রবিবার বাংলাদেশে এক প্রাক্তন সামরিক ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তিনি ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ও হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।
গত ৭ এপ্রিল বাংলাদেশের মীরপুর থেকে আব্দুল মাজেদকে গ্রেফতার করা হয়।
সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন মাজেদ মার্চের ১৫ বা ১৬ তারিখ গোপনে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে আসেন। তিনি গত ২৩ বছর কলকাতায় গা ঢাকা দিয়েছিলেন।
কে এই আব্দুল মাজেদ?
.বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন মাজেদ ছিলেন বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ঢাকার বাড়িতে মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। একই সঙ্গে ওই বছরের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের জেলের মধ্যে চার শীর্ষস্থানীয় দেশনেতার হত্যাকাণ্ডেও লিপ্ত ছিলেন।
মুজিবুর রহমানকে তাঁর স্ত্রী ও তিন কন্যার সঙ্গে হত্যা করা হয়। নিহত এক পুত্রের বয়স তখন ছিল মাত্র ১০ বছর। তাঁর দুই কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা তখন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন।
ঢাকার সংবাদপত্র দ্য ডেলি স্টারের রিপোর্ট অনুসারে মাজেদ সরাসরি মুজিব হত্যায় যুক্ত ছিলেন। তিনি ও মেজর শারিয়ার নামে হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত আরেকজন রেডিও স্টেশনে নিযুক্ত ছিলেন।
মুজিব হত্যার পর মাজেদ বাংলাদেশের সামরিক শাসক ও পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান জিয়াউর রহমানের অধীনে কাজ করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বক্তব্য অনুসারে মুজিব হত্যাকারীকে বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করেছিলেন জিয়াউর। মাজেদকে হত্যাকাণ্ডে যুক্ত অন্যদের সঙ্গে ব্যাংকক হয়ে লিবিয়া পাঠানো হয়।
মাজেদ কূটনৈতিক মিশনে সেনেগালে নিযুক্ত হন এবং সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকে কাজ করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় আসার পর সে দেশে মুজিব হত্যাকারীদের বিচারপর্ব শুরু হয়। তখনই আত্মগোপন করেন মাজেদ।
নিম্ন আদালত ১৯৯৮ সালে মাজেদকে ফাঁসির নির্দেশ দেয়। ২০০১ সালে দেশের হাইকোর্ট মাজেদ সহ ১২ জন মুজিব হত্যাকারীর ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টও ওই আদেশে সিলমোহর দেয়।
২০১০ সালে পাঁচজনের ফাঁসি হয়। রবিবার ষষ্ঠ অপরাধী হিসেবে ফাঁসি হল মাজেদের। যেসব পলাতকদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে, তাদের মধ্যে একজনের সম্প্রতি পলাতক অবস্থাতেই জিম্বাবোয়তে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, একজন কানাডায় ও একজন আমেরিকায় পালিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে ডেলি স্টার।