Advertisment

বাংলাদেশে লাগাতার ছাত্র বিক্ষোভের নেপথ্যের কারণ কী?

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিশেষভাবে বিতর্কিত ছিল। অনেকেই এই কোটা বা সংরক্ষণ পদ্ধতিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগের প্রতি অনুগতদের জন্য বরাদ্দ বলে কটাক্ষ করেন। যাঁরা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁদের পরিবারে সদস্যদের জন্য সরকারি চাকরিতে এই সংরক্ষণ নিয়ে বিতর্ক বাড়ে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
bangladesh quota protests, বাংলাদেশে ছাত্র বিক্ষোভ

Bangladesh quota protests: সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ নিয়ে প্রতিবাদ বাংলাদেশে।

Bangladesh quota protests: সরকারি চাকরিতে একটি সংরক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে বিতর্কের জেরে বাংলাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভের পর গত ১৭ জুলাই বুধবার থেকে সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে। তুমুল ছাত্র সংঘর্ষের জেরে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ৬ জন নিহত এবং ৪০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

Advertisment

গত ৫ জুন বাংলাদেশে হাইকোর্টের সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের বংশধরদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন পুনর্বহাল করার রায়ের প্রেক্ষিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। উল্লেখ্য, আদালতের সিদ্ধান্ত ছাত্র ও শিক্ষকদের নেতৃত্বে ব্যাপক আন্দোলনের পর ২০১৮ সালে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। তবে এবার ফের একবার সেই ইস্যুটি নিয়ে বাংলাদেশে লাগাতার বিক্ষোভ জারি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার বিক্ষোভকারীদের ‘রাজাকার’ বলে উল্লেখ করে প্রতিবাদের আগুনে যেন আরও ঘি ঢেলেছেন।

বিতর্কিত কোটা পদ্ধতি:

সরকারি চাকরি বাংলাদেশে আয়ের একটি স্থিতিশীল এবং লাভজনক উৎস হিসেবে অত্যন্ত লোভনীয় একটি ব্যাপার। সংবাদসংস্থা AP-এর মতে, প্রায় ৪ লক্ষ স্নাতক প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৩ হাজার চাকরির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন।

২০১৮ সাল পর্যন্ত, ৫৬ শতাংশ সরকারি চাকরি বিভিন্ন বিভাগের জন্য সংরক্ষিত ছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ - ৩০ শতাংশ - প্রবীণদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। যাঁরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য এই চাকরি সংরক্ষিত ছিল। মহিলা এবং অনুন্নত জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ ছিল। একইভাবে উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ এবং ১ শতাংশ সংরক্ষণ ছিল। প্রতিবন্ধীদের জন্যও সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে চাকরি ক্ষেত্রে।

আরও পড়ুন- Kashmir Terror Attack: ভূস্বর্গে ফের গুলির লড়াই, জঙ্গি নিকেশে মরিয়া ভারতীয় সেনা

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিশেষভাবে বিতর্কিত ছিল। অনেকেই এই কোটা বা সংরক্ষণ পদ্ধতিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগের প্রতি অনুগতদের জন্য বরাদ্দ বলে কটাক্ষ করেন। যাঁরা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি চাকরিতে এই সংরক্ষণ নিয়ে বিতর্ক বাড়ে। কোটার প্রার্থীদের জন্য বিশেষ পরীক্ষা, প্রতিটি বিভাগের জন্য ভিন্নতর বয়সসীমা এবং মেধা তালিকায় যোগ্য প্রার্থীরা বেকার থাকা সত্ত্বেও কোটার আসনে অনেক শূন্যপদ রয়ে গেছে।

২০১৮ সালের এপ্রিলে ছাত্র এবং শিক্ষকরা সরকারি চাকরিতে এই বিশেষ কোটার অবসানের দাবিতে এবং সামগ্রিক সংরক্ষণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবিতে চার মাসব্যাপী বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন। সেই বিক্ষোভের জেরেও হিংসা শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশ ছাত্রলিগ (বিসিএল, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠন) এবং পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়েছিলেন। আন্তর্জাতিকস্তরেও এনিয়ে সমালোচনার পর হাসিনা সরকার সরকারি চাকরিতে সব কোটা তুলে নেওয়ার ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন- Crime: পুলিশের সামনেই ক্যামেরা অন, মাকে পুড়িয়ে মারল ‘গুণধর’ ছেলে, ঘটনার বীভৎসতায় শিউরে উঠল দেশ

তবে গত ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ সমস্ত সংরক্ষণ, বিশেষ করে বিতর্কিত ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের আদেশটি বাতিল করার আদেশ দেয়।

জুন মাসে ঢাকায় প্রাথমিক প্রতিবাদের আভাস মিললেও ১৭ জুন ঈদ-উল-আযহার উৎসব শেষ হওয়ার পর বৃহত্তর বিক্ষোভ শুরু হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ দিলেও ৭ জুলাই দেশব্যাপী বাংলা বনধ কার্যকর হয়। লাগাতার বিক্ষোভ-সংঘর্ষ চলে বাংলাদেশে। তুমুল ছাত্র সংঘর্ষের জেরে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ৬ জন নিহত এবং ৪০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। শেষমেশ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গত ১৭ জুলাই বুধবার থেকে সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে।

Sheikh Hasina bangladesh quota protests Bangladesh
Advertisment