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হল জাতীয় সুরক্ষা ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে, বিএনপি বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিল সেই সময় ভারতের পক্ষে খুব ভাল ছিল না। বিএনপি সরকারে, সমস্ত সন্ত্রাসবাদী এবং ভারত বিদ্বেষী উপাদানগুলি বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। এছাড়াও পাকিস্তানের আইএসআই সমস্ত ইসলামী চরমপন্থীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ।
২০০৯ সালে যখন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসীন হন, তখন তিনি কেবল ভারতের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলেন তাই নয় বরং বারবার তিনি সেই বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এই কারণেই গত এক দশকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সামগ্রিক সম্পর্ক অনেক উন্নতি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মায়নামারের পরিস্থিতি যা তাতে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা দুই দেশের জাতীয় সুরক্ষার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়।
অর্থনীতি: গত কয়েক বছরে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে বাংলাদেশের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে পিছনে ফেলে এই অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের জিডিপি প্রায় ৪৬০ বিলিয়ন ডলার পৌঁছেছে। যেখানে পাকিস্তানের জিডিপি প্রায় ৩৭৫ বিলিয়ন ডলার।
২০২২-২৩ সালে বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্যগুলির জন্য পঞ্চম বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ ছিল। ভারতের মোট রফতানিতে বাংলাদেশের অংশ প্রায় ২.৭ শতাংশ (১২.২ বিলিয়ন ডলার) হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ সরকার দু'দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য নিরবছিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উত্তর -পূর্বের মধ্য দিয়ে, ব্যবসায়িক নতুন রুট খোলার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ জলপথের মাধ্যমেও বাণিজ্য বেড়েছে।
কূটনীতি: জি২০ বৈঠকের আগে এক বার্তায় বাংলাদেশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে দিল্লি। ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে ভূরাজনৈতিক দিক থেকে তা ভারত এবং আমেরিকার কারও পক্ষেই সুখকর হবে না। কারণ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে জামাতের মতো সংগঠনের মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। ভারত মনে করে জামাত একটি উগ্র মৌলবাদী সংগঠন। ভারতের বার্তায় একথা স্পষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ স্থলসীমান্ত আছে। বাংলাদেশে জামাতের মতো সংগঠন শক্তিশালী হলে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা সমস্যার মুখে পড়বে। জামাতের মতো সংগঠনের সঙ্গে পাকিস্তানের নিবিড় যোগ আছে বলেই মনে করে ভারত।
কৌশলগত ও কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও হাসিনার সঙ্গে ভারতের সুম্পর্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ১৯৯৭ সালে তৈরি এই বিমস্টেক আগের তুলনায় অনেকটাই সক্রিয়। প্রথমে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ডের মধ্যে অর্থনৈতিক সমন্বয় দিয়ে এই গোষ্ঠীর পথ চলা শুরু হয়। তার পর ২০০৪ সালে যোগ দেয় ভুটান ও নেপাল। ২০০৭-এ আসে মায়ানমার। এই মুহূর্তে সাতটি দেশের এই সংগঠন বিশ্বের ২২ শতাংশ জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে। এই বিমস্টেক বাংলাদেশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এবং শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকে তবে ভারত একরকমভাবে এই সংগঠনে আরও শক্তিশালী হবে।