Advertisment

বিশ্লেষণ: শেখ হাসিনার ভারত সফর ও মৈত্রী সম্ভাবনা

বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই বিশ্বাস করেন এনআরসি নিয়ে ভারতে যা চলছে তাতে সে দেশের রাজনৈতিক স্রোতে সাম্প্রদায়িকতা হাওয়া পাবে তাতে সন্দেহ নেই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Hasina, Modi, NRC

ছবি- টুইটার

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ভারত সফর অতীব রাজনৈতিক এক বিষয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময়ে ভারত যে তাদের সাহায্য করেছিল এ নিয়ে প্রায় কোনও সন্দেহই নেই। অনেকেই বিশ্বাস করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী প্রগতিবাদী আদর্শ এবং একই দৃষ্টিভঙ্গিতে ভর করে দক্ষিণ এশিয়া তথা সারা দুনিয়া নিজেদের উন্নতি দেখতে চেয়েছিলেন, সেই মর্মে তাঁদের মধ্যে যৌথতাও তৈরি হয়েছিল।

Advertisment

বিশ্বাস ও যোগাযোগ

১৯৭৫ সালে মুজিব ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের  হত্যার পর, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ইসলামিক এবং সামরিক নেতাদের উত্থানের জেরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনও দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব তৈরি হয়নি। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর ভারতের উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির উগ্রপন্থী সংগঠনগুলির আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। এই পর্যায়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। এই পরিস্থিতি পাল্টে যায় ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামি লিগের জয়ের পর। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যে তখন থেকে উন্নত হয়ে চলেছে, এ বিষয়ে প্রায় কোনও দ্বিমত নেই।

এর জেরেই ১৯৪৭ থেকে বহু অসমাধিত ভারত-বাংলাদেশ মতানৈক্য ২০০৯ সাল থেকে চুকে যেতে শুরু করেছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার ১৯৭৪ সালের ভূসীমা চুক্তি কার্যকর করেছে, যার ফলে উপমহাদেশে বিভাজনের সময় থেকে চলা সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় পক্ষই বঙ্গোপসাগরে একে অন্যের সীমা লঙ্ঘন না করার আন্তর্জাতিক আদালতের রায় মেনে নিয়েছে।

নদী এবং লাইন অফ ক্রেডিট

এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব নদীগুলি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে, সেগুলির ব্যবস্থাপনা উন্নততর করার জন্য ভারতকে অনুরোধ জানানবেন বলেই আশা করা যায়। তিস্তার জলবণ্টন ইস্যুতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখনও সমস্যা সমাধান করতে পারেনি। ফলে সে অনুরোধ কতটা কার্যকর হবে তা সংশয়ের বিষয়। নদী নিয়ে দ্বিপাক্ষিক গ্রহণযোগ্য ও কার্যকরী সমাধানে পৌঁছনোর বিষয়টি দু দেশের সরকারের কাছে ক্ষমতা ও আগ্রহ স্পষ্ট করবে।

বাংলাদেশের রেল, সড়ক ও জাহাজ পরিকাঠামো উন্নয়নে নয়া দিল্লির সহযোগিতা চাইতে পারে ঢাকা। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ রফতানির অনুরোধও জানানো হতে পারে। ২০১৭ সালে ভারত তিনটি লাইন অফ ক্রেডিট বাংলাদেশকে বর্ধিত করেছিল, যার মোট পরিমাণ ৭.৪ বিলিয়ন ডলার। তবে সে প্রকল্পগুলির কাজ বেশি এগোয়নি। ঢাকা এ ব্যাপারে ভারতকে দ্রুত টাকা দেবার অনুরোধ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত লাইন অফ ক্রেডিটের অনুরোধ জানাতে পারে।

এনআরসি এবং রোহিঙ্গা

ভারতীয় রাজনীতিতে এনআরসি বিষয়টি কোনদিকে যাবে এবং বাংলাদেশের উপর তার কী প্রভাব পড়বে তা এখনও স্পষ্ট নয়। সাধারণ বাংলাদেশিদের নিয়ে ভারতে এখন তীব্র সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী মোদী রাষ্ট্রসংঘের এক বৈঠকে শেখ হাসিনাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে এনআরসি-র কোনও প্রভাব বাংলাদেশের উপর পড়বে না, সে কথা বারবার ভারতের তরফ থেকে বলে যাওয়া প্রয়োজন, উভয় দেশের সম্পর্কের মধ্যেকার অস্বস্তি এড়ানোর জন্যই।

বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই বিশ্বাস করেন এনআরসি নিয়ে ভারতে যা চলছে তাতে সে দেশের রাজনৈতিক স্রোতে সাম্প্রদায়িকতা হাওয়া পাবে তাতে সন্দেহ নেই। এনআরসি ভারত-বাংলাদেশ দু পক্ষের কাছেই প্রভূত চিন্তার বিশয় এবং বাংলাদেশ মোদীর আশ্বাস সত্ত্বেও বিষয়টির দিকে নজর রেখে চলবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে চিনের সুসম্পর্কের বিষয়টি ভারতের মাথাব্যথার কারণ। যদিও এ আশঙ্কা অমূলক। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের তরফে চিনের সঙ্গে যেটুকু সম্পর্ক তাতে সামরিক ক্ষেত্রে চিনের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা নেই। রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা মেটাতে ভারত ও চিন দুদেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রাখা প্রয়োজন বাংলাদেশের। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের যে ইতিহাস তাতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভারতের দায়িত্ব চিনের থেকে কয়েক কদম বেশি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে ভারত কতটা সাহায্য বাংলাদেশকে করে, তা অবশ্য দেখার।

সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার ভারত সফর ঢাকা ও নয়া দিল্লির মধ্যে বিশেষ বন্ধুত্বকে জোর দেওয়ার উদ্দেশ্যেই। সারা দুনিয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে দেওয়াল তোলাই যখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেসময়ে হাসিনা ও মোদীর সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক বিশ্বের কাছে পথ দেখাতে পারে।

(ডক্টর আশিকুর রহমান ঢাকার পলিসি রিসার্চ ইন্সটিট্যুটের বরিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ)

Read the Full Story in English

Sheikh Hasina Bangladesh PM Narendra Modi
Advertisment