Bangladesh’s quota movement: বাংলাদেশে সংরক্ষণের বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ব্যাপক আকার নিয়েছে। যার পিছনে, রাজাকারদের নাম উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বিবৃতিকে দায়ী করা হচ্ছে। ১ জুলাই থেকে, বাংলাদেশের কয়েক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এমন একটি নিয়োগ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এই নিয়োগ ব্যবস্থা বৈষম্যমূলক বলে তাঁদের অভিযোগ। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বাংলাদেশে উচ্চ বেতনের সরকারি চাকরিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে। আন্দোলনকারীরা মেধার ভিত্তিতে চাকরিতে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে, এই সরকারি পদগুলির এক তৃতীয়াংশ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যাঁরা লড়াই করেছিলেন, তাঁরা হলেন মুক্তিযোদ্ধা। পাশাপাশি, শূন্যপদগুলোর মধ্যে কিছু পদ মহিলা, জাতিগত সংখ্যালঘু এবং প্রতিবন্ধীদের জন্যও সংরক্ষিত। ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা তাঁর বাসভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা (কোটা) সুবিধা না পেলে কে পাবেন? রাজাকারদের নাতি?' বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পালটা স্লোগান তোলে: 'তুই কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার! (তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার!)।'
রাজাকারদের ইতিহাস
হাসিনার মন্তব্যটি ছিল ব্যঙ্গাত্মক। কিন্তু, সেই শব্দই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। যা উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। বাংলাদেশে 'রাজাকার' শব্দটি অবমাননাকর বলে বিবেচিত হয়। এই শব্দটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, কট্টরপন্থী ইসলামপন্থীদের দ্বারা সমর্থিত পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী নাগরিক স্বাধীনতা হরণ করতে, আইন অমান্যকারী মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্যবস্তু করতে এবং সাধারণ নাগরিকদের দমন করার জন্য তিনটি প্রধান মিলিশিয়া তৈরি করেছিল। সেগুলো হল: রাজাকার, আল-বদর এবং আল-শামস। এই মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায়, বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালায়। ধর্ষণ করে, নির্যাতন করে, বাঙালিদের হত্যা করে। জোর করে বাঙালিদের নির্বাসিত হতে বাধ্য করে। পাশাপাশি, অন্যান্য ধরনের হিংসা এবং নির্যাতন চালায়।
হায়দরাবাদে রেজাকার
রাজাকার বলা হলেও, এই শব্দটি আসলে 'রেজাকার'। যার উৎপত্তি হয়েছিল হায়দরাবাদে (আধুনিক ভারত)। এই রাজাকার শব্দের অর্থ 'স্বেচ্ছাসেবক'। ভারতে, রেজাকাররা ছিল একটি আধা-সামরিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। যারা হায়দরাবাদ রাজ্যের হোম গার্ড হিসেবে কাজ করত। তারা ১৯৪৭ সালের পরে ভারতের সঙ্গে হায়দরাবাদের একীভূত হওয়ার বিরোধিতা করেছিল। মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন নেতা বাহাদুর ইয়ার জং-এর মস্তিষ্কপ্রসূত, রেজাকাররা কাসেম রিজভির নেতৃত্বে বেড়ে ওঠে। ১৯৪৮ সালে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশন 'পোলো'-তে রেজাকারদের পরাজয়ের পর, রিজভি পাকিস্তানে চলে যেতে বাধ্য হন।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের জয়! হাইকোর্টের রায় সুপ্রিম কোর্টে খারিজ
পূর্ব পাকিস্তানে রাজাকার
১৯৭১ সালের মে মাসে, জামায়াতে ইসলামির একজন প্রবীণ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম মুহম্মদ ইউসুফ, খুলনায় জামায়াতের ৯৬ জন সদস্যকে নিয়ে রাজাকারদের প্রথম দল গঠন করেন। বাংলায় 'রেজাকার' শব্দটি 'রাজাকার' হয়ে যায়। রাজাকারের মধ্যে ছিল বিহারি মুসলমান এবং অবাঙালিরাও। তারা ইসলামের প্রসারে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চর হয়ে ওঠে। আর, মুক্তিযোদ্ধের (স্বাধীনতাপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য পাকিস্তান সেনার অস্ত্র হিসেবে কাজ করেছিল।